
বাংলাদেশে নিরিবিলি সময় কাটানোর আমার পছন্দের আরো একটি জায়গা ! দপদপে, বরিশাল। My elder sister’s house in Barishal, Bangladesh. A place that is calm, quiet, and serene. Here you can relax and escape from disturbances or stress.
ছবিতে যে বাড়িটি দেখছেন সেটি আমার বড়ো বোনের বাড়ি। বছর ২ আগে আমাদের দুলাভাই চাকরি থেকে অবসরে গিয়ে তার দীর্ঘদিনের সঞ্চয় দিয়ে দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন। একটি হলো তার গ্রামের বাড়িতে এই বাড়িটি নির্মাণ এবং পবিত্র হজ্জ্ব সম্পন্ন। উনি বাংলাদেশ তথ্য অধিদপ্তরে ছোট একটি চাকরি দিয়ে শুরু করে সম্ভবত জেলা তথ্য অফিসার হিসাবে অবসর নেন।
একটি মাত্র ছেলে, সেও পড়াশুনা শেষ করে দেশের একটি ভালো নন-প্রফিট প্রতিষ্ঠানে গবেষকের কাজ করে। উনাদের একজন নাতিও আছে যার বয়োস কেবল দেড় বছর। আমার এই বোনটি মোটামুটি সাবালিকা হওয়ার পর থেকে তার পরের আমাদের ৫ ভাইবোনের দায়িত্ব মায়ের সাথে ভাগাভাগি করে নেয়, তারপর থেকে বিরাম নেই, চলছেই !! এবং মায়ের মৃত্যুতে পুরটাই মায়ের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। সেইই বাংলাদেশে একমাত্র ব্যাক্তি যে কিনা কোনোপ্রকার প্ৰয়োজন ছাড়া আমাকে রেগুলার ফোন করে খবর নেয় এবং ২/১দিন কোনো কারণে মিস হলেই তার মহা চিন্তা, দুলাভাইএর মাথা খারাপ করে দেয়।
আমার মায়ের হাতের সব রান্নার কথা আমার মনে নেই, শধু তার আলু ভর্তা, ডাল, ঝুরি করে ডিম্ ভাজি ইত্যাদি মনে আছে। তাছাড়া আমার মা ছোট বেলায় তরকারিতে মশলা দেওয়ার আগে আমার অন্য আলাদা করে কিছু রেখে দিতেন। জানিনা কেন, হয়তোবা আমার ঝাল মশলা তখন ভালো লাগতো না। কিন্তু আমার এই বোনের রান্না আমার বাংলাদেশে এখন সবার থেকে পছন্দের। অধিকাংশ ক্ষেত্রে চোখ বন্ধ করে শুধু জিভে দিয়ে বলে দিতে পারি ওর রান্না কোনটি।
এবার ভাগ্নের বৌউ তাদের বাসায় অনেক সুস্বাধু রান্না করেছিলে আমাদের দেশে পৌঁছানোর প্রথম দিনে। সব খেয়ে আমি বললাম “খুব মজা হয়েছে এবং পালং শাক রান্নাটা একেবারে তোমার শাশুড়ির মতো হয়েছে”. সে তখন বললো “মামা ওই পালং শাকটি শাশুড়ি আম্মাই রানা করেছেন, বাকি সব আমি।
খুব কম পরিমানে ঝালমশলা দিয়ে ওর মতো অন্য কেউ অতো স্বাদে করে রাঁধতে পারে না )অন্তত আমার কাছে ).
যাহোক, সময় স্বল্পতার কারণে এবার বরিশালে ওদের গ্রামের বাড়িতে মাত্র ২৩ ঘন্টার জন্য গিয়েছিলাম। এই ২৩ ঘন্টার প্রতিটি মহূর্তু খুবই ভালো কেটেছে। একেবারে ফ্রেশ হওয়া, তাদের বাড়ির আঙিনার সবজি, ভাগ্নে রাসেলের গাছের একেবারে অর্গানিক লাউ, বাড়ির পাশের নদীর মাছ এবং ওই গ্রামেরই বেড়ে উঠা দেশি মুরগি, এবং ওখানকার মানুষের আন্তরিক কথাবার্তা এগুলির জন্য নিজের জীবনের, বাংলাদেশের বা পৃথিবীর কোনোধরনের ঝামেলার কথা মনেই হয়নি। দুঃখজনক যে বেশি সময় থাকতে পারি নাই।
বাড়িটি ইট পাথরের পাকা বাড়ি, শুধু এটি ছাড়া আমার মনে হয়েছে আমি যেন কোনো এক ক্যাম্পগ্রাউন্ডে ছিলাম। চারিদিকে গাছপালায় ঘেরা প্রকৃতি। অনতিদূরে একটি নদী এবং তার থেকে স্রোতসিনী একটি ছোট খাল, একটু দূরে একটি হাট। আবার হাঁটা দূরত্বে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক। সারাদিনিই পাখির ডাক, এইতো আর কি লাগে।
আমি যাকে ভাগ্নে রাসেল বল্ললাম। সম্পর্কের দিক থেকে সে আমার দুলাভাইয়ের বড়ো ভাইয়ের বড়ো ছেলে, কিন্তু অন্তরের দিক থেকে আমাদের পরিবারের অনেক কাছের। সে উচ্চশিক্ষিত, কিন্তু কৃষিকাজ থেকে শুরু করে, হাঁস-মুরগি পালন, রাজমিস্ত্রীর কাজ ইত্যাদি সবকিছুতেই দক্ষ। বিকালে আমাকে নিয়ে গ্রামে এপাশ-ওপাশ হাটতে নিয়ে গেছে, আর বলেছে অনেক অনেক গল্প। না কোনো রাজনীতি, অর্থিনীতি বা সমাজ উদ্ধারের কথা নয়, একেবারে মাটি-মানুষ বা জীবনের কথা। অনেক ধন্যবাদ রাসেল।
আমি আমার বোনের ছেলেকে বলেছি তোমার ছুটির সময় কোনো রিসোর্টে যাওয়ার দরকার নেই, তোমার বাপের বাড়িতে এসে বৌ ছেলে নিয়ে কিছুদিন থেকে যাবে, একেবারে Absolute Mental Peace!!
বোনের বাড়ির ঠিক পিছনে প্রায় ৩ যুগ পরে ডুমুর গাছ দেখেছিলাম। এখানে ২/১ টি ছবি শেয়ার করছি।
অবশেষে ধন্যবাদ আমাদের দুলাভাইকে আমাদের বোনের জন্য এমন একটি নিরিবিলি এবং সুন্দর বাড়ি উপহার দেওয়ার জন্য।
আল্লাহ উনাদেরকে দীর্ঘ আয়ু দান করুন এবং সুস্থ রাখুন।