-0 C
Toronto
বুধবার, মার্চ ১২, ২০২৫

কনস্টেবলের স্ত্রীর সঙ্গে এসআইয়ের পরকীয়া, বিভাগীয় মামলা

কনস্টেবলের স্ত্রীর সঙ্গে এসআইয়ের পরকীয়া, বিভাগীয় মামলা
প্রতীকী ছবি

অভিযোগ তদন্তে গিয়ে পুলিশ কনস্টেবলের স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে আবদুর রউফ নামে এক উপ-পরিদর্শকের (এসআই) বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বিভাগীয় মামলা দায়ের হয়েছে। এই মামলা হওয়ার পর থেকেই ওই এসআই নানাভাবে পুলিশ কনস্টেবলকে হয়রানি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযুক্ত আবদুর রউফ আগে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) বোয়ালিয়া ও মতিহার থানায় ছিলেন।

- Advertisement -

বর্তমানে আছেন সাতক্ষীরার কলারোয়া থানায়। আর ভুক্তভোগী কনস্টেবল আছেন পাবনার ঈশ্বরদীর একটি পুলিশ ফাঁড়িতে।

স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া দেখে ওই কনস্টেবল গত বছর আরএমপির কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। আরএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিট এ অভিযোগের তদন্ত করে।

১২৭ পাতার তদন্ত প্রতিবেদনে ওই পুলিশ কনস্টেবলের অভিযোগের সত্যতা মেলে। এ নিয়ে অভিযুক্ত এসআইয়ের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। আরএমপির বিভাগীয় মামলা নম্বর- ২৮/২০২৪। পরে আরএমপির ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম মামলার তদন্ত করে সম্প্রতি প্রতিবেদন দেন।

ওই পুলিশ কনস্টেবল অভিযোগে উল্লেখ করেছিলেন, তার ছেলে রাজশাহীর একটি স্কুলে পড়াশোনা করে। তাই তার স্ত্রী নগরের সাধুরমোড় এলাকায় নিজের বাবার বাড়িতেই থাকেন। পরবর্তীতে বাড়ির অংশ নিয়ে বোনদের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে এক শ্যালিকা নগরের বোয়ালিয়া থানায় অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব পান থানার তৎকালীন এসআই আবদুর রউফ। বিরোধ নিষ্পত্তির কথা বলে এসআই আবদুর রউফ তার স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন।

একপর্যায়ে ওই এসআই নিচতলার একটি ঘর দখল করে ভাড়াটিয়া হিসেবে সেখানে থাকতে শুরু করেন।

কনস্টেবল অভিযোগে উল্লেখ করেন, একদিন তিনি পাবনা থেকে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে দেখতে পান, তার স্ত্রীর সঙ্গে ডাইনিংয়ে বসে খাচ্ছেন ওই এসআই। তিনি সেদিন তার পরিচয় জানতে পারেন। স্ত্রীর কাছে তিনি জানতে পারেন, অভিযোগ তদন্ত করতে এসে তার সঙ্গে পরিচয় হয়েছে এবং এরপর ওই এসআই তার শ্বশুরবাড়িতেই একটি ঘর ভাড়া নিয়ে উঠেছেন। তিনি একা থাকেন। রান্নার সমস্যা বলে ওই এসআই তার স্ত্রীর সঙ্গে খান।

ওই কনস্টেবল লক্ষ্য করেন, তিনি যখন ছুটিতে শ্বশুরবাড়ি যান তখন ওই এসআই বাড়িতে আসেন না। একদিন গভীর রাতে তার স্ত্রী যখন ঘুমাচ্ছিলেন, তখন তাকে ম্যাসেঞ্জারে বার্তা পাঠান ওই এসআই। ওই কনস্টেবল ম্যাসেঞ্জারে কথোপকথনে দেখেন, দুজনের একসঙ্গে তোলা ছবি এবং কুরুচিপূর্ণ বার্তা আদান-প্রদান হয়েছে। তার স্ত্রীর সঙ্গে ওই এসআইয়ের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ওই রাতেই তিনি এসআইয়ের সঙ্গে মোবাইলে উচ্চ্যবাচ্য করেন। তার স্ত্রী সেদিন বলেছিলেন, তার ভুল হয়ে গেছে। তিনি আর এসআইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখবেন না। কিন্তু সম্পর্ক ঠিকই চালিয়ে গেছেন।

ওই কনস্টেবল অভিযোগে উল্লেখ করেন, পাবনার একটি থানায় থাকা অবস্থায় গত বছর তার স্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে তিনি মোবাইলে কথা বলছিলেন। সেদিন তার স্ত্রী তাকে জানান, ওই এসআইয়ের কাছে তাদের দুজনের মেলামেশার ভিডিও আছে। সেটি দিয়ে তিনি তার স্ত্রীকে জিম্মি করে রেখেছেন। ফলে তার স্ত্রী না চাইলেও এসআইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে যেতে হচ্ছে।

এ কথা শোনার পর থানার ছাদ থেকে লাফ দিয়ে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তখন দুজন কনস্টেবল তাকে ধরে ফেলেন এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে নিয়ে যান। ওসি সবকিছু শুনে তাকে সংশ্লিষ্ট সার্কেল এএসপির কাছে নিয়ে যান। ওই এএসপি সব শুনে তাকে আরএমপির পুলিশ কমিশনারের কাছে অভিযোগ করার পরামর্শ দেন। এরপর তিনি এই লিখিত অভিযোগ করেন।

ওই কনস্টেবল জানান, এসআই আবদুর রউফ এখন তার স্ত্রীকেই কনস্টেবলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দিচ্ছেন না। এসআইয়ের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হওয়ার পর তিনি ওই কনস্টেবলের স্ত্রীকে দিয়ে তার বিরুদ্ধে পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শকের (ডিআইজি) কাছে একটি অভিযোগ করিয়েছেন। এছাড়া আদালতে যৌতুকের একটি মিথ্যা মামলা করানো হয়েছে বলেও ওই কনস্টেবল দাবি করেন।

ভুক্তভোগী পুলিশ কনস্টেবল বলেন, এসআই আবদুর রউফ আমার সংসারে আগুন লাগিয়েছে। সে আমার স্ত্রীকেই যোগাযোগ করতে দেয় না। আমার স্ত্রীর সঙ্গে তার পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক পুলিশি তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। বিভাগীয় মামলা হওয়ার পরে সে আমার স্ত্রীকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধেই মিথ্যা মামলা করিয়েছে, যাতে আমার চাকরি না থাকে। এসব কারণে আমি দুই দফা স্ট্রোক করেছি। মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুলিশের ঢালাও বদলির সময় এসআই আবদুর রউফ রাজশাহী থেকে সাতক্ষীরার কলারোয়া থানায় বদলি হয়ে গেছেন। বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করলে তিনি প্রথমে দাবি করেন, ওই কনস্টেবল এবং তার স্ত্রীকে তিনি চেনেনই না। কনস্টেবলের শ্বশুরবাড়ির একটি ঘরে বসবাসের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি পরে বলেন, ‘আমি ভাড়া উঠেছিলাম। তবে তার সঙ্গে আমার পরকীয়া নেই।’

এসআই রউফ এ সময় তার পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কের প্রমাণ দেখতে চান। পরে তার হোয়াটসঅ্যাপে কনস্টেবলের লিখিত অভিযোগ ও তার বিরুদ্ধে হওয়া বিভাগীয় মামলার কপি, কনস্টেবলের স্ত্রীর সঙ্গে ছবি ও ম্যাসেঞ্জারে কথোপকথনের স্ক্রিনশট পাঠানো হয়। এরপর ফোন করলে তিনি আর ধরেননি। আর এসআই রউফের কথায় স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কনস্টেবলের স্ত্রী মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এসআই রউফের বিরুদ্ধে হওয়া বিভাগীয় মামলার সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে চাইলে আরএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘বিভাগীয় মামলা অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে। এ ব্যাপারে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার নিয়ম নেই।’

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles