
ট্রাম্প গদিতে বসার প্রথমদিনই কানাডার সব ধরণের পণ্যে 25% শুল্ক বসাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন এ নিয়ে যে উত্তেজনা, জল্পনা-কল্পনা চলছিল অবশেষে তার অবসান ঘটেছে। গতকাল ট্রাম্প বলেছেন আজ মঙ্গলবার মার্চ ৪ কানাডা ও মেক্সিকোর সকল পণ্যে 25% শুল্ক সত্যি সত্যিই চালু হচ্ছে। তিনি বলেছেন “No room to negotiate.”
ট্রাম্পের আচরণে আমার এটাই মনে হয়েছে তিনি যেন তার ছেলের বিয়েতে যৌতুকের জন্য দর কষাকষি করতেছেন কন্যার বাবার সঙ্গে। কিংবা কলা বিক্রি করতেছেন বেশি দামে। এই যদি দিই উদাহরণ তাহলে বলা যায় যে, মানুষ যখন বেশি দামে কলা কিনে খেতে পারবে না, তখন কিনবেও না। ট্রাম্পের কলা তার ঝুড়িতেই পচন ধরবেয়ানে। এখন তো আপনারা বলবেন, ওগো না গো। ট্রাম্পের অনেক কলা আছে। পচলেও তার অসুবিধা নেই। তা নেই, আবার আছে। এটা তো আমি একটা জাস্ট উদাহরণ দিলাম।
এবার আসেন বাস্তব ঘটনা আলোচনায়।
আজ মার্চ ৪, ২০২৫ মঙ্গলবার কানাডার সকল পণ্যে 25% শুল্ক আরোপ হয়েছে বাস্তবতায়।
কানাডার কী কী সমস্যা হবে?
কানাডা অধিকাংশ পণ্য আমেরিকায় রপ্তানি হয়। যেমন ধরেন স্টিল বা এ জাতীয় পণ্য 75-80% কানাডা থেকে আমেরিকায় রপ্তানি করে। তারপর ধরেণ ডেইরি প্রোডাক্ট ও এর রিলেটেড পণ্য আমেরিকানরা কানাডার ওপরে নির্ভরশীল। এমন সমস্ত জিনিস। তো হলোটা কী? কানাডা আর এসব পণ্য রপ্তানি করতে পারবে না বেশি শুল্ক দিয়ে। তাতে হবে কী? হবে এই যে আপাতত প্রোডাক্ট বেশি বিক্রি হবে না এক। দুই, কারখানায় কর্মচারীদের চাকরি থাকবে না। তিন, নতুন করে কাউকে হায়ার করা হবে না। চার, কানাডায় আবার দ্রবমূল্যের দাম বেড়ে যাবে। বাড়ি-ঘর বানানোর কস্ট বেড়ে যাবে। কারণ ম্যাটেরিয়ালসের ওপর আলাদা শুল্ক বসানো হয়েছে। কেউ বাড়ি বানাবেন না। অনেক মানুষের কাজ থাকবে না ইত্যাদি অসংখ্য কাণ্ড হবে।
কানাডা কীভাবে কন্ট্রোল করছে?
কানাডা হলো well manner কান্ট্রি। তাই কানাডা চায় নি ট্রাম্প যা করতেছেন তার উল্টো জবাবে প্রথমেই ট্রাম্পের গালে চড় বসাতে। তাই প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো শুরু থেকেই নেগোশিয়েশন করতে চেয়েছেন। প্রিমিয়ার ডাগ ফোর্ডও ভেরি স্ট্রং ভূমিকায় ছিলেন। নেগোশিয়েশনের জন্য বারবার ওয়াশিংটনে গেছেন। কিন্তু যার থাকে উদ্দেশ্য অসৎ, তার পাল্টে না মত। ট্রাম্পেরও সেই অবস্থা। ট্রাম্পের মনে তো অন্য লক্ষ্য। 51 state বানানো। তাই যদি না বানাও তাহলে শুল্ক। তাই তিনি আসল উদ্দেশ্য হাসিল না করতে পেরে পরেরটা পেরেছেন। শুল্ক বসিয়েছেন। যাই হোক বসানো কমপ্লিট হয়ে গেছে।
এখন কানাডা কী বসে থাকবে? না। মোটেও না।
ফেডারেল সরকার বা ট্রুডো আজ থেকে $30 billion আমেরিকার পণ্যে 25% শুল্ক চালু করে দিয়েছেন অলরেডি। হাজার হাজার পণ্যের নাম আপনারা IRCC ওয়েবসাইটে দেখতে পাবেন। তারপর ২১ দিন পরে আরো $125 billion বসানো হবে। মোট ধরেন $155 billion এর ওপর বসানোর ঘোষণা দিয়েছেন ট্রুডো। এটাকে বলে retaliatory measures. মানে তুমি হিট করেছো বলে আমিও হিট কলরাম। বদলা নেওয়া আরকি।
ডাগ ফোর্ড কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
তিনি তো আরো দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যেই অন্টারিও’র LCBO (ম*দে*র দোকান) থেকে আমেরিকান ম*দ নামিয়ে ফেলেছেন।
বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এই ম*দ বিক্রি করে আমেরিকা কানাডায়। সেইটাই এখন বন্ধ হচ্ছে।
মজার ঘটনা শোনেন। ফোর্ডের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু আমেরিকার একজন গভর্নর। তিনি তার ব্যবসা হারাচ্ছেন। ফোর্ড ঐ বন্ধুকে বলেছেন, “You better talk to your president to think.”
তারপর ফোর্ড ইলন মাস্কের $100 million ডলারে স্টারলিংক চুক্তি বাতিল করবেন আজ থেকে।
তারপর ফোর্ড সকল স্টোরকে প্রোডাক্টে কানাডিয়ান পতাকার ছবি লাগাতে বলেছেন। যাতে কানাডিয়ানরা শুধুমাত্র কানাডিয়ান প্রোডাক্ট কেনেন। তিনি বলেছেন আমরা আমাদের প্রোডাক্ট মানে অন্টারিওর টা বলেছেন আগে অন্টারিও’র মধ্যে বিক্রি করব। একদম শেষে যদি কিছু না বিক্রি হয় সেগুলো বর্ডারের ওপাশে পাঠাব। তিনি energy কেটে দেবেন।
আরো অনেক পদক্ষেপ নিচ্ছেন তিনি শক্তহাতে। অন্যান্য সব প্রভিন্সও নেমেছেন।
আমেরিকার কী কিছু হবে কানাডার এ্যাকশনে?
অবশ্যই হবে। যারা ভাবছেন আমেরিকা তো বিশ্ব মোড়ল কিচ্ছু হবে না তারা ভালোভাবে চিন্তা করতে থাকেন।
কীভাবে হবে? আমেরিকাতেই সবকিছুর দাম বেড়ে যাবে যেমন যাচ্ছে কানাডায়। আমেরিকা কানাডার অনেক পণ্যের ওপর 80% পর্যন্ত নির্ভরশীল। মানে তারা নিজেরা এসব উৎপাদন করতে পারে না। যখন কানাডার পণ্য পাবে না বা অত্যন্ত বেশি দামে কিনতে হবে তখন কী আমেরিকার জীবনধারণ কস্টলি হবে না? অবশ্যই হবে। তাছাড়া সেখানেও মানুষের জব থাকবে না। নতুন কাউকে হায়ার হবে না। এসব হবেই।
আগে ঘটুক তখন বুঝবে মজা। একটা নিউজে শুনলাম আমেরিকান বলতেছে, কেন এই ট্রাম্পকে জেতালাম!
দেখা যাক কোথাকার জল কোথায় গড়ায়।
আল্লাহ আপনাদের সুস্থ রাখুন।
টরন্টো, কানাডা