
বিগত সরকারসমূহের মত আপনাদের ভাষায় যাকে “মহাজন” বলেন, তিনি সব ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে নেই, প্রাকটিসও করেন না, হুকুমও দেন না বলে আমার পর্যবেক্ষণ বলে। বিগত ছয়মাস যাবত আমরা দেখছি ড. ইউনুস দেশের প্রধান উপদেষ্টা হলেও ক্ষমতা এক্সারসাইজ হচ্ছে নানান জায়গা থেকে। যেহেতু আগে সব ক্ষমতা ও আদেশ নির্দেশ আসতো একটি জায়গা থেকে ফলে অনেকে স্বভাবসুলভভাবেই সব কিছুর জন্যে ড. ইউনূসকেই দায়ী করছেন।
এতে করে রাজনৈতিক ফায়দাও হবে না, সমস্যার সমাধানও হবে না। রাজনৈতিক ফায়দা হবে না কারণ আগামী নির্বাচনে তিনি প্রার্থীও হবেন না, তাঁর নিজস্ব কোন দলকেও জিতিয়ে আনার কোন তাগিদ বা দায় তাঁর নেই। তার হয়তো একটা টান আছে তরুণ যুবকদের দলের প্রতি কিন্তু কোনভাবেই তাদেরকে আগামী সরকার গঠন করতে তিনি তেমন কোন বড় ভুমিকা নিতে পারবেন না। এটাই বাস্তবতা। এবার আসুন সমস্যার সমাধান তাহলে কোথায়? একথা দিনের আলোর মত পরিস্কার যে সমস্যা তৈরী হচ্ছে। প্রতিদিনই হচ্ছে। রোজার দিনে প্রকাশ্যে রাস্তায় দুজন নারীর ধুমপানে যারা বাঁধা দিয়েছে, সেটা কি ইউনুসের নির্দেশে হয়েছে?
এই যে রাস্তায় মহিলা দেখলেই কেউ কেউ অযাচিতভাবে এসে বলছে, আপনার ওড়না ঠিক করুন! আপনার পোষাক ঠিক নেই কেন? এসব কি ইউনুস বলে দিয়েছে? ইউনুসের সেই সময় ও সুযোগ কোনটাই নেই, ঠেকাও পড়ে নাই। তাহলে এসব ঘটছে কেন? কেন সমাজে আজ এত মতভেদ? কেন এত বিভক্তি, কেন আজ কেউ কাউকে মানে না? ভক্তি শ্রদ্ধা, চেইন অব কমান্ড কোথায় চলে গেল? সত্যিকারভাবে খোঁজ নিলে দেখবেন দেশে যে কয়েকটা দুঃখজনক বড় ঘটনা মানুষকে নাড়া দিয়েছে সেগুলোর কোনটাতেই আপনাদের মহাজনের কোন হাত নেই কিন্তু তিনি দায়ী হবেন নিশ্চিত কারণ তিনি সরকার প্রধান। তিনি নির্বিকার ছিলেন, নির্বিকার থাকেন কারণ তার হুকুম তামিল করার যে বাহিনী সেটা ধ্বংসস্তূপের উপর থেকে ধীরে ধীরে গড়ে তুলতে হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হলো, সমাজটা এই পর্যায়ে গেল কেন? একটা সমাজের বিবর্তন কি মাত্র ছয়মাসে ঘটে? মানুষের দীর্ঘদিনের রাগ ক্ষোভ উগরে দেবার সুযোগ যখন আসে তখন তারা সেটা দিবেই কিন্তু সেই রাগ ক্ষোভটা কোথা থেকে এলো, কতদিনের পুষে রাখা সেই রাগ?
একটা উদাহরণ দিয়ে শেষ করি। এই যে দীর্ঘদিন যাবত ওয়াজ মাহফিলের অনুমতি দিয়ে তারপর ওয়াজ পছন্দ না হওয়ায় তাফসীরকারক বা ওয়াজকারী মাওলানা সাহেবকে হাজারও মানুষের সামনে প্রকাশ্যে মন্চের উপর ধমকানো, গা’য়ে হাত তোলা, ওয়াজ বন্ধ করে দেয়ার যে দৃশ্যগুলো আমরা দেখেছি, তার একটা বিশাল ক্ষোভ একটা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছিল এবং ৫ই আগস্টের পর তা যে বিস্ফোরণ হবে সেটাই কি স্বাভাবিক নয়? এরকম হাজারটা কারণ এখানে বলতে পারি কিন্তু বলে লাভ নেই।
তবুও বলি আসুন গভীরভাবে ঘটনাগুলো তলিয়ে দেখি। কারণ এই দেশটার চূড়ান্ত কোন কোন ক্ষতি হলে আপনি আমি আমরা সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হবো। সব দোষ মহাজনের বলে মহাজনের কোন ক্ষতি হবে না, ক্ষতি হবে এবং হচ্ছে সকলের। রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে একবার চিন্তা করে দেখুন। বঙ্গবন্ধুর নাম সরিয়ে শাহ আজিজের নামে হল নামকরণ কেউ কখনো চিন্তা করতে পেরেছে? কিন্তু হচ্ছে এসব। কেন হলো? কারা এসব করছে? নুতন কোন বিল্ডিং বা স্হাপনা তৈরী করে সেটা করা হলো না কেন? কেনই বা দেশের শত শত স্হাপনা বঙ্গবন্ধুর নামে করতে হলো? বঙ্গবন্ধুকে সবার উপরে না রাখার, দলীয় হীন রাজনীতির উর্ধ্বে না রাখার যে পরিণতি আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি তার দায় আসলে কার? আসুন তলিয়ে দেখি।
স্কারবোরো, কানাডা