-2.8 C
Toronto
বুধবার, মার্চ ১২, ২০২৫

মেজাজ খারাপ হলেই পেটান সাবেক প্রতিমন্ত্রীর তৃতীয় স্ত্রী ফরিদা

মেজাজ খারাপ হলেই পেটান সাবেক প্রতিমন্ত্রীর তৃতীয় স্ত্রী ফরিদা
সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা এনামুর রহমান ও তৃতীয় স্ত্রী ডা ফরিদা হক

সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানের তৃতীয় স্ত্রী ডা. ফরিদা হক মেজাজ খারাপ হলেই যাকেতাকে ধরে পেটান। স্বামীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা থেকে শুরু করে হাসপাতালের আয়া, কাজের বুয়া, গাড়িচালক, বাবুর্চি এমনকি নার্স ও শিক্ষার্থীও তার হাত থেকে রেহাই পায় না। ৫ আগস্টের পর ডা. ফরিদার নানা অপকর্মের তথ্য বেরিয়ে আসছে।

সাবেক দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুরের স্ত্রী পরিচয়ে ডা. ফরিদা আগে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে নিয়োগ-বদলি, পদোন্নতি, ঠিকাদারি এমনকি ঝুট বাণিজ্য থেকে নিয়মিত কমিশন নিতেন। বর্তমানে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। স্বামী জেলে থাকায় মেজাজ খারাপ হলেই তিনি যাকেতাকে ধরে পেটান। কথায়-কথায় তিনি যার-তার গায়ে হাত তোলেন। এসব ঘটনার প্রতিবাদে হাসপাতালের ভেতর ও বাইরে বিক্ষোভ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ডা. ফরিদাকে ঘেরাও এবং তার চেম্বার ভাঙচুর করেছে ক্ষুব্ধরা। এরপরও তার দৌরাত্ম্য কমছে না। বরং দিন দিন তা আরও বাড়ছে। সর্বশেষ গত সপ্তাহে এনাম নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থী অন্বেষাকে পিটিয়েছেন ডা. ফরিদা। এর প্রতিবাদে হাসপাতাল চত্বরে মানববন্ধন করা হয়েছে।

- Advertisement -

এলাকাবাসী জানায়, আশুলিয়ার তালবাগের ফজলুল হকের মেয়ে ফরিদা। কলেজে পড়ার সময় ফরিদা প্রথম বিয়ে করেন। প্রথম স্বামী ফার্মাসিউটিক্যালসের সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ চপলের ঘরে তার একটি ছেলে রয়েছে। এরপর এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. এনামুর রহমানকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ফরিদা বিয়ে করেন। বিয়ের আগে ডা. এনামুরকে তিনি চাচা ডাকতেন। রানা প্লাজা ধ্বংসের পর আলোচনায় আসা ডা. এনামুর রহমানের চার স্ত্রী। তবে তৃতীয় স্ত্রী ফরিদার সঙ্গে তিনি তালবাগের বাসায় থাকতেন। রাজনৈতিক অথবা সামাজিক যে কোনো অনুষ্ঠানে ফরিদা বিশেষ অতিথির মর্যাদা পেতে থাকেন। এ কারণে তিনি রাতারাতি সাভারের ‘ফার্স্ট লেডি’ হয়ে ওঠেন। সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ, ঠিকাদারি কাজ, সরকারি চাকরিতে পদোন্নতি, বদলি এমনকি ঝুট ব্যবসার কমিশনের অংশীদার হয়ে ওঠেন ফরিদা। রাতারাতি তিনি অঢেল অর্থের মালিক বলে যান। সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এবং এনাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি বাণিজ্য করে তিনি কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন। ব্যাংকে টাকা না রেখে তিনি স্বর্ণ ও জমিতে বিনিয়োগ শুরু করেন। পাশাপাশি এনাম মেডিকেল কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, সরকার নির্ধারিত ফির বাইরে তারা ৫ থেকে ৮ লাখ টাকা দিয়ে ভর্তি হয়েছেন। এ টাকা ফরিদার হাতে দিতে হয়েছে। গোহাইলবাড়ী এলাকার ডিগ্রি কলেজের এক সিনিয়র নারী শিক্ষক জানান, পদোন্নতির জন্য তার কাছ থেকে তিন লাখ টাকা ঘুস নিয়েছেন ফরিদা। তবে তার পদোন্নতি হয়নি। দুই লাখ টাকা ফেরত দিলেও বাকি টাকা তিনি পাননি। টাকা চাইলে তাকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়।

অভিযোগ-ডিগ্রি না থাকলেও প্রসূতিবিদ্যা ও স্ত্রীরোগবিদ্যা (গাইনি ও অবস) বিভাগের আবাসিক সার্জনের পদ দখলে রেখেছেন ডা. ফরিদা। ডিপ্লোমা (ডিজিও) ডিগ্রি নিয়েই তিনি জটিল সব অস্ত্রোপচার করেন। তার হাতে অসংখ্য প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যু হলেও সবকিছু চাপা পড়ে গেছে। এরই মধ্যে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাসপাতাল চত্বরে বিএসসি নার্সিং শিক্ষার্থী অন্বেষাকে বেদম পিটুনি দিয়েছেন ফরিদা। সপ্তাহখানেক আগে হাসপাতালের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগবিদ্যা বিভাগের আয়া সুফিয়া খাতুন আঁখিকে পিটুনি দেন ফরিদা। এ ঘটনায় শনিবার ক্ষুব্ধ কর্মচারীরা তাকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে। এক পর্যায়ে ২৪৫ নম্বর কক্ষ ভাঙচুর করা হয়।

২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কমিশনের ভাগবাঁটোয়ারা ও দ্বন্দ্বে নিজের বাসায় ডা. এনামুরের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) সাইদুর রহমান সুজনকে বেঁধে পেটান ডা. ফরিদা। আঁখি যুগান্তরকে জানান, কয়েকদিন আগে এক ওয়ার্ড বয়কেও ফরিদা ম্যাডাম মেরেছেন। বিনা কারণে আমাকেও তিনি মারধর করেছেন। আমি বিচার চাই।

স্টাফদের মারধরের কথা সোমবার মোবাইল ফোনে স্বীকার করেন ডা. ফরিদা হক। তবে বিএসসি নার্সিং শিক্ষার্থী অন্বেষাকে মারধরের কথা তিনি চেপে যান। কলেজ শিক্ষিকার কাছ থেকে নিয়োগের কথা বলে তিন লাখ টাকা গ্রহণের বিষয়টি স্বীকার করে ফরিদা জানান, দুই লাখ টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। বাকি ১ লাখ টাকাও দেওয়া হবে। আর অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে ফরিদা ঘাঁটাঘাঁটি না করার পরামর্শ দেন।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্রে জানা গেছে, এনামের তৃতীয় স্ত্রী সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles