-0 C
Toronto
বুধবার, মার্চ ১২, ২০২৫

একটা বিষয় আমি না লিখে পারলাম না

একটা বিষয় আমি না লিখে পারলাম না
আমি অসংখ্য পোস্ট দেখেছি যারা মেয়েটা অর্ধেক না ঢাকা ছবি পোস্ট করেছেন আবার কোনো কোনো ব্লগার তো ধরেন হাসপাতালে যেভাবে শুয়ে আছে মেয়েটা সেই ছবি ভিডিও করে ছেড়েছে

আপনারা জানেন যে দেশের মাগুরায় একজন আট বছরের শিশুর সঙ্গে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। যাকে বলে ধ*র্ষণ। এই শব্দটাও মুখে নিতে চাচ্ছি না। যতই এই হীন বাক্যটা উচ্চারণ করা হয় আমার ভেতর থেকে কেমন যেন সব উলটপালট হয়ে যায়। বিশেষ করে এই ছোট্ট বাচ্চাটার বেলায় তো বটেই।

কিন্তু আপনারা একটা বিশেষ লক্ষ্য করেছেন কিনা বা উপলব্ধি করেছেন কিনা বা আপনাদের অনুভূতিতে বিষয়টা নাড়া দিয়েছে কিনা আমি জানি না।

- Advertisement -

সেটা হলো আমি সোস্যাল মিডিয়ায় যতগুলো এই বিষয়টা নিয়ে পোস্ট দেখেছি বা ভিডিও দেখেছি প্রত্যেকেই মেয়েটার ছবি আপলোড করেছেন। মেয়েটার ভালো ছবি ও আক্রান্ত হওয়ার পর বুকের অর্ধেক না ঢাকা ছবিসহ।

আপনাদের কাছে বিষয়টা কেমন লেগেছে সত্যিকার অর্থে বলুন তো? যদি মেয়েটার একটা স্বাভাবিক এ্যাকসিডেন্ট হতো তখন হয়তো ছবি দিলে বিষয়টা এতোটা হীনমন্যতার মধ্যে পড়ত না।

আপনারা যারা মেয়েটার ছবি আপলোড করতেছেন ভালো ও শরীর না ঢাকা অচেতন অবস্থার ছবি, তারা বলুন তো আপনারা এইটা করে মেয়েটার কি উপকার করতেছেন?

আপনারা কি মনে করতেছে যে, মেয়েটার ছবি না দিলে শুধু যদি বলা হয় মেয়েটা ধ*র্ষিত হয়েছে তাতে বিষয়টা গুরুত্ব পেত না?

তাহলে ব্যাপারটা কী দাঁড়াচ্ছে? মেয়েটার ছবিটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ তাই না? এটা না পোস্ট করলে আপনাদের পোস্ট কেউ এতটা গুরুত্ব দিয়ে পড়বে না বা আপনাদের ভিডিওতে ভিউ বাণিজ্য হবে না?

আমি অসংখ্য পোস্ট দেখেছি যারা মেয়েটা অর্ধেক না ঢাকা ছবি পোস্ট করেছেন। আবার কোনো কোনো ব্লগার তো ধরেন হাসপাতালে যেভাবে শুয়ে আছে মেয়েটা সেই ছবি ভিডিও করে ছেড়েছে।

সত্যি কথা বলতে জানেন কি? আমি ঐসমস্ত পোস্ট ও ভিডিও*র দিকে তাকাতে পারি নি। আমার চোখে যতবার পড়েছে, আমার নিজের কাছে ভীষণভাবে অপরাধি মনে হয়েছে।

আপনারা একবার চিন্তা করেন যে, ঐ বয়সী একটা মেয়ে আপনার আছে। আমার মেয়ের বয়সই তো নয় বছর। তাহলে চিন্তা করেন আপনার জায়গা থেকে যে, আপনার মেয়েটা যেভাবেই হোক সমাজের হিংস্রতার কবলে পড়ে ধ** র্ষি  * হয়েছিল। আর সোস্যাল মিডিয়ায় সমানে তার সেই মুমূর্ষু অবস্থার ছবি আপলোড করতেছে। আপনার কাছে কি মনে হতো না আপনার মেয়েকে আরো অপমানিত করা হচ্ছে?

এমন কি তার নামটাও তো বলা উচিত হয়নি। কেন এটা কি বলা যথেষ্ট ছিল না যে, মাগুরায় একজন শিশুর শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে? বা ধরেন ধ*র্ষণের কথাই না হয় উল্লেখ করলেন। ব্যাস। এতটুকুই তো যথেষ্ট ছিল।

কোন আইনে আছে যে ভিকটিমের প্রোপার নাম ও ছবি সোস্যাল মিডিয়ায় না দিলে কেস নেওয়া হবে না? বিচার করা হবে না? আন্দোলন করা যাবে না?

দেশে একজন স্বনামধন্য গায়কও দেখলাম পোস্ট দিয়েছেন মেয়েটার নাম উল্লেখ করে। কেন আপনি কি বলতে পারতেন না একজন শিশু?

আপনারা সবাই মেয়েটার জন্য দুঃখিত হয়েছেন, আপনাদের অন্তরে ব্যথা লাগছে। কিন্তু সেইজন্য আপনাদের মেয়েটাকে আরো বেইজ্জত করতে হবে?

অথচ একটা আশ্চর্যজনক বিষয় দেখেন, যারা এই জঘন্য কাজটা করেছে সেই হিংস্র প্রাণীদের ছবি কতোজন পোস্ট করেছেন? কতোজন আপনারা সেই ধ*র্ষকদের নাম উল্লেখ করেছেন?

আপনারা কেন ক্রি*মি*নালদের ছবি পোস্ট করতে চান না? কেন চান না তাদের নাম সবাইকে জানাতে?

আজ সোস্যাল মিডিয়ার যুগে অনুভূতি প্রকাশ করা অনেকটা সহজ। তার চেয়ে বেশি সহজ একটা কিছু ভাইরাল করে ফেলা। কিন্তু সেই ভাইলারটা কাউকে উপকার করতে গিয়ে বেইজ্জত করতেছেন কিনা গভীরভাবে ভাবুন। বিশেষ করে এমন ঘটনার বেলায়।

দেশে সভ্যতা কায়েম হয় নি তাই এমন ঘটনা ঘটতেছে। কিন্তু সবাই তো আর অসভ্য না। যারা সভ্যতার ছায়াতলে এমন ঘটনার প্রতিবাদ করতে চান অবশ্যই ভিকটিমের অবয়বকে পুঁজি করে নয়।

প্রতিবাদ করুন ঘটনাটা তুলে ধরে। প্রতিবাদ হোক ধ*র্ষণ*কারীর ছবি দেখিয়ে।

আল্লাহ আপনাদের সুস্থ রাখুন।

টরন্টো, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles