-0 C
Toronto
বুধবার, মার্চ ১২, ২০২৫

জ্বর

জ্বর
নিজের রুমে উদভ্রান্তের মতো গেলো ব্যাগ থেকে মোবাইল টা বের করতে গিয়ে হাত থেকে পরে উপরের গ্লাস পেপার টা ফেঁটে গেছে

নিজের রুমে উদভ্রান্তের মতো গেলো। ব্যাগ থেকে মোবাইল টা বের করতে গিয়ে হাত থেকে পরে উপরের গ্লাস পেপার টা ফেঁটে গেছে।

এদিকে রান্না ঘর থেকো পোড়া গন্ধে ঘর ভরে গেছে। দৌড়ে গিয়ে দেখলো চায়ের ক্যাটলি পুড়ে ধোঁয়া উঠছে,আরেকটু সময় গেলে ক্যাটলিতে আগুন উঠে যেতো।

- Advertisement -

চুলা টা নিভিয়ে কিচেন সিংকের উপর ক্যাটলিটা খুব সাবধানতার সাথে রাখতে গিয়ে বাবার একটা কথা মনে পরলো। বিপদে ধৈর্য্য ধরো,মাথা ঠান্ডা রেখো। তরু,

ট্যাপের পানি ছেড়ে কিছুক্ষণ পানির দিকে তাকিয়ে রইলো,তারপর চোখে মুখে পানির ছাপ্টা দিয়ে মন কে শান্ত করার চেষ্টা করছে।

কলিং বেলের শব্দ দরজা খুলে দিল। আবির বাহির থেকে এসেছে। হাতে একটা পলি ব্যাগে ফুচকা।

তরুর হাতে ফুচকা র প্যাকেট টা দিয়ে বললো-

-বাসায় থাকতে ভালোলাগছিলো না,তুমি বাসায় নেই তাই বোধ হয়। রাস্তার মোড়ে লেম্বু চাচা খুব ভালো ফুচকা বানায়,তার হাতের ফুচকার অনেক নাম। ভাইরাল ও বলতে পারো। কোর্ট টাই পরে একদম বাবু সেজে হাইজিন ম্যানটেইন করে বানায়।

-আপনার জ্বরের অবস্থা কি?

বলে আবিরের কপালে নিজের হাত উল্টে পাল্টে রেখে গায়ের তাপমাত্রা বুঝার চেয়ে করলো।

আবির গিয়ে শুয়ে পরলো,তরু পাশে বসে কিছু টা সংকুচ মনের মধ্যে রেখে জিজ্ঞেস করলো-

– এতো গুলো কল দিলাম রিসিভ করলেন না কেন?

– ওহ্ মোবাইল তো বাসায় রেখে চলে গিয়েছিলাম।

– বাসায় কি কেউ এসেছিল,আপনার বন্ধু-টন্ধু?

– না,একদিনের জ্বরে কি বন্ধুরা দেখতে আসে নাকি,হাহাহা।

তরু চুপ করে কিছু সময় ভাবলো-

-আবির কে কি জিজ্ঞেস করবো ড্রইং রুমে সিগারেটের ফিল্টারের কথা। আবির কে কখনো সিগারেট ফুঁকতে দেখিনি। যদি আবির সিগারেট না খেয়ে থাকে তবে

তার মনোজগতে অন্য কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।

সবচেয়ে বড় কথা তারা হঠাৎ এমন আচরণ করছে কেন! আবির কি কিছু করেছে,ছিঃছিঃ আমি এসব কি ভাবছি?

না,থাক কৌশলে সব কিছু জানতে হবে।

আবির তরু কে জিজ্ঞেস করলো-

-ঘরে কি কিছু পুড়েছে?

-হ্যা, চা বসিয়ে ভুলে গিয়েছিলাম।

-এক কাপ চা পেলে ভালোই লাগতো।

-আপনি শুয়ে থাকেন। দুপুরে ভাত খেতে পেরেছেন?

-হুম তিতা লাছিল।

-আচ্ছা আমি আপনার জন্য চা আর ব্রেড দেই।

-না,না লাগবে না। তুমি অফিস থেকো টায়ার্ড হয়ে এসেছো,রেস্ট করো তরু। ফুচকা তো চুপসে যাচ্ছে, তারা কে দাও।

তরু সকল ক্লান্তি,প্রচন্ড মাথা ব্যাথা আবিরের এই কথা শুনে ভ্যানিশ হয়ে গেলো। অথচ তারার আচরণ, চাচির কমেন্ট শুনে আবিরের উপর বিরক্ত-ই লাগছিল একরকম। অফিসে বসে কয়েকবার মনে হয়েছিল তারা কে নিয়ে আগের বাসায় চলে যেতে।

একটা কথা তরু মা বলতো জামাই খারাপ হলে ও ভালো। জীবনে সবাই যার যার জীবন নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে যাবে, থাকবে শুধু জীবন সঙ্গী৷ তাই তার মূল্য দিয়ও,যদি সে তোমাকে সামান্যতম ও ভালোবাসে।

আবিরের সামনে তারার দরজায় নক করলো না। যদি সে কোন রিয়্যাক্ট করে বসে।  আবিরের সামনে তারার অস্বাভাবিক আচরণ টা ধরা পরে গেলে কি একটা বাজে অবস্থা তৈরি হবো। কার সাথে তারার বিষয় নিয়ে কথা বলবে কিছু বুঝতে পারছে না তরু। পরক্ষনেই ভাবলো তানভীর ভাইয়ের সাথে শেয়ার করবে না কি ভাবির সাথে। না কারো সাথে আপতত শেয়ার করার প্রয়োজন নেই,তারার সাথেই সরাসরি কথা বলতে হবে।

চা,ব্রেড আর প্যারাসিটামল খাইয়ে দিল আবির কে। ফাঁকে একবার তারার দরজায় নক করে এসেছে,তারা কোন শব্দ করেনি।

আবির বললো-

-তরু আমাদের অফিসিয়াল ট্যুর আছে। সবাই ফ্যামেলি নিয়ে যাবে।

-অফিসিয়াল ট্যুরে ফ্যামিলি কেন?

-সবাই ঠিক করলো,বউ বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরতে বের হবে। সেই উদ্দেশ্যে। আমাদের ও তো হানিমুন হয়নি।

-বুড়া বয়সের বিয়ে তার আবার মধুচন্দ্রিমা হিহিহি।

-কি যে বলো বুড়া বয়সের বিয়ে কি তীর্থ যাত্রা। শোন সব প্রেম ই নতুন সব বিয়ে ই লাজুক। বাসর ঘরে কি লজ্জা টা পাচ্ছিলে মনে আছে।

-ধ্যাত, চুপ করেন তো। মেয়ে শুনবে।

– আমার পাশে এসে শুয়ে পরো,তোমাকে জড়িয়ে ধরে একটা ঘুম দেই।

তরু বাধ্য মেয়ের মতো আবিরের পাশে শুয়ে পরলো।

আবির অলস কন্ঠে বললো-

-দরজা টা লক করে আসবা না।

-শুয়ে পরেছি এখন আর উঠা সম্ভব না।

-আচ্ছা আমি লক করে আসি।

তরু আবিরের হাত টেনে ধরে বললো-

– দরজা লক করা লাগবে না। চুপ করে ঘুমিয়ে থাকেন।

-বউ পাশে থাকলে চুপ করে ঘুমানো যায় না। একটু আদর করি প্লিজ।

—————

আবিরের অফিসয়াল ট্যুরের কথা শুনে ভালোই লাগছিলো তরুর। মেয়ে টা কেমন জানি করছে,হয়তো হাঁপিয়ে উঠেছে, টিন এজ বাচ্চা। আবিরের চোখে ধরা পরেনি তারার আচরণ,তাই তরু ও তারার এই আচরণ গুলো সামনে তুলে ধরতে চাচ্ছে না। আবির যদি চিন্তা করে তারা আবিরের জন্য এমন করছে কিংবা নেগেটিভ কিছু। বেড়িয়ে আসলে মনে হয় তারা আগের মতোই স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

আবিরের কপালে হাত রেখে দেখলো জ্বর কমে গেছে। আবির নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে,  শরীর ঘামছে। জ্বর ও নিয়ে ও তরু চিন্তায় ছিল। ডেংগুর উপদ্রব চারদিকে। আল্লাহ বিশাল একটা চিন্তা থেকে মুক্তি দান করেছেন।

চুপচাপ খাট থেকে নেমে যেতে গিয়ে ও পারেনি শাড়ি আঁচল আবিরের পিঠের নিচে। ধীরে ধীরে খুব সাবধানে শাড়ি টা পিঠের নিচ থেকে বের করে নিল।

ডাইনিং টেবিলে রাখা ফুচকা গুলো নেতিয়ে পরেছে। তারা রুম থেকে একবার ও বের হয়নি। না আর এইসব নেয়া যাচ্ছে না,তরু আবার দরজা নক করলো।

তারা দরজা খুলে জিজ্ঞেস করলো –

– কিছু বলবে মা?

তরু রুমের ভেতরে গিয়ে চেয়ারে বসতে বসতে বললো-

-প্রিয়ম কোথায়, এখন আসে না কেন?

-ও বেড়াতে গেছে।

-তোমার কি কোন সমস্যা হচ্ছে তারা?

তারা চুপ করে আছে।

তরু আবার বললো-

-আমরা কক্সবাজার যবো,তুমি মনে মনে তৈরি থেকো।

-আমি যাবো না।

-কেন যাবে না?

-ভালোলাগে না তাই যাবো না।

– তোমার বাবা কত আশা নিয়ে বসে আছে অফিসের ট্যুরে বউ বাচ্চা নিয়ে এক সাথে যাবে।

– কে বাবা? সে আমার বাবা না।

তরুর চোখ বড় হয়ে গেছে,এসব কি শুনছে। তারার হয়েছে কি। সিগারেট এর কথা তো ভুলেই গিয়েছিল। তারার আচরণে সিগারেটের বিষয় নিয়ে সন্দেহের দানা বাঁধতে শুরু করেছে।

তরু দ্রুত দরজা চাপিয়ে দিয়ে বলল-

– চুপ আস্তে কথা বলো।

-কেনো মা,তোমার খুব অসুবিধা হবে? তাহলে আমাকে হোস্টেলে দিয়ে দিলেই তো পারো। তুমি ও বাঁচো আমি ও বেঁচে যাই।

তারা কখনো এমন আচরণ করেনি। তবে আজ হঠাৎ কি এমন হলো। তরু নিজেকে শান্ত করে সব দ্বিধা এক পাশে রেখে প্রচন্ড কষ্ট করে জিজ্ঞেস করলো-

– আবির কি কিছু করেছে মানে বলেছে মানে এমন কিছু করেছে যার কারনে তুমি এমন বিক্ষিপ্ত।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles