12.8 C
Toronto
বুধবার, মার্চ ১৯, ২০২৫

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ রোজাদারেরা ইফতারের পরে পড়বেন

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ রোজাদারেরা ইফতারের পরে পড়বেন - the Bengali Times
ভোরে উঠে ফজরের নামাজটা পড়ে চুলোয় চড়িয়ে দেবেন ল্যাটকা খিচুড়ি

শীতের শেষে মজা আছে। গাছে গাছে নতুন ফুল, পাখির কলতান, কাঠবেড়ালীদের উৎপাত, বাতাসে নতুন ধানের গন্ধ; কি এক নতুন অনুভূতি! জামাকাপড়েও বিরাট পরিবর্তন। মোটা কাপড় ছাড়া মনের আনন্দে ঘুরে বেড়ানো, সহ্য করার মতো হালকা ঘাম। চারিদিকে পিকনিকের আমেজ; মাইক বাজিয়ে শিক্ষার্থীরা আনন্দ করতে করতে ছুটে চলেছে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, টেকনাফ, তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড়, সিলেট, কুঠি বাড়ি, সুন্দরবন।

তবে, সৌন্দর্য্য দেখে মন ভরলেও পেট ভরে না..

- Advertisement -

সকাল হতে না হতেই মানুষ ছোটে ব্যাগ হাতে কাঁচা বাজারে। সবাই ভালোমতো বাজার করতে জানে না। কেউ কেনে কম, কেউ কেনে বেশি, কেউ করে অপচয়। কারও আবার ইচ্ছে থাকলেও সাধ্যি নেই।

বুদ্ধিমানরা বাজারে যায় ছোট্ট ব্যাগ হাতে।

কিনবে মজার জিনিস, ঠিক যতটুকু প্রয়োজন। দুপুরের জন্য এক ছটাক চিংড়ি শুঁটকি, বেগুন, এক আঁটি ধনে পাতা, আধা কেজি আলু, দু’টা কাঁচা কলা, একটা মূলা আর মসুরের ডাল। রাতের জন্য চারটা হাঁসের ডিম, এক ছটাক উচ্ছে। আর সকালের জন্য শুধু এক ছটাক শুকনো বরই।

ব্যাস!

দুপুরে চুলোয় থাকবে চিংড়ি শুঁটকি দিয়ে মূলা-বেগুন চচ্চড়ি। প্রচুর ঝাল দিয়ে। উপরে ছিটানো লম্বা ডাঁটাসহ ধনে পাতা। চা চামচে করে যখন চাখবেন, মনে হবে পরম করুনাময় দয়া করে বেহেস্ত থেকে এক ফোঁটা অমৃত ধার দিয়েছেন। গরম ভাতের সাথে আর কিচ্ছু লাগবে না; শুধু সর্ষে তেল আর ঝাল কাঁচামরিচ দিয়ে নতুন আলু ভর্তা, ঘন মসুরের ডাল, এক টুকরো লেবু। এ খাবারের স্বাদ বর্ণনা করতে যাওয়া মানে চরম বোকামি। পৃথিবীর কিছু সৌন্দর্য্য কখনও বর্ণনা করতে নেই; শুধু অনুভবের।

আর রাতে শুরু হবে বিরাট সাইজের হাঁসের ডিম সেদ্ধ। তারপর গরম কড়াইতে তেলে ছেড়ে দিলে কানে বাজবে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সংগীত। ওদিকে বাটা মসলা দিয়ে চলবে কাঁচা কলা কষানো। শুধু ডিমগুলো ছেড়ে দিলেই হয়ে গেলো। দুপুরের বেঁচে যাওয়া ডালটুকু দিয়েই ভালোমতো হয়ে যাবে। হাঁসের ডিম হলো আল্লাহ তায়ালা সুবহানু’র অপূর্ব নেয়ামত। ভদ্র-লক্ষী সভ্য প্রাণী। মুরগীর মতো বেয়াদব না।

আর হ্যাঁ, ডুবো তেলে ভেজে নিংড়ে তোলা কড়কড়ে উচ্ছে ভাজি। ভাই রে ভাই, কুসুমশুদ্ধ ডিম ভেঙে ডালে মাখিয়ে ইরিধানের ঝরঝরে ভাতের নলা যখন মুখে পুড়বেন; স্বাদের চোটে চোখ বুজে আসবে। ভুনা ডিম, সুস্বাদু কাঁচকলা আর মুচমুচে উচ্ছে; এই তিন কম্বিনেশনের ধারে কাছেও কিছু নাই। আর যদি খুবই সৌভাগ্যবান হোন, তখন মিলবে ডিমের কেন্দ্রের অর্ধসেদ্ধ কুসুম। যেটার খানিকটা তখনও মাখনের মতো লালচে থাকবে। এর সুবাসের কোনো জুড়ি নেই।

রাতে খেয়ে দেবেন তৃপ্তির ঘুম; কোনো থামাথামি নাই।

ভোরে উঠে ফজরের নামাজটা পড়ে চুলোয় চড়িয়ে দেবেন ল্যাটকা খিচুড়ি। আগেরদিনের বেঁচে যাওয়া সবজি অল্প অল্প করে দিয়ে দেখবেন কত বরকত। কৃতজ্ঞতায় আপনার মাথা নুইয়ে আসবে। আর ম্যাজিক ইনগ্রেডিয়েন্ট হলো শুকনো বরই। খিচুড়িতে ফুলে-ফেঁপে হয়ে উঠবে মার্বেল সাইজের লাল টকটকে গোলাপ। চাপের চোটে মুখ ফেটে বেরিয়ে আসবে লালচে মিষ্টি রস। আগের দিনের শুকনো গাজর, পাতাকপি, ধনে পাতা সবাই যার যার রং ছিটিয়ে শুরু করবে হোলি খেলা। রাঙিয়ে দেবে পুরো হাঁড়ি!

শেষে একটু কষ্ট করে কাঁচামরিচ কুঁচি, পেঁয়াজ কুচি আর সরিষা খাঁটি তেল দিয়ে মাখানো ঝাল। টেবিল চামচ নিয়ে বসে যেতে হবে চেয়ারে, পা তুলে। ছোট্ট বয়োম থেকে এক চা চামচ ঘি মাখানোর পর আকাশে বাতাসে চলবে তুঘলকি কান্ড। গলাধঃকরণ থামানোই মুশকিল। বারবার ব্যর্থ প্রচেষ্টা.. চলবে প্রতিজ্ঞা ভাঙার হাস্যকর খেলা; ঠিক যেন রবিঠাকুরের কোনো ছোট গল্পের শেষটুকু..

ঘর ছেড়ে না বেরুলেই নয়।

আগুন গরম চা আর উষ্ণ দৈনিক খবরের কাগজ হাতে বসতে হবে মোড়া পেতে উঠোনে, জাম আর সজনে গাছের ছায়ায়। দিন বাড়ার সাথে সাথে উঠোনে চলবে আলো-আঁধারের লুকোচুরি।

বাংলাদেশ, তোমায় একটু বেশিই ভালোবাসি!

 

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles