5.8 C
Toronto
শুক্রবার, মার্চ ২১, ২০২৫

নারীদের স্পর্শকাতর জায়গায় তাকানো স্বাভাবিক ঘটনা হিসাবে দেখা হয়: মিমি

নারীদের স্পর্শকাতর জায়গায় তাকানো স্বাভাবিক ঘটনা হিসাবে দেখা হয়: মিমি - the Bengali Times
অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী

সম্প্রতি ‘ডাইনি’ ওয়েব সিরিজের নেপথ্য কাহিনি শোনালেন টালিউড অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী। ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী জানালেন ওয়েব সিরিজটি নিয়ে নানা কথা। সেখানে মেয়েদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিও উঠে এসেছে।

মিমি কি ‘ডাইনি’?—এমন প্রশ্নের উত্তরে অভিনেত্রী বলেন, বলব না। সিরিজ দেখতে হবে।

- Advertisement -

‘ডাইনি’তে মারপিট, রক্ত, ভালো লাগে অভিনয় করতে? মিমি বলেন, সত্যি কথা বলতে— আমি এ ধরনের মারপিটের দৃশ্যে খুব সাবলীল। আমার ভালো লাগে। প্রচুর রিহার্সাল করেছি আমরা। খলনায়কের চরিত্রে যিনি অভিনয় করেছেন, তিনি এ জগতে নতুন। প্রচুর মারপিটের দৃশ্য ছিল। ১৩ থেকে ১৪ মিনিটের মতো মারপিটের দৃশ্য। তার ওপর যা গরম ছিল। প্রস্থেটিক মেকআপের ভেতরে ঘেমে যাচ্ছি। কিছু করতে পারছি না। একদিকে রক্ত পড়ছে, একদিকে ঘাম ঝরছে, মাথায় হাত দিতে পারছি না। একটাই বাঁচোয়া, নো মেকআপ লুক ছিল। কাজল পরে চুল আঁচড়ে সেটে চলে যেতাম। প্রস্থেটিক মেকআপ করতে যা সময় লাগত। যেহেতু একদিনের গল্প, এখানে দেখা যাচ্ছে সময়ের সঙ্গে চোখেমুখে ক্ষত আরও বেড়ে যাচ্ছে।

‘ডাইনি’ নির্মাণের নেপথ্য গল্পটা কেমন ছিল—এ প্রসঙ্গে অভিনেত্রী বলেন, নির্ঝর যখন আমার কাছে চিত্রনাট্য নিয়ে আসে, তখন ওকে বলেছিলাম— এখন তো আর এসব হয় না রে। ও তখন আমাকে একটা তথ্যচিত্র দেখিয়েছিল। কত মেয়েকে ডাইনি অপবাদে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। গ্রামের দিকে পিতৃতান্ত্রিক চিন্তাভাবনা প্রখর। এখনও ডাইনিপ্রথা সংক্রান্ত নানা ঘটনা শোনা যায়।

গ্রামে কোনো এক নারীর স্বামীর মৃত্যু হলো। স্বামী তার স্ত্রীর জন্য সম্পত্তি রেখে গেছেন। এবার যিনি গ্রামের মোড়ল ও তার ছেলেরা সেই সম্পত্তি গ্রাস করবেন! দেখছেন নারী একা, তার কেউ নেই। এভাবেই তো নিজেদের সম্পদ বৃদ্ধি করেন তারা। মানুষ চাঁদে যাচ্ছে, মঙ্গলগ্রহে যাচ্ছে, আর এদিকে এখনো কিছু জায়াগায় আমরা মেয়েরা ঘোমটা টেনে বসে আছি।

‘ডাইনি’ চ্যালেঞ্জিং মনে হয়েছিল না কি আত্মবিশ্বাসের পাল্লা ভারি—এমন প্রশ্নে মিমি বলেন, ইন্ডাস্ট্রিতে ১৫ বছর পার করে ফেলেছি। এখন এ ধরনের চরিত্রে অভিনয় করব না তো আর কবে করব? আমার কাছে এ ধরনের চরিত্রে অভিনয় চ্যালেঞ্জিং নয়, বরং ভালোই লাগে এ ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে। এ ধরনের চরিত্র যে লেখা হচ্ছে এখন, তাতে আমি ভীষণ খুশি। লোকে যে কেন ভাবে আমি এ ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে চাই না!

তিনি বলেন, ডাইনির পরপর এ ধরনের চরিত্রের কিছু চিত্রনাট্য এসেছে আমার কাছে। এখন আমার প্রশ্ন— তুমি আগে এলে না কেন? আমি করে ফেলার পর কেন আসছ? এখন তো আমি এ ধরনের চরিত্র করে ফেলেছি, পুনরাবৃত্তি কেন করব?

এটা নিশ্চয়ই সিনেমা হতে পারত না? মিমি বলেন, হ্যাঁ, হতেই পারত। বড় বাজেটের সিরিজ। আমরা গাড়ি এনেছি, পুড়িয়েছি। বিস্ফোরণ ঘটিয়েছি। এই নির্ঝর শুনে যা… (পরিচালক নির্ঝরকে ডেকে নিলেন মিমি।) নির্ঝর বললেন, ছবি হতে পারত। ভাগে ভাগে হচ্ছিল। একটা পর্বের পর আরেকটা। শুটিংয়ের পরও একবার ভেবেছিলাম, এটা সিনেমা করলে কেমন হয়। কিন্তু এডিটে যাওয়ার পর বুঝলাম সিরিজই ঠিক আছে।

অভিনেত্রী হিসাবে মিমিকে কেমন দেখলেন—এমন প্রশ্নে পরিচালক বললেন, দুর্দান্ত। এরপর মিমি বললেন, আমার সামনে বসে রয়েছে, আর কী বলবে— দুর্দান্ত বলছে (হাসি)।

নির্ঝর বললেন, না। ওর একটা ধারাবাহিকতা রয়েছে। শিল্পের প্রতি ওর নৈপুণ্য বারবার প্রকাশ পায়। বাকি অভিনেতারা সবাই নতুন।

একসঙ্গে এত নতুন মুখ। অভিনয়ের সামঞ্জস্যে অসুবিধা না হওয়া প্রসঙ্গে অভিনেত্রী বলেন, আমরা সেটে সবাই মিলে একসঙ্গে থাকতাম। নতুনদের ভুল হলে সেটা নিয়ে উচ্চবাচ্য না করা, আড্ডা দেওয়া ইত্যাদি। আমার একার কাজ নয় এটা, মিমি চক্রবর্তীর কাজ নয়। আমি তো ভালো করবই, সে জন্যই তো আমাকে নিয়েছে। কিন্তু আমি যদি সবাইকে নিয়ে ভালো করতে পারি, তাহলে সেটা পুরোপুরি আমার কাজ। নির্ঝর খুব ভালো কাস্টিং করেছে। আমি বলতাম— চিল কর। গাড়ির চালকের চরিত্রে যে অভিনয় করেছে সেটে বলত, আমি না ভুল করতেসি। জলপাইগুড়ির ভাষা আমার ভালো লাগত। আমি বলতাম, কর ভুল, আমার ভালো লাগে।

ডাইনিপ্রথা বন্ধ হবে বলে মনে হয়— এর উত্তরে মিমি বলেন, হতে তো হবেই। যেদিন নারী-পুরুষ পুরোপুরিভাবে সমানাধিকার পাবে, সেদিন বন্ধ হবে। যেদিন ‘ফেমিনিজম’কে আলাদা ‘স্ল্যাং’ বলে ধরা হবে না, সেদিন বন্ধ হবে। কত রকম কথা। নারীরাই তো এই সমাজের খলনায়ক। আমরা এ রকম জামাকাপড় পরি বলে এটা হয়। আমার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে মানে আমার দোষ। অল্প বয়সে বিয়ে, তার পর স্বামীর মৃত্যুর পর আজীবন আমাকে ন্যাড়া হয়ে থাকতে হবে!

উপজাতি অঞ্চলে যদি কোনো পশুর মৃত্যু হয়, সেই সময় তোমার যদি কোনো অসুখ হয় সে জন্ডিস হোক বা সামান্য ঠান্ডা লাগা, তুমি ডাইনিই। বাড়ির বাইরে ওরা কিছু জিনিস ঝুলিয়ে রাখে। তুমি পানি নিতে পারবে না। কেউ একদিন বাড়ির বাইরে খাবার ছুড়ে দেবে দূর থেকে, যেন তোমার কোভিড হয়েছে।

আজ আমার ঋতুচক্রের প্রথম দিন। বিগত দুদিন ধরে ভালো করে ঘুমাতে পারিনি। এখন যদি আমি কোনো অনুষ্ঠানে ক্যামেরার সামনে কোনোভাবে অসন্তোষ প্রকাশ করে ফেলি, কেউ বুঝবে না আমার অসুবিধাটা। সবাই আমার ওই বিরক্তি প্রকাশটাকেই তুলে ধরবে।

অনেক শিক্ষিত নারীও তো বলেন— ছেলে তো একটু রাগী হবেই। রাগের মাথায় হাত উঠে গেছে।—এ বিষয়ে অভিনেত্রী বলেন, একদম! অনেক শিক্ষিত পরিবারেই শুনেছি— ছেলেরা তো একটু মারবেই। আমাকে মা একদিন বলছিল— আজকাল এত সংসার ভেঙে যাচ্ছে। আমি মাকে বললাম— মা সংসার ভেঙে যাচ্ছে না, মানুষ সঠিক দিকটা বেছে নিচ্ছে। আমার বাবা ভালো মানুষ তাই তুমি রয়ে গেছ। তোমার মতো আরও অনেকে রয়ে গেছে। কারণ তারা স্বাবলম্বী নয়। আজ আমাকে বেরিয়ে মা-বাবার বাড়িতে যেতে হবে না। আমি ভাড়াবাড়িতে থাকতে পারব। নিজের ছেলেমেয়েকে অন্য জীবন দিতে পারব। কারণ আমি পড়াশোনা করেছি, কাজ করি। আমি স্বাধীন।

অভিনেত্রী বলেন, একটা ঘটনা বলি— আমাদের পেছনে বিহারিপট্টিতে দেখি রোজ ঝামেলা হচ্ছে কোনো না কোনো পরিবারে। একদিন দেখি— এক নারীকে চড়, থাপ্পড় ও ঘুসি মারা হচ্ছে। অন্য লোকে গিয়ে বাঁচাচ্ছে। সেখানে ওই নারী বলছেন—আমার মরদ তো আমাকে মারবেই। আমি তো হাঁ!

সামাজিক মাধ্যমের প্রভাব রয়েছে বলে কি মনে হয়?—এমন প্রশ্নের উত্তরে মিমি বলেন, একেবারেই তাই। এই যে সামাজিক মাধ্যমে ট্রলিং ব্যাপারটাকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। কমেন্ট সেকশনে মেয়েদের গালাগাল করে। ধর্ষণের হুমকি দিয়ে চলে যায়। এ জন্যই আমি আমার ট্রলারদের আদালত পর্যন্ত টেনে নিয়ে গিয়েছিলাম। সবসময় উপেক্ষা করলে ওরা ভাবে যেটা করছে সেটা ঠিক। আর যারা এ ধরনের হুমকি দিতে পারে, তারা মনে করে কোনো মেয়ের হাত ধরে টানলে তাতে কোনো ভুল নেই। কোনো মেয়ের বুকের খাঁজের দিকে তাকানোটাও ঠিক। স্বাভাবিক ঘটনা হিসাবে দেখা হয় এই ঘৃণ্য কাজগুলোকে।

তিনি বলেন, আমি দুঃখিত সেই সব বাচ্চার জন্য, যারা এটা ভেবে বড় হয়েছে যে, নারীদের এগুলো বলাই যায়। ওরা যে পরিবেশে বড় হয়েছে, ওদের সংস্কৃতি নিয়ে আমি দুঃখিত। এই দেশটা কোথায় যাচ্ছে— এটা ভেবে আমি দুঃখিত।

মিমি নিজে কখনও এ ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন? অভিনেত্রী বলেন, আমি যখন এই শহরে এসেছিলাম, মা-বাবা, কাকা, দাদা কেউ ছিল না। আমি একাই এসেছিলাম। তখন কিন্তু পরিস্থিতি এ রকম ছিল না। কেউ একজন রাস্তায় পিছু নিলে অন্য চারজন তাকে রীতিমতো মার দিত। আমিই পিটিয়েছি কতজনকে!

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles