
প্রায় সতেরো দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন ভারতীয় এক শিক্ষার্থী সুদীক্ষা কোনাঙ্কি। কিন্তু এবার তার পিতা-মাতা চাইছেন মেয়েকে মৃত ঘোষণা করা হোক। সিএনএনকে উদ্ধৃত করে এনডিটিভি এ খবর জানিয়েছে। ডমিনিক প্রজাতন্ত্রে বসবাস করেন সুদীক্ষা কোনাঙ্কির পরিবার।
ডমিনিক প্রজাতন্ত্রেই গত ৬ মার্চ নিখোঁজ হন সুদীক্ষা। বর্তমানে তার খোঁজ চলছে।
ভার্জিনিয়ায় অবস্থিত লাউডউন কাউন্টি শেরিফের অফিস জানিয়েছে, ‘সুদীক্ষার পিতা-মাতা চান তাদের মেয়ে দুর্ঘটনাক্রমে পানিতে ডুবে মারা গেছে, এই ঘোষণা দেওয়া হোক। শোকাহত বাবা-মায়ের ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে তার মৃত্যুর বিষয়টি স্বীকার করে নিতে অনুরোধ করছি।
তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ডোমিনিকান কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভর করছে।
শেরিফ মাইক চ্যাপম্যান বলেছেন, তদন্তকারীরা মনে করেন, সুদীক্ষা সমুদ্রে ডুবে মারা গেছেন। কিন্তু তার মৃত্যুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়নি। মামলাটি এখনো খোলা রয়েছে।
ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের কর্তৃপক্ষ তাদের তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে এবং আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মৃতদেহ ছাড়া কাউকে মৃত ঘোষণা করা দেশটিতে একটি জটিল প্রক্রিয়া।
গত ৬ মার্চ ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের পুন্টা কানা সমুদ্রসৈকত থেকে সুদীক্ষা কোনাঙ্কি নিখোঁজ হয়েছিলেন। এর পর থেকে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়নি। সিএনএন কর্তৃক প্রাপ্ত একটি চিঠিতে সুদীক্ষা কোনাঙ্কির পরিবার বলেছে, আইনগতভাবে মৃত্যুর ঘোষণা তাদের মনকে বোঝাতে, শোক প্রকাশ করতে এবং এ সম্পর্কিত বিষয়গুলো সমাধান করতে সহায়তা করবে।
তদন্তকারীরাও মনে করছেন, সুদীক্ষা পানিতে ডুবে মারা গেছেন।
এ ছাড়া কেউ তাকে হত্যা বা গুম করেছে এমন তথ্য-প্রমাণ নেই। ফলে তিনি মারা গেছেন গণ্য করে আইনগতভাবে ঘোষণা দিতে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছেন তদন্তকারীরা।
অ্যাটর্নি জুলিও কুরির মতে, এ ধরনের ঘোষণার জন্য কংগ্রেস বা রাষ্ট্রপতির বিশেষ অনুমোদনের প্রয়োজন হবে। এ বিষয়টিতে সহায়তা করার জন্য পরিবারের সহায়তা চেয়েছে শেরিফ অফিস। তাকে মৃত ঘোষণা করতে হলে পরিবারের আর্থিক বিষয়গুলো যেমন- কলেজে সেভিংস পরিকল্পনা এবং ইনস্যুরেন্স পলিসি সমাধান করতে হবে। যতক্ষণ মৃত্যু সনদ ইস্যু না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এ বিষয়গুলো আইনগতভাবে আটকে থাকবে। লাউডাউন কাউন্টি শেরিফের অফিস পরিবারটিকে এই প্রক্রিয়া চালিয়ে নিতে সহায়তা করার প্রস্তাব দিয়েছে।
মঙ্গলবার ফক্স নিউজকে দেওয়া এক আবেগঘন সাক্ষাৎকারে কোনাঙ্কির বাবা বলেন, ‘গভীর দুঃখ এবং ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমরা জানাচ্ছি যে আমাদের মেয়ে ডুবে মারা গেছে। এটি আমাদের পক্ষে মেনে নেওয়া অবিশ্বাস্যরকম কঠিন।’
পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সুদীক্ষা কোনাঙ্কি ৩ মার্চ তার পাঁচ বন্ধুর সঙ্গে পুন্টা কানায় পৌঁছেন। সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, তিনি রিউ রিপাবলিকা হোটেলের বারে মদ্যপান করছেন। ওই বন্ধুদের দলে যোশুয়া রিব নামে এক ছেলে বন্ধুও ছিলেন। এরপর দলের সঙ্গে সমুদ্রসৈকতের দিকে যান সুদীক্ষা। ভোর ৪টা ১৫ মিনিটে ক্যামেরায় ধরা পড়ে দলটি সমুদ্রসৈকতে প্রবেশ করছে। এরপর ভোর ৫টা নাগাদ দেখা যায়, কোনাঙ্কি ছাড়া বাকি সবাই ফিরে আসছে।
ঘটনার পর ডোমিনিকান রিপাবলিকের কর্তৃপক্ষ রিবের পাসপোর্ট জব্দ করেছে। রিবের সঙ্গে কোনাঙ্কিকে শেষবারের মতো দেখা গিয়েছে। তাকে ছয় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, তবে তাকে সন্দেহভাজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি। তবে চতুর্থ সাক্ষাৎকারে রিবে ঢেউয়ের ধাক্কায় তাকে উদ্ধারের ব্যর্থ প্রচেষ্টার কথা বর্ণনা করেছেন। গত বুধবার ২২ বছর বয়সী আইওয়ার এই বাসিন্দাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তার পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষের কাছে রয়ে গেছে।
মিনেসোটার সেন্ট ক্লাউড স্টেট ইউনিভার্সিটির ছাত্র রিবে বলেছেন, কর্তৃপক্ষ তাকে কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ছাড়াই আটক করেছে এবং তদন্তের সময় তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়েছে। তবে তদন্ত চলছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ডোমিনিকান উভয় কর্তৃপক্ষই এটিকে ফৌজদারি মামলার পরিবর্তে নিখোঁজের মামলা হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে।
সূত্র : এনডিটিভি