
বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ার কারণে নিজের প্রেমিকই তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ গুমের চেষ্টা করেছিল প্রেমিক নয়ন বড়ুয়া (৩০)। ঘাতক সেই প্রেমিককেও রোববার পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই জানিয়েছে, হতভাগী এই নারীর নাম জোৎস্না বেগম। তার বাড়ি নোয়াখলীর কবিরহাট উপজেলায়। চট্টগ্রামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয় জ্যোৎস্নার লাশ। উদঘাটন করা হয়েছে এই নারীর হত্যা রহস্যও। গ্রেফতার নয়ন বড়ুয়া রাউজান পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম গহিরা এলাকার জয় কুমার বাড়ির মিলন বড়ুয়ার ছেলে এবং দুই সন্তানের জনক।
এর আগে গত শনিবার সন্ধ্যায় নগরীর পাঁচলাইশ থানার মুরাদপুর ফ্লাইওভারের নিচ থেকে জ্যোৎস্নার লাশ উদ্ধার করে খুলশী থানা পুলিশ।
পিবিআই জানায়, নয়ন বড়ুয়া ও জোৎস্না বেগম কেডিএস গ্রুপের একটি পোশাক কারখানায় কর্মরত ছিলেন। একসঙ্গে কাজ করার ফলে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত মাসে নগরীর ইপিজেড থানার বন্দরটিলা এলাকার আয়েশা মায়ের গলির কামাল ম্যানসনের নিচতলায় তারা নিজেদের স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে এক কক্ষের একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছিলেন। নয়ন তার আগের বিয়ে ও দুই সন্তান থাকার তথ্য গোপন করে জোৎস্না বেগমের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। একপর্যায়ে নয়ন বড়ুয়াকে ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করার জন্য চাপ দিতে থাকেন জ্যোৎস্না। কিন্তু তখন নিজের স্ত্রী ও সন্তান থাকার কথা প্রকাশ করেন তিনি। একইভাবে নয়ন ধর্মান্তিরত হতে পারবেন না বলেও জ্যোৎস্নাকে জানিয়ে দেন।
এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয় এবং একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে জোৎস্নাকে গলাটিপে হত্যা করেন নয়ন।
যেভাবে গ্রেফতার ঘাতক
শনিবার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধারের পর জ্যোৎস্নার বোন তৈয়বা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে খুলশি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো বিভাগের কর্মকর্তারা মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করেন। তথ্যপ্রযুক্তি ও মোবাইল ফোন কলের সূত্র ধরে চান্দগাঁও এলাকার মোহরা থেকে নয়ন বড়ুয়াকে গত রোববার গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর পিবিআই নগরীর ইপিজেড থানা থেকে লালখানবাজার পর্যন্ত সড়কের একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ উদ্ধার ও পর্যালোচনা করে।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে নিশ্চিত হয় যে, ইপিজেড এলাকার বাসায় জ্যোৎস্নাকে গলাটিপে হত্যার পর নয়ন বড়ুয়া তার লাশ প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে কম্বল পেঁচিয়ে দড়ি ও ওড়না দিয়ে বেঁধে কতটা পথ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে, আবার কতটা পথ সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে এনে লালখান বাজার এক্সপ্রেসওয়ের নিচে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পুলিশ পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিয়ে করতে চাপ দেওয়ায় প্রেমিক নয়ন বড়ুয়া প্রেমিকা জোৎস্না বেগমকে গলাটিপে হত্যা করে বলে স্বীকার করেছেন। তাকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তার স্ত্রী দুই সন্তানকে নিয়ে গ্রামে বসবাস করেন।