3.7 C
Toronto
সোমবার, মার্চ ৩১, ২০২৫

শ্রদ্ধাঞ্জলী : সনজীদা খাতুন

শ্রদ্ধাঞ্জলী : সনজীদা খাতুন - the Bengali Times
শ্রদ্ধাঞ্জলী সনজীদা আপা

শ্রদ্ধাঞ্জলী সনজীদা আপা। আমার সৌভাগ্য আপনার  আত্মজীবনী মূলক বই দুইটির প্রচ্ছদ আমি করে ছিলাম। গত কয়েক বার যতবারই বাংলাদেশে গিয়েছি মনেমনে ভেবেছি আপনার সাথে দেখা করে বই দুইটিতে সই করিয়ে সাথে একটি ছবি তুলবো। দেরি হয়ে গেলো,আর হবেনা। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসার পর বাড়তি কিছু টাকা প্রাপ্তীর জন্যে সেবা প্রকাশনীর মাসুদ রানা আর ওয়েস্টার্ন বইয়ের রঙ্গিন মেগাজিনের ছবি ছিড়ে ধুমসে কোলাজ কাভার করতাম। আপনার অনুজ

কাজী আনোয়ার হোসেন কাজ শেষে টাকা দিতে দেরি করতেন না। সেগুন বাগিচায় আপনার বাবা কাজী মোতাহার হোসেনের তৈরী সেই লাল রঙের দোতলা বাড়িতে আনোয়ার ভাই আপনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে ছিলেন। তিনি আমাকে তুমি করে বল্লেও আপনি মাঝেমধ্যে যে কয়েকবার দেখা হয়েছে আমাকে আপনি করে বলেছেন। একটি ছোট্ট ঘটনা বলে শেষ করি। নবযুগ প্রকাশনীর প্রয়াত অশোক নন্দী রায় আমার করা প্রচ্ছদ আর আমার কিশোরদের জন্যে লেখা খুব পছন্দ করতেন। একবারতো প্রায় জোর করে তিনি লেখালেন ‘শহুরেমানুষ পাহাড়ীমানুষ’ তড়িঘড়ি করে আমাকে দিয়ে প্রচ্ছদ করিয়ে ছেপে জমা দিলেন সরকারী ৩ হাজার বই কেনা প্রকল্পতে। অবাককান্ড বইটি সিলেক্ট ও হয়েছিলো। বেশ অনেক টাকা আমার হাতে তুলে দিয়ে অশোক নন্দী রায় মিষ্টি করে মৃদু হেসে ছিলেন। সনজীদা আপার বই দুইটির প্রচ্ছদ করতে অশোকই আমাকে দিয়ে ছিলেন,নবযুগের বই বলে। ছায়ানটের এক বড় অনুষ্ঠান দুইদিন পর তার আগেই আপার ‘ প্রভাতবেলার মেঘ ও রোদ্র’ চাই। কোনো সমস্যা নেই ৫০০ কপি রেডি ১৬ কপি করে ব্রাউন পেপারে প্যাক করা রয়েছে। অশোক নিজেই যাচ্ছেন বই ডেলিভারী করতে। আমিও সঙ্গ নিলাম। সনজীদা আপার ফেসিয়াল এক্সপ্রেশান খুবই দুর্বল।

- Advertisement -

বাইরে থেকে বোঝা যায়না ওনার সুখ দুঃখ খুশির ভাবান্তর মুখে। তবু আমি বুঝলাম তিনি বেশ খুশি হয়েছেন। প্যাকেট ছিড়ে তাজা বই হাতে নিয়ে বল্লন প্রচ্ছদ ভালো লেগেছে। পাখির পেইন্টিং টি কি মুর্তজা বশীরের?? আমি বিনয়ের সাথে বল্লাম – না আপা,আমার সোলবার্ড সিরিজের পেইন্টিং। এর পরেই তিনি রেগে গেলেন। আমি ভয় পেয়ে গেলাম আমার করা প্রচ্ছদে নিজের পেইন্টিং এর প্রতিচ্ছবি ব্যবহারতো অন্যায় কিছুনা! একটু পরে বুঝলাম তিনি রেগেছেন সনজীদার নয়ের নিচে হসন্ত নেই তাই! আমারই ভুল। বইয়ের শিরোনামের নিচে ওনার নামে হসন্ত মিস!  অশোক কাচুমাচু হয়ে বল্লেন- সরি আপা।তবে দুই দিনে নতুন করে চার রঙা প্রচ্ছদ ছেপে শুকানোর সময় দিয়ে আবার ৫০০বই বাইন্ডিং করা সম্ভব হয়ে উঠবে না।

আমি আগবাড়িয়ে বলে উঠে ছিলাম – হয়ে যাবে আপা এবং ভালো ভাবে হবে।টেকনিকটা আমি কানাডায় শিখেছি। অশোকের চোখ দিয়ে আগুন বেরিয়ে আসছে,কেন আমি ওনার সঙ্গে এই মিথ্যা প্রমিস করছি বলে ! বেরিয়ে এসে অশোক বল্লেন-যে ফাজলামীটা করলেন ইকবাল আপা জীবনে আর আমার মুখ দেখবেন না! আমি বল্লাম চলেন বইগুলোর প্যাকেট নিয়ে আপনার প্রকাশনী অফিসে যাই। ওনার কর্মচারী দুই তরুণ মার্কার দিয়ে ছবিটবি আঁকতো। আমি গেলে দেখিয়ে খুশি হতো। তাদের নিয়ে মিডিয়াম তিনটি কালো মার্কার নিয়ে বসলাম স্বযতনে হসন্ত দিতে লাগলাম। ঘন্টা-ঘন্টা অশোক কফি সরবরাহ করে গেলেন। গোটা রাত কাজ করার পরিকল্পনা ছিলো,মাত্র সাড়ে চার ঘন্টায় কাজ শেষ। হাত নড়ে মাত্র ৬টি বইয়ের হসন্ত বসন্ত হয়ে গেছে অর্থাৎ নষ্ট বাকি সব বইয়ে সনজিদার ন-য়ের নিচে পার্ফেক্ট হয়েছে হসন্ত। দুইদিনের মধ্যে সব বই নিয়ে ভয়ে ভয়ে আবার প্যাকেট করে আপাকে দিতে গেলেন অশোক।

সঙ্গে আমাকে ও নিতে চেয়ে ছিলেন। আমি গেলামনা। যাওয়ার আগে অশোক নন্দী রায় বলে গেলেন আপার কাছে যদি ধরা খাই জীবনে ইকবাল আপনার মুখ দেখবোনা! রবীন্দ্রসঙ্গীতের তালসুরকথায় এক চুল এদিক ওদিক হলে সনজীদা খাতুন ধরে ফেলেন কিন্তু তিনি টেরই পেলেন না ওনার প্রিয় হসন্ত হাতে দেয়া। অবশ্য আমার জীবনে সনজীদা নামে হসন্ত দেয়া আর কাউকে পাইনি। যাক মুুখ দেখা দেখির ব্যাপারটি আর না হলেও দুর্ভাগ্য আজ প্রিয় অশোক নন্দী রায় কিংবা শ্রদ্ধেয়া সানজীদা আপা কারো জীবন্ত মুখ আর দেখা হবেনা আমার। অবশ্য কেউ যদি আমার বৃদ্ধ মুখ দেখতে চান সেটি এখনো সম্ভব। * সানজীদা আপার আত্মার কাছে ক্ষমা চাই এই লেখায় অভ্র ফন্টের জটিলতা কিংবা আমার অক্ষমতায় সনজীদার ন এর নিচে হসন্ত দিতে পারিনি বলে।

 

স্কারবোরো, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles