
যাদের ঘড়ি থেমে গেছে। রাত আর দিনের মধ্যে তফাৎ নেই। ঘুম বা জেগে থাকার মাঝে পার্থক্য খুঁজে পায় না। জীবন-মরনের মাঝেও নেই কোনো বিশেষ তফাৎ। নিজ বাচ্চাদের কবরের পাশে গেলে নিজেকে আর জীবিত মনে হয় না। সবকিছু আপেক্ষিক। শুধু জানে যাবার কোনো জায়গা নেই। পালানোর বেঁধে দেয়া সময়ের আগেই বোমা পড়ে। সিংহ যেমন হরিণ শাবককে নিয়ে রসিয়ে রসিয়ে খেলা করে শেষে মেরে ফেলে, হুবুহু সেরকম। দুঃস্বপ্নের চাইতেও ভয়ংকর এক বাস্তবতা! রাক্ষুসে বিকৃত এক মশকরার মাঝে জীবন।
যাদের শেষ ভরসা পরকাল।
সিংহের দল যখন নিরস্ত্র অসহায় মানুষকে পেয়ে আক্রমণ করে, তখন সেটাকে কি যুদ্ধ বলে? যুদ্ধ হতে হয় একই প্রজাতির মধ্যে, নিয়ম মেনে। তারা মানুষ মারে গায়ের জোড়ে। নির্বোধ পশুর মতো। যুদ্ধ বিরতিও মানে চরম ধোকা; ভণ্ডামি। তারা দুই দোস্ত স্বপ্ন দেখে গাজায় বানাবে বিলাসবহুল শপিং সেন্টার, আমোদ-প্রমোদের তীর্থস্থান। তাই তারা হাসি মুখে সাধারণ নিরস্ত্র জনগনের বাচ্চা, মহিলা, পুরুষ সবাইকে মারছে পিঁপড়ার মতো।
উড়ে এসে জুড়ে বসা অদ্ভুত এক লোভীর দল!
না মারলে ফিলিস্তিন বীরের জাতকে কখনো উৎখাত করা সম্ভব নয়। ভয় দেখিয়ে, মেরেও তাদের তাড়ানো যায় না; এতটাই অবিশ্বাস্য সাহস তাদের! জানে মেরে ফেলাটাই তাদের শেষ প্রচেষ্টা আর সহজ সমাধান।
একটা নবজাতক শিশুকে বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়া যুদ্ধ নয়। বাচ্চার শরীর ছিন্নভিন্ন কর ফেলা যুদ্ধ নয়। এটা হলো কাপুরুষতার নিকৃষ্টতম উদাহরণ; যা মানব ইতিহাসে এতোটা কখনো দেখা যায়নি।
শয়তানী বুদ্ধি বের একটা কঠিন কিছু নয়, আপনাআপনি ধরা দেয়। কঠিন হলো মানুষের মতো আচরণ করা। মানুষ হওয়া সহজ নয়। প্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকা মানেই উন্নত জাতি নয়। শক্তি আর প্রজ্ঞা এক জিনিস নয়। আমি কখনো ইসরাইলীদের বুদ্ধিমান জাতি বলবো না।
ফিনিস্তিনীরা কেন প্রকৃত বীরের জাতি?
তারা একা আমেরিকা আর ইসরাইলীদের সাথে মোকাবেলা করছে। সারা মুসলিম বিশ্ব হা করে দেখছে, স্বার্থ নিয়ে ভাবছে। একজন মুসলমান হিসাবে নয়, একজন মানুষ হিসেবে এ লজ্জা ঢাকবার কোনো উপায় নেই, চেষ্টাও করি না।
শুধু ইসরাইল একা কখনোই পেরে উঠতো না প্যালেস্টাইনীদের সাথে; যদি না আমেরিকা তাদের পাশে থাকতো। আমেরিকা ব্রিটেন সাথে আছে বলেই ইসরাইল টিকে আছে। এভাবে আর কতদিন টিকে থাকতে পারবে তারা? ভিতুরাই এভাবে মানুষ মারে, আর কোনো যোগ্যতা তাদের নাই।
আমরা তাঁদের জন্য কিছু করতে পারছি না। সেরকম সাহস বা শক্তি আমাদের নেই। থাকলে এতদূর গড়াতো না। তবে সারা বিশ্বে অভূতপূর্ব প্রতিবাদ চলছে, দেরিতে হলেও। বাংলাদেশের সব ধর্মের মানুষ তাদের জন্য প্রতিবাদ করছে, রাস্তায় নেমে একাত্মতা ঘোষণা করছে, পন্য বর্জন করছে। আমরা মানবতার পাশে সবসময় থাকবো। কোনো প্রতিবাদই বৃথা যায় না। কোনো একটা দেশকে চাপে ফেলবার মোক্ষম উপায় অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করা।
ফিলিস্তিনীরা সবসময় জিতে থাকা জাতি। আমৃত্যু জিতেই থাকবে। শহীদেরা মৃত্যুকে ভয় পায় না। বিজয়ীর বেসেই থাকবে ইতিহাসে। বিশ্বের সবচাইতে বড়ো দুই পরাশক্তি এক হয়েও ফিলিস্তিনীদের মাতৃভূমি থেকে তাড়াতে পারেনি। কী অদম্য সাহস, কী অবিশ্বাস্য ভালোবাসা মাতৃভূমির প্রতি!
বেঁচে থাক তাঁরা, বেঁচে থাক পবিত্র মাতৃভূমি।
মহান সৃষ্টিকর্তা তাঁদের সহায় হোন।
অটোয়া, কানাডা