
অনেকেই মনে করতেছেন হেডিংয়ের ভাষ্য মতে হিরো অফ দ্যা বিশ্ব আমি ট্রাম্পকে বলতেছি তাই না? না, একদম না। হিরো হন কে? গায়ের জোরে, ক্ষমতার জোরে যিনি সবকিছু পদদলিত করেন তিনি? একদম না। ট্রাম্পকে বিশ্বের নাটের গুরু মানা হলেও তিনি বিশ্বের হিরো না। তিনি বিশ্বের অন্তরের শুল্কের আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। বিশ্ব এখন জ্বলছে।
আপনারা জানেন যে, অলমোস্ট এ্যাভরি কান্ট্রিতে ট্রাম্পের 10%থেকে 50% পর্যন্ত শুল্ক আরোপে বিশ্বে চলছে বিশ্ব রেকর্ড করা গোলযোগ। তাহলে এই গোলযোগ বাধানোর মহানায়ক ট্রাম্পের আমেরিকা কী গোলযোগের বাইরে থাকবে? না, একদম না। অলরেডি আমেরিকার শেয়ার মার্কেট “মেল্টডাউন” হয়ে গেছে। আপনারা যারা নিয়মিত শেয়ার মার্কেটের খবর দেখেন তারা জানেন। আমেরিকাতেও পায়ের জুতা থেকে শুরু করে পরনের প্যান্ট, গরুর দুধ থেকে শুরু করে ঘি-মাখন-চিজ, ভিডিও গেইম থেকে শুরু থেকে দুধের শিশুর খেলনার পর্যন্ত দাম কাস্টমারের নাগালের বাইরে।
হ্যাঁ, ট্রাম্প জোর জবরদস্তি করে যেসব দেশে শুল্ক দিয়েছেন সব দেশেই সবকিছুর দাম বেড়েছে। চলছে চাকরিশূন্যতা। তাই বলে কী সেই দেশগুলো বসে আঙ্গুল চুষতেছে? না, একদম না।
চানয়াকে তো আপনারা চেনেন। আমি বলব পৃথিবীর মধ্যে এই দেশটা কাউকেই তোয়াক্কা করে না। উল্টো আমেরিকা-কানাডার ব্যবসা লাটে উঠে যদি চায়না বিগড়ে যায়।
সেই চায়নাকে আমেরিকা বড়ো মাপের শুল্ক বসাইয়া দিলে চায়না কিন্তু দুদণ্ড সময় নেয় নি উল্টো আমেরিকার গালে চড় বসাতে। আমেরিকার পণ্যের ওপরে চায়না কড়া শুল্ক বসাইয়া দিছে। কাউকে চড় বসাইতে চায়না আগে-পিছে ভাবে না।
এখন যারা ট্রাম্পের সাপোর্ট নিয়ে বলতেছেন, ট্রাম্প হলো গিয়ে সারা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কে লাল বাতি জ্বালিয়ে নিজের দেশের ওপর নির্ভরশীল হবেন, সব ধরণের ব্যবসা-বাণিজ্য একেবারে তিনি ধরেন নিজের দেশেই করবেন তাই তো? হ্যাঁ, তা তিনি কিছুটা পারবেন। কিন্তু সম্পূর্ণভাবে করতে গেলে একশো বছর সময় লাগবে, অন্যদিকে সবকিছু করাটাও অনেকটা সাধ্যের বাইরে বলে আমেরিকার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। সারা বিশ্ব কী করতেছে জানেন? Hands off protest.
সুতরাং, আমেরিকাসহ সারা বিশ্বে যিনি এই নানান গোলযোগ বাধাচ্ছেন তিনি আর যাই হন, হিরো অফ দ্যা বিশ্ব হতে পারেন না।
তাহলে হিরো অফ দ্যা বিশ্ব কে?
এক কথায় উত্তর হলো ড. মোহাম্মদ ইউনূস। এই মানুষটার জন্ম যেদেশে হয়েছে সেটা হলো আমাদের দেশ বাংলাদেশেই।
এই মানুষটার পরিচিতি, কদর, সম্মান, ভ্যালু যা কিছুই বলেন সর্বোচ্চভাবে কোন দেশে নেই বলেন?
আমি যখন প্রথম কানাডায় আসি, টরন্টোতে আরকি সেই সময়ে তো ধরেন নতুন ছিলাম। ট্রেনে করে বিভিন্ন সাবওয়ে হয়ে এদিক-সেদিক যেতাম। তো একদিন যখন একটা সাবওয়েতে নামলাম মনে নেই ঠিক কোন সাবওয়েটা তবে এটা ডাউনটাউনে হবে আমার তো ভালোলাগায় মনটা ভরে গেল দেখে। সাবওয়ের মধ্যে দেওয়ালে বিশাল বড়ো করে ড. ইউনূসের ছবি আঁকানো। আমি পাশে গিয়ে ছবি তুললাম। এখনো আছে ছবিটা।
শুধু তো তাই না। রীতিমতো কানাডার গ্রেড সেভেনের পাঠ্যবইয়ে ড. মোহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে একটা চ্যাপ্টার বা অধ্যায় লেখা হয়েছে। এটা কী কম গৌরবময়?
উনিই তো হিরো অফ দ্যা বিশ্ব। কীভাবে দেখেন। ওনার কথায় বিশ্ব কতোটা গুরুত্ব দেয় তা তো আপনারা দেখেছেন চায়না সরকার যেভাবে দেখিয়েছে।
ড. ইউনূস হলেন ঝগড়া বাধানোর তালে নেই। কীভাবে ঠান্ডা মাথায় ঘোরতর শত্রুকেও বসে আনা যায় তাও তিনি নজির দেখিয়েছে। তিনি সবার সঙ্গে সমঝোতা করে চলবেন কিন্তু নিজের দেশের স্বার্থকে এক পয়সা ছাড় দিয়ে না।
আপনারা অলরেডি দেখেছেন তিনি সম্প্রতি ভারতের সেভেন সিস্টার নিয়ে একটা বক্তব্য দিয়েছেন। ব্যাখ্যা করেছেন আরকি। তাতে তেলে-বেগুনে ফুলছে ভারতের সমস্ত মূখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে বাংলাদেশের প্রাক্তন ভারতীয় হাইকমিশনার ভিনা সিক্রি পর্যন্ত।
কেন ড. ইউনূসকে হিরো অফ দ্যা বিশ্ব বলবেন?
আচ্চা ঠিক আছে, বেশিদিন পেছনে যাওয়া লাগবে না। দুই দিন আগের ঘটনায় আসেন। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে গিয়ে তিনি নানা রকম সুখবর নিয়ে এসেছেন বাংলাদেশের জন্য।
সেসব কী?
১. মোদির সঙ্গে ড. ইউনূস বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন। হাসিনার ফেরত দেওয়ার কথাও বলেন মোদির কাছে। তাছাড়া মোদি ও তাঁর প্রশাসন যেভাবে ড. ইউনূসকে দেকে উঠে দাঁড়িয়ে হাতজোড় করে নমস্কার জানিয়ে সম্মান দেখিয়েছেন তা তো আপনারা দেখেছেন। বড়োই চমৎকার দৃশ্য!
২. আগামী দুই বছরের জন্য বিমসটেকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছে বাংলাদেশ। থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা ড. ইউনূসকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন।
এবার আসেন ৩ নম্বারে কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খবরে। সেটা হলো, প্রথম ধাপে মিয়ানমার ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়া যোগ্য বলে বিবেচনা করেছে।
হাসিনা এসব রোহিঙ্গাকে এনেছিলেন আর ফেরত পাঠাতে পারেন নি তাঁর ষোল বছরের শাসনামলেও।
যাই হোক, একটা বিষয় লক্ষ্য করবেন. ড. ইউনূস দেশকে গুছিয়ে দিতে চান অথচ গদিতে থাকার কোনো লালসা নেই।
অন্যদিকে সব রাজনৈতিক দলগুলোকেই গদি থেকে নামাতে একেকটা গণঅভ্যুত্থান ঘটাতে হয়। তারপর যেদল থাকে সেদল তো খায়ই, আরেকদল খাওয়ার জন্য হিংস্র হয়ে থাকে। খাওয়া-খাইয়ির মধ্যেই চলে আরকি।
সুতরাং দেশে নতুন কেউ পরিচালনায় আসুক, পুরোনো সিস্টেম একটু বন্ধ থাকুক। ড. ইউনূসকে ছাড়বেন না। আরো কিছু গুছিয়ে নেন। তিনি হলেন হিরো অফ দ্যা বিশ্ব।
আল্লাহ আপনাদের সুস্থ রাখুন।
টরন্টো, কানাডা