
বলা হয় অতি আয়োজনের কোনও কিছুই পরিকল্পনা মাফিক যায় না। এবারের ঈদের অবস্থা হয়েছে অনেকটি এরকম। প্রবাস জীবনের ধূসর একাকী বছরগুলোতে সবচেয়ে ভয়ংকর দিন হল এই ঈদের দিন। এমনি দিনেই একলা থাকাটা যন্ত্রণাদায়ক আর এই ঈদের দিনে সেই যন্ত্রণা তার সকল সঙ্গী সাথী পশু পাখি নিয়ে আসে। আর যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায় আহ্লাদী আন্টিরা পরিবার নিয়ে চটকদার জামা লাগিয়ে পৃথিবীর সকল চর্ব্য চোষ্য লেহ্য পেয় দিয়ে টেবিল সাজিয়ে ঈদের চূড়ান্ত করছেন তখন মনের মধ্যে হিংসার পোড়া গন্ধ পাওয়া যায় বৈকি।
আর তাই আমার মত একলা মানুষ বেছে বেছে এই যন্ত্রণাদায়ক ঈদের দিনগুলো কাজ কর্ম অফিস কামলা দিয়ে ভরে রাখতাম। তবে এবারের ঈদ এবং এর প্রস্তুতি ছিল অন্যরকম। এবার ঈদে ছুটি ছিল, সাথে পরিবার ছিল। অনেক মানুষ হয়ত ছিল না কিন্তু সোনার ময়না পাখির মত মানুষগুলো ছিলো। কিন্তু বিধি বাম। ঈদ এলো ধূসর মেঘের ডানায় চেপে। সেই সাথে নিয়ে এলো ঝড়।আশেপাশের সবার মাথা নষ্ট। বৃষ্টিকে বকা দিলো।
আমার কিন্তু বৃষ্টির এই দিন কটা খুব চমৎকার লাগল। সবার মেজাজ খারাপ লাগলেও আমি মনে মনে গোপনে বৃষ্টির প্রতিটা ফোটা খুব খুব উপভোগ করেছি।
বৃষ্টি- বৃষ্টি মনকে কবিতাময় করে তোলে। যে মানুষ জীবনে কবিতা বোঝে না, সেও মনের অজান্তে উদাস হয়। বৃষ্টি নিয়ে আসে নস্টালজিয়া। মনে পড়ে পুরাতন কত মুখ। কারনে অকারনে হারিয়ে যাওয়া কত মানুষ।
যান্ত্রিকতার আমাদের এই শহরের মানুষে মানুষের সম্পর্কগুলো কেমন যেন সোনালী বালির দানার মত। যতই যত্ন করে আঁকড়ে ধরে রাখতে চাই আঙুলের ফাঁক গলে কখন বের হয়ে যায়। এমনও হয় যে মনে হয় মানুষটা পাশেই আছে, আমারই আছে, বন্ধুটি আমারই আছে, মুঠোফোনের ছোট্ট একটা টুং শব্দতেও আগের মতোই ছুটে আসবে আমার কাছে। হঠাৎ দেখা যাবে জীবনের মানচিত্র থেকে কখন যে মুছে গেছে বুঝতেও পারিনি।
তবু সৃষ্টিকর্তার অসীম দয়া আমাদের কাছে নিয়ে আসে আরও কত মানুষ। তারা আসে, হৃদয় রাঙিয়ে দেয়। জীবনের নতুন কত দিক তুলে ধরে। তুষারকনার মত প্রতিটা মানুষই তার নিজস্ব সৌন্দর্য নিয়ে আসে। এটা আমাদের উপরে নির্ভর করে আমরা কেমন করে মানুষদের মধ্যে থেকে সবচেয়ে ভালো বিষয়গুলো বের করে আনতে পারবো ।
আমার ঈদ আমাদের মতো করে চমৎকার ছিল। আশা করি সবার ঈদও যার যার মত করে সুন্দর হবে।
টরন্টো, কানাডা