ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশে ছেড়ে পালিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আশ্রয় নিয়েছেন পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। ওই দিন থেকে এখন পর্যন্ত সেখানেই আছেন তিনি। শুধু দলের সভাপতি নয়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বা প্রভাবশালী নেতাদের অনেকেই এখন ভারতে। দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েও বিলাসবহুল জীবনযাপন আর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে পিছিয়ে নেই আওয়ামী লীগের পলাতক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা। কলকাতায় গড়ে তুলেছেন নতুন ঘাঁটি, যেখানে প্রতিদিনই চলছে গোপন বৈঠক আর নানা পরিকল্পনা। একঝলকে দেখে নেওয়া যাক কলকাতায় গড়ে ওঠা এই ‘আন্ডারগ্রাউন্ড সদর দপ্তরের’ নানা দিক।
দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েও রাজনৈতিক কার্যক্রম আর বিলাসী জীবনযাপনে মত্ত আওয়ামী লীগের পলাতক মন্ত্রী এমপিরা।
এসব চলছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা থেকে। ইতোমধ্যে কলকাতার রোজডেল গার্ডেন পরিণত হয়েছে আওয়ামী লীগের সদর দপ্তরে। সেখান থেকেই নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা দলের নেতাকর্মীদের। নেওয়া হচ্ছে ডক্টর ইউনুস সরকারকে হঠানো আর দেশকে অস্থিতিশীল করার গোপন পরিকল্পনা।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক বরাবরই নির্ভর করে এসেছে আওয়ামী লীগের উপর।কারণ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে ভারত যতটা পায়, ততটা চিন্তাও করা যায় না অন্য কোন দলের শাসনামলে। এ ক্ষেত্রে পলাতক শেখ হাসিনার মতো এতটা উদার কেউ হতে পারেনি। তাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কটা বরাবরই মধুর।
৫ আগস্টের আগে ও পরে শেখ হাসিনাসহ পালিয়ে যাওয়া শতাধিক মন্ত্রী, এমপি ও নেতাকর্মীকে আশ্রয় দিয়েছে ভারত। সেখানে নিজ দেশের মতোই আরাম-আয়েশের জীবনযাপন করছেন তারা। কেউ কেউ সঙ্গে নিয়েছেন স্ত্রী-সন্তানকেও।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল কলকাতার নিউটাউন আবাসিক এলাকার অভিজাত কমপ্লেক্স রোজডেল গার্ডেনের দুটি ফ্লোর কিনেছেন।
ভবনটির ১১ তলার ১১সি ফ্ল্যাটে বর্তমানে বসবাস করছেন তিনি। আর এই ভবনের নিচতলায় নেওয়া আরেকটি ফ্ল্যাটে চলছে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম। প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কলকাতায় আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন আসাদুজ্জামান খান কামাল।
ডক্টর ইউনুস সরকারকে অস্থির করার নানা পরিকল্পনা আসছে তার মাথা থেকেই।জানা গেছে, নিউটাউন এলাকার একটি অভিজাত ফ্ল্যাটে স্ত্রীকে নিয়ে থাকছেন সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তবে অন্যান্য মন্ত্রী এমপিদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন না তিনি। মাঝে মাঝে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যাওয়া ছাড়া বাসাতেই অবস্থান করছেন আওয়ামী লীগের এই সাধারণ সম্পাদক।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবীর নানকও স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সংসার পেতেছেন কলকাতায়।বাসা ভাড়া নিয়ে সস্ত্রীক বাস করছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফও। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাসিমও স্ত্রীকে নিয়ে কলকাতার নিউ মার্কেটের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বাসা ভাড়া করে বসবাস করছেন।
এছাড়া আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, সাবেক উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, সাবেক সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি অপু উকিলও কলকাতায় বসবাস করছেন বলে জানা গেছে।
“নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে কলকাতায় আরো আছেন আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সাবেক সংসদ সদস্য আওলাদ হোসেন ও সাবেক মন্ত্রী ডা. দীপু মনির ভাই টিপু।
এছাড়া ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সহযোগী সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মী রয়েছেন কলকাতায়।
সূত্র জানায়, কলকাতায় থাকা এসব মন্ত্রী, এমপি ও নেতাকর্মীরা ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে অংশ নিচ্ছেন, দেখা করছেন একে অপরের সঙ্গে।কলকাতাকে হেডকোয়ার্টার হিসেবে ব্যবহার করে ফেসবুক, মেসেঞ্জার, টেলিগ্রাম, সিগনালসহ বিভিন্ন ডিজিটাল এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করছেন।
৫ আগস্ট রাজনৈতিক পথ পরিবর্তনের পর কলকাতায় আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগের এসব মন্ত্রী-এমপিরা প্রতিনিয়ত ডক্টর ইউনুস সরকারকে অকার্যকর করে নিজেদের ফিরে আসার পথ সুগম করতে পরিকল্পনা করছেন।
রাজনৈতিক পালাবদলের পর আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতার কলকাতায় আশ্রয় নেওয়া এবং সেখান থেকে গোপন রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানোর খবর নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। রোজডেল গার্ডেন এখন যেন পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের রাজনীতির আরেকটি ‘সেন্টার অব কমান্ড’-এ।