
টিভি সাংবাদিক: ভাই, এই বিজয়দিবসের ছুটিতে আপনি কী করলেন?
পথচারী: আমি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে গিয়েছিলাম
টিভি সাংবাদিক: একা গিয়েছিলেন নাকি পরিবারকে সাথে নিয়ে?
পথচারী: পরিবারকে নিয়েই গিয়েছিলাম। আমি আমার স্ত্রী আর আমার মেয়ে সায়মা
টিভি সাংবাদিক: ওকি আপনার মেয়ে নাকি আপনাদের দুজনের মেয়ে
পথচারী: জী আমাদের মেয়ে সায়মা। সাগরের পানিতে সাতার কাটতে চেয়েছিল। বিরাট বিরাট ঢেউ তো তাই পারে নাই। তবুও খুব মজা করেছিল। টাকা পয়সা কিছু না বুঝলেন ভাই, ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতই আসল।
টিভি সাংবাদিক: আপনার মেয়ের বয়স কত, মানে সে কি স্কুলে পড়ে?
পথচারী: ওর বয়স বারো বছর
টিভি সাংবাদিক: তা ওকে নিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধে গেলেন না কেন? এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনল যারা তাদের কাছে গেলেন না অথচ ঢাকা থেকে উড়ে গেলেন কক্সবাজার
পথচারী: ভাই টিভিতে দেখেছি অনেক ভিড় হয়। এই ভিড়ের মধ্যে যেতে ভাল লাগে না। অনেক কষ্ট।
টিভি সাংবাদিক: যারা স্বাধীনতা এনেছে তারা তো অনেক কষ্ট করেছিল। তাদের জন্য আমরা কী একটু কষ্ট করতে পারি না।
পথচারী: আমিতো তখন জন্ম নেইনি। আমি সেসব কিছু দেখি নাই। যে জিনিস দেখি নাই, সেটা কি করে বিশ্বাস করি?
টিভি সাংবাদিক: আপনি আর কী কী অবিশ্বাস করেন?
পথচারী: এই যে মাছ ওয়ালাকে বিশ্বাস করি না, কেননা ওরা মাছে ফরমালিন দেয়। সবজী ওয়ালাকে বিশ্বাস করি না কেননা ওরা পিয়াজের দাম শুধাশুধি বাড়ায়া দিছে। সোনার দোকানদারকে বিশ্বাস করি না কেননা ওরা সোনাতে ভেজাল দেয়
টিভি সাংবাদিক: তা আপনি মাছ ওয়ালাকে বিশ্বাস করেন না, সবজী ওলাকে বিশ্বাস করেন না। সে জন্যই এক সগর রক্তের ইতিহাস বিশ্বাস করেন না তাই তো?
পথচারী: ঠিক তাই। যাদের দেখি তাদেরকেই আজ বিশ্বাস করতে পারি না। আর যাদের দেখি নাই, আমার জন্মের আগে তারা কি করছে না করছে সেইটা ক্যামনে কমু।
টিভি সাংবাদিক: আপনি তো প্রথমে খুব সুন্দর করে কথা বলছিলেন। এখন এমন আঞ্চলিক ভাষা বলছেন কেন?
পথচারী: বেশিক্ষণ পারি না ভাই। মাতৃভাষা আইসা পড়ে
টিভি সাংবাদিক: আমার শেষ প্রশ্ন। আপনি কী বলবেন আপনি কোথায় পড়ালেখা করেছেন?
পথচারী: জী আমি এম এ পাশ। সরকারি চাকরি করি। আমার স্ত্রীও এম এ পাশ। সে একটা স্কুলের টিচার।
টিভি সাংবাদিক: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। দর্শকমণ্ডলী এই ছিল বিজয় দিবসের জন্য আমার শেষ সাক্ষাৎকার।
স্কারবোরো, কানাডা