
বাংলাদেশে খুব গুরুতর অন্যায় বা অপরাধের বিষয় নিয়ে অনেকের মাথা ব্যাথা নেই কিন্তু কিছু বিষয় আছে যা আইনের চোখে অন্যায় হলেও সমাজের দৃষ্টিতে অন্যায় নয় এরকম ছোট ছোট বিষয়ে অনেকেই বেশ উচ্চকণ্ঠ হয়ে উঠেন।
কাতারে ড. ইউনূসকে এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে অভ্যর্থনা জানাতে যেখানে তাকে কয়েক মিনিটের জন্যে বসানো হয়েছে সেখানে জাতীয় পতাকা নাই কেন তা নিয়ে লালনের “জাত গেল জাত গেল বলে” গান শুরু হয়েছে।
ঠিক তেমনী উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীবের বাবা কারো টাকা মেরে খাওয়া বা জোর জবরদস্তিমূলক কারো সম্পত্তি দখল কিংবা কাউকে মারধর বা টাকা পাচারের ঘটনার সাথে জড়িত না থাকলেও কিংবা কোন হত্যা লুট বা অবৈধভাবে ভোট চুরির সাথে জড়িত না থাকলেও শুধুমাত্র একটা ঠিকাদারি লাইসেন্স করেছেন বলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
স্হানীয় সরকারের মন্ত্রীর বাবা বা পরিবারের কারোই একই মন্ত্রণালয়ের অধীনে কোন প্রতিষ্ঠানে ঠিকাদারি লাইসেন্স করা বা দেয়া ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ আইন অনুযায়ী অন্যায় হতে পারে কিন্তু এটার জন্যে দায়ি যারা এই লাইসেন্স অনুমোদন দিয়েছেন, যিনি দরখাস্ত করেছেন তিনি নন।
ভাল কথা, আইনের চোখে অন্যায় হয়েছে, সমালোচনা করুন, প্রতিবাদ করুন। আসিফ তার বাবার পক্ষ থেকে ক্ষমা চেয়েছেন, ভুল স্বীকার করেছেন সেটারও একটু এপ্রিসিয়েট করবেন দয়া করে।
আর হ্যা, যারা সমালোচনা করছেন তারা কি সবসময় এটা করেন? এই যে বাংলাদেশে সিটি কাউন্সিলের বা পৌরসভার কাউন্সিলরদের অনেকেই অন্যের লাইসেন্সে নিজেরা অধিকাংশ ঠিকাদারি কাজ ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়ে থাকেন সে বিষয়ে কেউ কি কখনো প্রতিবাদ করেছেন? দেখুন এটা কিন্তু আইনের চোখে অপরাধ নয় কারণ কোন কমিশনার বা কাউন্সিলর নিজ নামে ঠিকাদারী কাজটা করছেন না, কিন্তু আসলে তিনি বা তার পরিবারেরই কেউ কাজটা করছেন! কি অভিনব কৌশল!
অপরাধীরা তেলে ঝোলে থাকলেও আইনগত কারণে অনেক সময় তারা অপরাধী নন কিন্তু অপরাধের সকল ফসল তাদের ঘরেই উঠছে। এ যেন সেই কানামাছি ভোঁ খেলার মত! আমাকে ধরতে পারবে নাআআআ!
অবস্হা দৃষ্টে মনে হচ্ছে ড. ইউনুস সরকারের ভেতরে বেশকিছু লোক আছে যাদের বাস্তবতার সাথে কোন পরিচয়তো নেইই, বরং তাদের উদ্ভট কার্যক্রম সরকারকে বিরাট বিপদে ফেলে দিতে পারে। নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন তার মধ্যে অন্যতম। এরা এমন সব সুপারিশ করেছে যা বাস্তবায়ন তো দুরের কথা, তারা এ ধরনের সুপারিশ করলো কেন, এই প্রশ্নের উত্তর দিতেই সরকার বিপাকে পড়ে যাবে। আচ্ছা এইসব হাতা কাটা ব্লাউজ পরা অতি আধুনিক পাশ্চাত্য ধ্যান ধারণার মহিলাদের চিন্তা চেতনার সাথে বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় কিংবা মনোস্তাত্বিক চিন্তা চেতনার কোন মিল আছে? মানুষের জীবনের কিছু বিষয় আছে যা আইন করে সমাধান না করে বরং সচেতনতা তৈরী করে সমাধানের চেষ্টা করতে হয়। একজন স্বামী ও স্ত্রীর সাথে তাদের বৈবাহিক জীবনের প্রাকৃতিক যে সম্পর্ক সেটা আইন করে নির্ধারণ করে দেবার মত সমাজ কি বাংলাদেশে তৈরী হয়েছে? তাহলে কোন আক্কেলে এসব প্রস্তাব সুপারিশ করার সাহস হয়? উত্তর একটাই তাহলো ইউনুস সরকারকে বিপদে ফেলা।
অপর আরো একটি সুপারিশ করা হয়েছে স্হানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে। বলা হয়েছে মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যান পদে সরাসরি ভোটের দরকার নেই। কতবড় আহাম্মকি এবং গনতন্ত্র বিরোধী প্রস্তাব। ১৯৯১ সালে উপজেলা সিস্টেম বাতিল করার বিরুদ্ধে আমরা যখন সুপ্রীম কোর্টে মামলা করেছিলাম, তখন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের ফুল বেন্চ কী রায় দিয়েছিল সেটা কি এই অথর্ব কমিশন ভেবে দেখেছেন একবারও? যেখানে আরো বেশী সরাসরি ভোটের উপর জোর দেয়া হয়েছে, স্হানীয় সরকারের সকল ইউনিটকে জনগণের ভোটে নির্বাচিত করার কথা বলা হয়েছে সেখানে ড. তোফায়েলের নেতৃত্বে কমিশনের এ ধরনের গণবিরোধী সুপারিশ গনতন্ত্রের আকাংখার সাথে সম্পুর্ণ সাংঘর্ষিক এবং অগ্রহণযোগ্য। সত্যিকার গনতন্ত্র পিয়াসীদের হয়তো খুব শীঘ্রই এর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করতে হতে পারে।
স্কারবোরো, কানাডা