
জুনায়েদ কথা শুরু করলো-
-তরু তুমি আমার প্রথম বউ। তোমার প্রতি আমার মায়া টান অন্য রকম।
আমি আসলে তোমাকেই ভালোবাসি। আমি আসলে বিয়ে করতে চাইনি। কি যে তাবিজ করলো,বিয়ে করতে বাধ্য হলাম।
-শোন,জুনায়েদ এসব ন্যাকামো তুমি অনেক করেছো। আমি ও লক্ষী মেয়ের মতো শুনেছি, অন্ধের মতো বিশ্বাস করেছি। আমি কিন্তু সেই লক্ষী মেয়ে টি নাই। নারী তে পরিণত হয়েছি। তারা যে চলে গেছে,আমাকে একবারে জন্য বলতে শুনেছো তারা কে ছেলে টা তাবিজ-কবচ করেছে। মানুষ যখন নিজের দোষ ঢাকতে চায় তখন, এসব তাবিজ-কবচের আশ্রয় নেয়।
এসব ফালতু কথা অন্তত আমার সাথে বলার চেষ্টা করো না।
-তরু, তুমি তো আমার কোন কথাই আমলে নিচ্ছো না। ঠিক আছে আমি তোমাদের বাসায় যাবো। তোমার বাবা আর ভাইয়ের সাথে কথা বলবো।
-পাগল হওয়ার ও একটা মাত্রা থাকে। তুমি সেই মাত্রা অতিক্রম করে ফেলেছো। আমি রাখছি,আবির এসেছে।
-শোন তরু লাইন কেটো না।
-আমার হাজবেন্ড নিশ্চয়ই পছন্দ করবে না আমার এক্স হাসবেন্ডের সাথে কথা বলা। দ্বিতীয় বার যোগাযোগ না করলেই ভালো লাগবে।
আবির তড়িঘড়ি করে রুমে ঢোকলো। শার্ট, টাই খুলতে খুলতে বললো-
– হ্যাশ কালারের টি শার্ট টা দাও তো। এক্ষুনি বের হবো। তুমি বোরকা টা পরে নাও।
-কোথায় যাবো? অফিস থেকে এই অসময়ে চলে আসলেন কেন?
– তারার কাছে যাবো, এই কারনে ছুটি নিয়েছি।
তরু দ্বিরুক্তি করলো না চুপচাপ বোরকা পরে রেডি হয়ে গেলো।
আবির মাইক্রোবাসে করে তরু কে নিয়ে প্রথমে প্রিয়মের সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল।
তরু কে জিজ্ঞেস করলো-
– প্রিয়ম মেয়ে টা কে এখন কোথায় পাওয়া যাবে বলতে পারো?
-এই সময়ে স্কুলে থাকার কথা।
-স্কুওওল!
বলে আবির একটু হেসে নিলো।
-স্কুলে পড়ে একটা মেয়ে ভাবসাব দেখলে তো মনেহয় ইউনিভার্সিটিতে পড়ে।
-একটু বয়স ঘাটিয়ে-ই পগড়া শোনা করেছে প্রিয়ম। ক্লাসমেট হলেই যে সমবয়সী হবে বিষয় টা এমন না। বয়স এবং বুঝার ক্ষমতা প্রখর বলেই,ভুল পথে পা বাড়ালে ও ভুলে জড়িয়ে পরে না।
-হুম ঠিক বলেছো। টাল্টিপাল্টি ভালোই বুঝে। আচ্ছা তুমি প্রিয়ম কে কল দাও তো, সিওর হও আসলে কোথায় আছে।
তরু কল দিয়ে জানলো প্রিয়ম স্কুলে না। কোথায় আছে নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে চাইছে না। আবির এক রকম বিরক্ত হয়ে তরুর কাছ থেকো ফোন টা নিয়ে বললো-
-প্রিয়ম কেমন আছো?
-ভাল আছি আঙ্কেল। আপনি কেমন আছেন?
-আছি মা একরকম। আচ্ছা তারা কে নিয়ে একটু কথা বলি তোমার সাথে।
– জ্বি বলুন।
– তারা কে আজেবাজে কথা বলেছিলেন যে ছেলে টা, ওর
নাম টা কি বলতে পারো?
-হুম,ইয়াদ।
-ইয়াদ কি তোমাদের বন্ধু?
-না আঙ্কেল,স্বল্প পরিচিত কিন্তু খুব দ্রুতই বন্ধুর মতো কাছাকাছি আসতে পেরেছিল।
-ইয়াদ কোথায় থাকে জানো বা এই মুহূর্তে কোথায় আছে জেনে দিতে পারবে?
-ইয়াদের সাথে আমার কথা হয়েছে কিছুক্ষণ আগেই। বসুন্ধরা সিটির দিকে আছে। আমাকে যেতে বলেছিল।
-প্রিয়ম তুমি তো চাও তারা ভালো থাকুক। ভুল থেকে বের হয়ে আসুক।
-জ্বি আঙ্কের। তার হুট করে বিয়ের মতো একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবে আমি ধারনা ও করেতে পারিনি। আমি যদি জানতাম তারা কে কখনোই এই কাজ টা করতে দিতাম না।
– আচ্ছা মা,তোমার সাথে প্রয়োজনে আবার যোগাযোগ করবো।
আবির বসুন্ধরা সিটির দিকে যেতে বললো ড্রাইভার কে। এতো বড় একটা শপিং কমপ্লেক্সে গেলেই পেয়ে যাবে এমন আশা করছে না। শতাব্দীর মোবাইল ট্রেকিং করিয়েছে,শতাব্দী বসুন্ধরার দিকেই আছে।
আবির কে বেশি কাঠ খড় পোহাতে হয়নি। এক্সিট দরজা দিয়ে বের হচ্ছে শতাব্দী সাথে বেশ হ্যান্ডসাম একটা ছেলে।
শতাব্দীর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বেশ পরিচিতের মতো হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করতে করতে আবির বললো-
-তুমি ইয়াদ তাই তো?
-ইয়েস।
এবার শতাব্দীর দিকে তাকিয়ে আবির বললো-
– নূন্যতম লজ্জাবোধটুকু যদি তোমার থাকতো, ছিঃ।
বদ নজর বলতে একটা বিষয় আছে। মানুষের বদ নজর যে কত ভয়ানক আজ তার প্রমাণ পেলাম শতাব্দী। বাচ্চা একটা মেয়ে কে নিয়ে এমন ঘৃনিত খেলা কি ভাবে খেলেছ?
-আবির শোন তুমি ভুল বুঝছ। ইয়াদ আমার বোনের ছেলে।
-আমি শিওর না হয়ে ভুল বুঝি না। তোমার প্রতি শ্রদ্ধার জায়গা টা পর্যন্ত অবশিষ্ট রাখোনি।