
ফেসবুক ও ইউটিউবের ভিডিওতে আয়ের জন্য সিনেমার প্রেস মিট বলেন কিংবা প্রচারণার যে কোনা আয়োজনে এখন ইউটিউবার ও ব্লগারদের উৎপাত তুমুলভাবে বেড়েছে। তারকাদের মোবাইল ও ক্যামেরা হাতে তারকাদের গায়ের উপরে উঠে যেতেও দ্বিধা করছেন না তারা। এমন পরিস্থিতির কারণে আগামীতে আর কোনো সিনেমার প্রিমিয়ার শোতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখার্জি। সম্প্রতি তিনি সাংবাদিকতা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তিনি।
হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই সময়ের সাংবাদিকতা নিয়ে নিজের মত জানিয়েছেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। এ ছাড়া গতকাল রাতে দেওয়া এক ফেসবুক পোস্টে সিনেমার প্রিমিয়ারে না যাওয়া নিয়ে নিজের সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরেছেন অভিনেত্রী।
স্বস্তিকা লিখেছেন, ‘আমি এখন থেকে আর কোনো ছবির প্রিমিয়ারে যাব না। নিজের সিনেমারও না। অন্যের সিনেমারও না। এমনিও কম যাই, সে নিজের হোক বা পরের।’ ফেসবুক পোস্টে এই ঘোষণা দিয়েই এমন সিদ্ধান্তের কারণগুলো ব্যাখ্যা করেছেন তিনি।
ছবির প্রদর্শনে তারকাদের ভিড়ের ভিডিও দেখে দর্শক ছবি দেখতে যান না। বরং ছবির ঝলক, পোস্টার ও কলাকুশলী দেখেই ছবি দেখতে যান দর্শক। মত স্বস্তিকার।
তিনি বলেন, ‘অর্ধেক সময়েই কলাকুশলীদের ডাকা হয় না। যে প্রোডাকশন দাদারা মুখের কাছে জল, চা, খাবার ধরল, গরমের দিনে গ্লুকোজ় গুলে নিয়ে এল, তাদের প্রিমিয়ারে নিমন্ত্রণ করাটা অনেক বেশি প্রয়োজনীয়। বাবার সঙ্গে বাবার অনেক ছবির বিশেষ প্রদর্শনে গিয়েছি। “টগরি” দেখতে গিয়েছিলাম নবীনা প্রেক্ষাগৃহে। বাবা এবং সন্ধ্যা রায় ছিলেন সেই ছবিতে। সেখানে সব কলাকুশলীকেই ডাকা হয়েছিল। শুধু দেখনদারিতে এসে ঠেকেছে সব। একরাশ বিরক্তি নিয়ে বাড়ি ফেরার চেয়ে পরে না হয় টিকিট কেটে দেখে নেব।’
আজকাল প্রিমিয়ারে তারকাদের প্রতিক্রিয়া জানতে ভিড় করেন ইউটিউবাররা। এই ভিড় নিয়েও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন অভিনেত্রী।
তার ভাষ্যে, ‘সবার হাতে ফোন। সবকিছু ওই ফোনেই তোলা হচ্ছে। কে আসলে সংবাদমাধ্যম, আর কে ইনফ্লুয়েন্সার, ভ্লগার বোঝার উপায় নেই। কেনই বা তাদেরকে বাইট দেব বা তাদের ফোনে বন্দী হব জানি না। হঠাৎ করে এই শহরে সবাই ছবিশিকারি। আর কোনো নিয়ম নেই, কোনো নির্ধারিত জায়গা নেই, যেখানে মোবাইল হাতে চিত্রগ্রাহকেরা দাঁড়াবেন। সবাই গায়ের ওপর উঠে পড়ে। পারলে নাকের ফুটোর মধ্যে মোবাইল গুঁজে দিতে পারলেই ব্যস! আমার ছবি তুলতে গিয়ে সেদিন কেউ একজন আমাকেই ধাক্কা মেরে ফেলে দিল। এত ঠেলাঠেলি ধাক্কাধাক্কি পোষায় না। আমি দেহরক্ষী নিয়ে ঘুরতে অক্ষম, সক্ষম হতে চাই না। রাস্তাঘাটে শুটিং করতে লাগে ঠিকই; কিন্তু তার বাইরে নিজের ছবি দেখতে গিয়ে যদি পেছনে দেহরক্ষী নিয়ে যেতে হয় (কারণ, মানুষ গায়ে উঠে পড়বেই) তাহলে সেখানে না যাওয়াই ভালো।’
এদিকে হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই সময়ের সাংবাদিকতা নিয়েও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন অভিনেত্রী। তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের উচিত ফ্যাক্ট চেক করা যে আদৌ ঘটনাটা ঘটেছে কি না। সবাই এখন ব্রেকিং নিউজের পেছনে ছুটে বেড়াচ্ছে। হাজারটা পোর্টাল সবাই ব্রেকিং নিউজের পেছনে ছুটছে। কে কার আগে পোস্ট করবে। কিন্তু আদৌ কি ঘটনাটা ঘটছে, সেটা জানে না। আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, নেতিবাচক খবর বেশি ভাইরাল হয় পজিটিভ খবরের থেকে। একবার ভুল তথ্য ভাইরাল হলে হইচই পড়ে যায়। এটা দুর্ভাগ্যের যে আমরা যে সময় এখন আছি, সেখানে সবাই ছুটে চলেছে। কেউ পিছু ফিরে তাকানোর প্রয়োজন বোধ করে না।’