9.7 C
Toronto
শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫

কলকাতাকে নিজের ‘দ্বিতীয় বাড়ি’ বললেন জয়া আহসান

কলকাতাকে নিজের ‘দ্বিতীয় বাড়ি’ বললেন জয়া আহসান - the Bengali Times
ছবি সংগৃহীত

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে কথা বলেছেন দুই বাংলায় সমান জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান। বাংলা, রবীন্দ্রনাথ, দুই দেশের সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের ব্যাপারগুলো উঠে এসেছে তার কথায়। কলকাতাকে ‘শৈশব থেকেই নিজের দ্বিতীয় বাড়ি’ হিসেবেও উল্লেখ করেন তিনি। পাঠকের জন্য তা হুবহু তুলে ধরা হলো।

জয়া বলেন, আমার বাবা ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। শৈশব থেকে বাংলা ছিল আমার সামগ্রিক চেতনার অংশ, যা কোনো সীমান্তের বাধা মানেনি। আমার শরীরী ঠিকানা ছিল ঢাকা, কিন্তু কলকাতা ছিল সবসময়ই আমার দ্বিতীয় বাড়ি। আসলে যদি কোনো সীমানাহীন পৃথিবী থাকত, তবে ভারতের প্রতি আমার আবেগিক অনুরক্তিকে মাপা যেত সেই পৃথিবীর মাপকাঠিতে।

- Advertisement -

আমি নিজেকে মনে করি বাংলার এক শুভেচ্ছাদূত, যে দুই বাংলার সাধারণ, অংশীদারি, ক্রমবিকাশমান কিন্তু নির্দিষ্ট ও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক মানসিকতার প্রতিনিধিত্ব করে। আমরা যারা সৃজনশীল পরিমণ্ডলে কাজ করি তাদের জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার, আমরা দুই বাংলার ভিন্ন ধারণা ও সংস্কৃতির সহাবস্থান সৃষ্টির চেষ্টা করতে পেরেছি।

কিন্তু আমাদের এখনও অনেক কিছু করা প্রয়োজন, এবং আমরা তা করতেও পারি, কারণ বাংলা আজ বিশ্বের সপ্তম সর্বাধিক কথিত ভাষা। দুই বাংলাতেই অসাধারণ সব মানবিক আবেদন সমৃদ্ধ গল্প রয়েছে, যেগুলো বলা প্রয়োজন, এবং চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আমরা সেটি করতে পারব। দেশভাগ, স্বাধীনতা সংগ্রাম কিংবা একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ… এভাবেই বাংলাদেশ টিকে থাকার লড়াইয়ের অবতীর্ণ হয়েছে। কলকাতা সবসময়ই ছিল শিক্ষা ও সংস্কৃতির কেন্দ্র।

দুই বাংলার একটি নিজেই যথেষ্টের চেয়েও বেশি জীবন-অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছে, অন্যটিকেও ছুঁয়ে গেছে সেসব অভিজ্ঞতার নির্যাস, এবং উদ্বুদ্ধ করেছে নতুন ভাবনা ও সংলাপ নির্মাণে। দুই বাংলার এই বৈচিত্র্যের যদি বুদ্ধিবৃত্তিক সংমিশ্রণ ঘটানো যেত, তাহলে আমাদের সিনেমার ভাষাকে আরও সমৃদ্ধ করা যেত, সেগুলোকে নিয়ে যাওয়া যেত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের ভরসাস্থল ফ্রান্সে।

কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, দুই বাংলাতেই রাজনীতি ক্রমশ গিলে খাচ্ছে সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলকে। নিজেদেরকে মেলে ধরার জন্য শিল্পীদের প্রয়োজন একটি উর্বর ভূমি। মানুষ এখনও রুনা লায়লাকে কেবল বাংলাদেশি আইকন হিসেবেই নয়, উপমহাদেশের ফেনোমেনন হিসেবে মনে রেখেছে।যেকোনোভাবে হোক, তখনকার দিনের রাজনীতি শৈল্পিক বহিঃপ্রকাশকে আঘাত করত না।

যেমন ধরুন, আজ যদি আমরা একটি যৌথ প্রযোজনা করতে চাই, আমাদেরকে অসংখ্য টেকনিক্যাল ক্রাইটেরিয়া মেনে চলতে হবে, এবং দুই বাংলার শিল্পী-কলাকুশলীর প্রায় গাণিতিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। এভাবে সুনির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে থেকে শিল্প সৃষ্টি সম্ভব না। তাই আমি স্বাধীনভাবে দুই বাংলার নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করি। কোনো দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বেরই উচিত না সাংস্কৃতিক নেতৃত্বকে গ্রাস করা।

সত্যি বলতে, আমাদের নীতিনির্ধারকদের উচিত আইডিয়া বিনিময়ের একটি আবহাওয়া তৈরি করা, যেন আমাদের জনগণের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে সংরক্ষণের জন্য আরও অনেক আন্তঃসাংস্কৃতিক ইভেন্টের আয়োজন করা যায়। তা না হলে, আপনি যা পাবেন তা নিছকই একটি কৃত্রিম বাস্তবতা। শিল্প ও সংস্কৃতির শুভেচ্ছাদূত হিসেবে আমাদের উচিত সত্যের অনুসন্ধান চালিয়ে যাওয়া, আর এক্ষেত্রে সিনেমা হতে পারে আমাদের প্রতিবাদ ও অভিব্যক্তির ভাষা।

আমার রবীন্দ্রনাথ পাঠ আমাকে একজন নারী হিসেবে গড়ে তুলেছে, এবং বিসর্জন (২০১৭) ও বিজয়ার (২০১৯) মতো ছবিতে নারীদের কণ্ঠস্বরকে ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করেছে। এজন্য জাতিগঠনের জন্য সাংস্কৃতিক নেতৃত্ব প্রয়োজন।

পরিশেষে, আমি বিশ্বাস করি আমাদের প্রয়োজন দেশভাগের যন্ত্রণার উপশম, এবং এটি নিয়ে কথা বলার মাধ্যমে আমাদের জীবন থেকে এটির প্রায়শ্চিত্ত করা। সামষ্টিকভাবে আমরা এই যন্ত্রণা ভুলতে পারি, এবং আমি বাংলা চেতনার প্রতিনিধিত্ব আমি অব্যাহত রাখব।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles