
” ধর, তুমি কলেজের টিউশন ফি পরিশোধ করার জন্য ব্যাংক থেকে ৩% সুদে পাঁচ হাজার ডলার ধার(লোন) নিয়েছো। প্রথম বছরে তোমার লোনের মুল্য কত পরিশোধ করতে হবে?”
“এটার সমাধান কি?” আমাকে আমাদের বড় কন্যার প্রশ্ন।
আমি বললাম, “১৫০ ডলার।”
“হাউ” তার পাল্টা প্রশ্ন। তাকে বুঝালাম। বছরে ১০০ডলারে সুদ ৩ ডলার। তাহলে ৫০০০ডলারে ১৫০ডলার। তোমার লোনের মুল্য বা সুদন১৫০ডলার।
“তুমি তো দেখছি সব সময় ষ্টুপিড না। মাঝে মাঝে অনেক স্মার্ট।” আমার প্রতি কন্যার এপ্রিসিয়েশন।
আমার বড় কন্যার গ্রেড ট্রেনের বিজিনেস বিষয়ের শিক্ষক এ রকম নানান সমস্যা সম্বলিত এসাইনমেন্টন হিসেবে দিয়েছে। কন্যা এগুলোর সমাধান করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছিল। কোনভাবেই সে সেগুলোর সমাধান করতে পারছিল না।
অথচ ম্যাথে সে খুবই ভাল। গ্রেড ট্রেনের সব ম্যাথ সে খুব অনায়াসে পারে। এর আগে আমাকে কখনো কখনো সে ম্যাথের দু একটু সমস্যার কথা জিজ্ঞাসা করলে আমি বিনীতভাবে উত্তর দিতাম, “সরি, মা। আই কান্ট ডু ইট। ইউ বেটার টেক হেল্প ফ্রম গুগল অর ইউটিউব।”
সে জন্য তার ধারনা আমি অংকে খুব কাচা। অংকের সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে আমি খুবই ষ্টুপিড।
অথচ আজকে শতকরা নিয়মের সমস্যাটি খুব দ্রুত মুখে মুখে করে দিলাম। তার কারন এখন সব সময় ক্রেডিট কার্ডের সুদের হিসাব করি আর বাড়ির মর্টগেজের হিসাব রাখি- দেখি কখন সুদ বাড়ল বা কমল। তাছাড়া ছোট বেলায় প্রাইমারী স্কুল হাইস্কেুলে তো ঐকিক নিয়মে শতকরা হিসেবের অংক তো করতামই। মোটকথা এখন মাথায় সব সময় সুদের হিসাব থাকে। এর ফলে মেয়ের দেয়া উপরের সামান্য সমস্যা তো নস্যি।
ক্যানাডায় স্কুলের বাচ্চারা ফাইন্যানসিয়াল লিটারেসিতে অনেকটা দুর্বল। স্কুলে ওদেরকে ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসিতে তেমন জ্ঞান দান করা হয়না। কঠিন কঠিন জিওমেট্রি, এলজাবরা, আরিদমেটিক শিখানো হয়। কিন্তুু ব্যবসার শতকার হিসেব ও ফাইন্যান্স ম্যানেজমেন্ট তেমন শেখানো হয় না। তবে ইদানিং স্কুলে এ বিষয়ে পড়ানো হচ্ছে গুরুত্ব সহকারে।
এখানকার লোকেরা প্রচুর ডলার কামাতে জানে কিন্তুু কীভাবে দক্ষতার সাথে ডলার খরচ করতে হয় তা এরা আমাদের চেয়ে কমই জানে। সেই হিসেবে আমরা বাংলাদেশীরা টাকা খরচ করার ব্যাপারে বেশী দক্ষ। আমাদের ফাইনান্সিয়াল লিটারেসি অনেক ভাল।
কিস্তি পরিশোধ করতে না পেরে কোন বাঙ্গালীর বাড়ি ব্যাংক নিয়ে গেছে ক্যানাডায় এ রকম শোনা যায়না। আমরা খাই বা না খাই কিন্তুু ব্যাংকের মর্টগেজ ও অন্যান্য বিল নিয়মিতই পরিশোধ করি। ব্যাংকগুলো মনে হয় বুঝে গেছে যে সাউথ এশিয়ানদের লোন দিলে তারা তা পরিশোধ করবেই।
বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাংক ও ব্রাকের মত প্রতিষ্ঠানগুলোর চরম সফলতার পিছনে বোধহয় বাঙ্গালীদের বিশেষ করে বাঙ্গালী নারীদের লোন পরিশোধ করার মানসিক শক্তি বা ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্টর প্রকৃতি প্রদত্ত দক্ষতার অবদান কম নয়।
আমার বউ আবার ফাইন্যানসিয়াল ম্যানেজমেন্টে খুবই দক্ষ। কন্যাকে বললাম, মায়ের মত ফাইন্যান্স ম্যানেজমেন্ট দক্ষ হবা। নইলে এ প্রতিযোগিতার বাজারে কিন্তুু টিকতে পারবা না।
কন্যার মুখ দেখে মনে হল, আমার উপদেশ তার মনে ধরেছে।
টরন্টো, কানাডা