
চীনা একটা প্রবাদ আছে। সেটি এ রকম: তুমি যদি একজনকে ১০০ টাকা দাও মাছ কিনে খাওয়ার জনন্য, তাহলে সে সেই একশো টাকা দিয়ে হয়ত এক বেলা বা দুবেলা মাছ দিয়ে ভাত খেতে পারবে। কিন্তুু তুমি যদি তাকে মাছ ধরা শিখিয়ে দাও, তাহলে সে সারাজীবন মাছভাত খেতে পারবে।
সে জন্য আমি টাকা পয়সা দানখয়রাত কম করি। একেবারে যে করিনা তাও নয়।তবে তাকেই দেই, যার আসলেই খুব দরকার। তবে চেষ্টা করি মানুষকে মাছ ধরার পদ্ধতি শিখিয়ে দিতে।
আমি মানুষের দক্ষতা উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করি। সেটা যে কোন মানুষের। কোন মানুষকে তার সামাজিক পরিচয় এর ভিত্ত্বি করে বিচার করিনা। আমি মনে করি, মানুষ যত বেশী জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও কর্মে দক্ষ হবে ততবেশী তার নিজের জীবনের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। অন্যের ওপর তার নির্ভরতা কমবে।
আমি নিজে ছোটবেলা বেলা থেকেই নানান ধরনের লাইফ স্কিল রপ্ত করেছি। চাষাবাদ থেকে শুরু করে মাছ ধরা, গরুছাগল চড়ানো, হাটবাজার করা, খেলাধুলা করা, রান্নাবান্না করা, থালাবাসন ধোয়া, কাপড়চোপর ধোয়া, বিছানা তৈরী করা, ছাত্রাবস্থায় রোজগার করা, নিজের পড়ালেখা নিজে করা, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করে চাকুরী করা। আমি আমার বাচ্চাদেরও সেরকম শিক্ষা দেয়ার চেষ্টা করছি। কারন তাদেরকেও তো এ সমাজে আমাদের ছাড়া টিকে থাকতে হবে। কাজেই সে প্রস্তুতি তো তাদের থাকতে হবে।
ছোট এই জীবনে মোটামুটি অনেক কিছুই করেছি। সেটা আমার কাছে খুব তাৎপর্যপুর্ন। অন্যের কাছে হয়ত তা নয়। এগুলো করতে যেয়ে নিজের ক্ষমতায়ন হয়েছে। সমস্যা সমাধানের কৌশল শিখেছি। এগুলো ন্যাচারালি করেছি, টিকে থাকার স্বার্থে। এগুলো করতে যে সব সময় ভালো লাগত তাও না। একেক জনের লাইফ ষ্টাইল তো একেক রকমের। আমি হয়ত এভাবে করেছি, অন্যজন হয়ত অন্যভাবে করেছে।
তবে জীবনে একটা জিনিস সব সময় ভালো লেগেছে। এখনও লাগে। আর তা হল স্বেচ্চাসেবার ভিত্ত্বিতে মানুষকে তার ক্ষমতায়নে সাহায্য করা। সেটা কীভাবে করতাম?
মানুষকে তথ্য দিয়ে, পরামর্শ দিয়ে, সাহস দিয়ে, কোচিং করিয়ে তার লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করতাম। বাংলাদেশে থাকতে অনেকে আমার কাছে আসত এবং বলত, ভাই বা চাচা একটা চাকুরীর ব্যবস্থা করে দেন। তখন আমি বলতাম, চাকুরী তো আমার হাতে নেই, কীভাবে দিবো? তবে হ্যা, কীভাবে চাকুরী পেতে হয় তার পদ্ধতি টেকনিক বলে দিতে পারি। সেভাবে এগোলে পেয়ে যাবে। তো তাদেরকে তথ্য দিয়ে, দিক নির্দেশনা দিয়ে, কোচিং করিয়ে তাদের লক্ষ্য পুরণে সহায়তা করেছি। অনেকের জীবনের স্বপ্ন পুরন হয়েছে। তাঁরা এখন ভালো আছে। স্বেচ্চাসেবার ভিত্তিতে করেছি বলে তাঁরা এখনো মনে রেখেছে।
ব্রাজিলিয়ান লেখক, পাওলো কোহেলহো, বলেছেন, কেউ যদি তার জীবনের লক্ষ্য স্থির করে এগোয়, তাহলে পুরো দুনিয়া তাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে। আমি এটা বিশ্বাস করি। নিজের জীবনে তার প্রমানও পেয়েছি।
কানাডায় এসেছি দশ বছরের বেশী হল। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি, এখানেও একই কাজ করছি। অনেককে নতুন দেশে নতুন প্রেক্ষাপটে ক্যারিয়ার প্লানিং এ হেল্প করেছি এবং এখনো করছি । অনেককে চাকুরি পেতেও হেল্প করেছি। কমিউনিটির লোকদের দুচারজনের জন্য প্রতি বছর কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করতে অবদান রাখছি। সাথে সাথে অনেকের মধ্যে যারা পারিবারিক সমস্যা, মানসিক সমস্যা, বাচ্চাদের নিয়ে সমস্যায় আছেন তাঁদেরকেও যতদুর সম্ভব তথ্য, পরামর্শ ও কাউন্সেলিং দিয়ে সাহায্য করছি। কেউ কেউ আগের চেয়ে ভাল জীবনযাপন করছে।
এগুলো করে কোন অর্থকড়ি পাইনা। কিন্তুু মনে অনেক অনেক প্রশান্তি পাই। আসলে ভোগ বা পাওয়ার মধ্যে সুখ কম, দেয়ার মধ্যেই প্রকৃত সুখ।সত্যি বলছি করে দেখেন, সুখ পাবেন।
টরন্টো, কানাডা