8.9 C
Toronto
রবিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৫

পিয়াস ছিলো আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুও

পিয়াস ছিলো আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুও - the Bengali Times
পিয়াস করিম

আমার ভাই পিয়াস ( পিয়াস করিম ) আমরা পিঠা পিঠি ভাই বোন । পিয়াস ছিলো আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুও। পিয়াস কে আমি আমার সব কথা শেয়ার করতে পারতাম। আমার বোনেরা কখনো আমার বন্ধু ছিলো না। বোনদের সবার ছোট ছিলাম বলে বন্ধুত্ব কখনো গড়ে উঠেনি ওদের সাথে। কিন্তু আমার এই ভাইটি খুব তাড়াতাড়ি জীবনের পাঠ চুকিয়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। পিয়াসের চলে যাওয়াটা আমার শুধু ভাই হারানোর বেদনারই ছিলো না সাথে সাথে ছিলো আমার একজন বন্ধু হারাবার বুক ভাঙ্গা কষ্ট । আমার মনে হয়েছিলো আমার আর কেউ থাকলো না নিজের কথা বলার।

পিয়াস আর আমার অনেক ছোট বেলার একটা কথা মনে পরে গেলো । তখন আমরা দুই ভাইবোনই কনভেন্ট স্কুলে পড়ি । স্কুলে কি যেনো একটা মেলা জাতীয় অনুষ্ঠান হচ্ছে। নানা রকমের খাবার বিক্রি হচ্ছে। স্কুলে আসার সময় আম্মা আমরা দুই ভাইবোনের হাতে পয়সা দিয়ে দিলেন আমাদের ইচ্ছা মতো কিছু কিনে খাবার জন্য। আমরা দুজনের পয়সা দিয়ে একগাদা চানাচুর কিনলাম। খেতে গিয়ে দেখলাম বাজে স্বাদের চানাচুর । সে চানাচুরের স্বাদটা মনে হলে এখনো আমার বমি আসে । কিন্তু আমার খাদ্য প্রিয় ভাইটাও কিছুটা খেয়ে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলো সে বিস্বাদ চানাচুর। পিয়াস অনেক পড়তো । খবরের কাগজের প্রথম পাতা থেকে শেষ পাতা পর্যন্ত পরে শেষ করতো । আমরা দুই ভাইবোনই কুয়াশা সিরিজের বই পড়তাম , বনহুর পড়তাম। ছোট বেলাতে আমার স্বপ্ন ছিলো বড় হয়ে কুয়াশা আর বনহুরের বই কিনে আমার নিজের বাড়ীটা ভরে ফেলবো । ছোট বেলার স্বপ্ন গুলো সত্যিই মজার। মাসুদ রানার বইও পড়েছি একটু বড় হয়ে। কারন মাসুদ রানার বই পড়াটার অনুমতি পেতাম না কিশোর বেলাতেও।

- Advertisement -

অনেক সময় দেখা যেতো আমরা ভাই বোনেরা সবাই একসাথে বসেছি কিন্তু আমাদের গল্প তেমন জমে উঠছে না।“ তখন পিয়াস বলতো চল একটু পরচর্চা করি না হলে আসর জমছে না”। ব্যাস একজন কাউকে টার্গেট করে শুরু হয়ে গেলো তাকে নিয়ে মজা করা। সাথে সাথে আমাদের ভাই বোনদের আড্ডা শুরু হয়ে যেতো । হাসা হাসি গল্প গুজবে কাটিয়ে দিতাম অনেকটা সময় । আমরা ভাই বোনরা একসাথে তাস খেলতাম দাবা খেলতাম। লোটাস আমাদের সবার ছোট হয়েও দেখা গেছিলো আমি, পিয়াস, লোটাস একটা দল হয়ে গেছিলাম। কোন এক বোনের স্বৈরাচারী আচরণ আমাদের পছন্দ না হলে যখন আমি আর পিয়াস তার গিপদ করতে বসতাম তখন লোটাসও আমাদের সাথে যোগ দিতো । পিয়াস ছিলো বিদ্রোহী, আমি ছিলাম মিনমিনে, আর লোটাস সবার ছোট ছিলো। সবার আদরের ছিলো ওর চুপ করে থাকাটাই শোভনীয় ছিলো ।

সব চাইতে মজার ব্যাপার ছিলো পিয়াসের বন্ধুরাও আমার বন্ধু ছিলো । অনেকেই আমাদের বাসায় আসতো । তাদের কারো কারো চোখে প্রেমের ঝলক ছিলো । কেউ কেউ আবার এজন সেজনকে দিয়ে প্রেমের বার্তা পাঠাতো । এসব নিয়ে আমার আর পিয়াসের মাঝে প্রচুর হাসাহাসি হতো । পিয়াসের সাথে আমি আমার সব কথা শেয়ার করতাম মজা করার জন্য। যারা নিয়মিত আমাদের বাসায় আসতো তাদের মধ্যে ফারুক ভাই (গোলাম ফারুক) ছিলো প্রধান। ফারুক ভাইয়ের অবাধ বিচরণ ছিলো আমাদের বাড়ীতে। কুমিল্লাতে বেশ কিছু ফারুক ছিলো । তাই সব ফারুকের সাথে একটা বিশেষন যোগ করা হতো । আমাদের বাড়ীতে যে আসতো উনি ছোট খাট ছিলো বলে তাকে আমরা পিচ্চি ফারুক ডাকতাম । আমার আর পিয়াসের ধারনা ছিলো ফারুক ভাইয়ের আমাদের বাড়ীতে নিয়মিত আসার পেছনে বিশেষ কারন ছিলো । সে কারণটা উল্লেখ করলাম না কারন ফারুক ভাই লেখাটা পড়বেন এবং পরে বিব্রত হবেন। কাউকে বিব্রত করা আমার লেখার উদ্দেশ্য না। তবে বর্তমানে ফারুক ভাইএর সাথে আমার একটা সুন্দর সম্পর্ক হয়েছে যাকে বলা যেতে পারে শেষ বেলার বন্ধুত্ব।

পিয়াস আর আমার আরো স্মৃতি নিয়ে আসবো পরবর্তীতে ।

ম্যাল্টন, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles