
মাঝে মাঝে কিচ্ছু ভাল্লাগে না।
কেমন জানি দুর্বল দুর্বল, শুকনা শুকনা, ঘোলা ঘোলা লাগে।
বাসন মাজতে, দাঁত মাজতে ইচ্ছা হয় না। মনে হয় বিছানায় উঠে পা না ঝেড়েই শুয়ে পড়ি, জামা না পাল্টিয়েই দি একটা লম্বা ঘুম। অথচ বাঙালিদের নানাবিধ সমস্যার পেছনের মূল কারণ যে পা না ঝেড়ে বিছানায় ওঠা; এটা কে বোঝাবে? লাইট জ্বলে জ্বলুক।
আজ রাতে সেরকম অবস্থা।
যদিও ঘন্টা তিনেক আগে, সন্ধ্যায় দাওয়াত খেয়ে আসলাম বন্ধুর বাসায়। সে এমনই মজার ঠান্ডা ফালুদা দিছিলো, সব খাবার পাকস্থলীতেই হজম হয়ে, ক্ষুদ্রান্ত স্কীপ করে সরাসরি বৃহদান্ত্র গিয়ে পড়লো। এখন শুধু নদীর মোহনায় গ্রিন সিগনালের জন্য অপেক্ষা। আখের রস নিংড়ানো ছোবড়ার মতো ফেলনা। তাই শরীর খাবার খুঁজছে, পাচ্ছে না। এজন্যই যত দুর্বলতা। আর বিদায় নেবার আগে মিষ্টি পাকা গোপালভোগ আম খাওয়াটাও মস্ত ভুল হইছে। এগুলা পাচক রসের ইয়ারী দোস্ত।
খিদে পেটে ঘুমাতে গেলে বিরাট ক্ষতি।
মনে হবে ঘুম আসবে, কিন্তু আসলে না। সবকিছুকে ফাঁকি দেওয়া যায়, পেট কে না। তাই চা বানিয়ে ফিরে আসার সময় ফ্রিজ থেকে এক বাটি উডোন নুডুলসও গরম করে নিলাম। শুধু চা খেলে গ্যাস হবে। কৌতূহলবশত সামনের হাফ প্লেটের ঢাকনা তুলে দেখি সেখানে আধা খাওয়া একটা বিফ বার্গার। আমার মেয়ের রেগুলার কান্ড। সেটা বিশ সেকেন্ড মাইক্রোতে গরম করে নিলাম। খামোখা জিনিস নষ্ট করা ঠিক না। যদিও ভেতরের লেটুসটা একটু চুপসিয়ে, পাউরুটি হালকা রাবাড়ী হয়ে গেলো। স্বাদ ঠিকই আছে। এই বার্গার জিনিসটা খুব রহস্যজনক। দুইটা পাউরুটির মধ্যে ভাজা মাংস পিন্ড, মেয়োনেজ আর লেটুস দিলে নিমেষেই হয়ে উঠে পশ্চিমা দেশের সবচাইতে আকর্ষণীয় খাবার। খেতেও মন্দ না। নজর চলে গেলো দুই হাত দূরে রাখা ক্ষেতের পেঁয়াজগুলোর দিকে। শুকানো হচ্ছে। আমার মামাতো বোনজামাইয়ের শখের বাগানে পিঁয়াজের বাম্পার ফলন হইছে। কাল সকালে আবার পান্তা খাওয়া হবে। গাছের পেঁয়াজ পান্তার অন্যতম শর্ত।
চা হাতে কম্পিউটারের সামনে বসে গান ছেড়ে দেই হেমন্তের-
“ও আকাশ প্রদীপ জ্বেলো না,
ও আকাশ আঁখি মেলো না।
আমার প্রিয়া লজ্জা পেতে পারে আহা…”
নুডুলস শেষ করে চায়ে চুমুক মেরে গানটা আবার রিপিট করি। এই গান একবার শোনার জন্য তৈরী হয় নাই। চায়ের মত বারবার খাওয়া লাগে। মনিটরের পাশে আবার সেই রেড ভেলভেট কেক এর উচ্ছিষ্টাংশ। ছেলেটা রব্লক্স খেলতে গিয়ে উত্তেজনায় ফিনিশ করতে ভুলে গেছে। গিন্নি এতই সুন্দর করে বানায়। নরম লালচে, দুধের সুস্পষ্ট একটা গন্ধ থাকে। মাখন, চীজ ক্রিমের ফ্লেভারে ঠাসা। হেমন্তের গানের মত। ডেজার্ট হিসাবে অতি উত্তম।
আমার সমস্যা হলো রাতে ঘুম কম হওয়া।
গড়ে প্রতি রাতে পাঁচ ঘন্টার কম ঘুমালে নীরব ঘাতক হার্ট ডিজিজ হবার সুমুহ সম্ভাবনা। কী আছে কপালে কে জানে। করিডোর পাস্ করার সময় চোখ আটকিয়ে গেলো চাইনিজ দোকান থেকে কেনা ইন্ডিয়ান লেইজ চিপস এর উপর। উপরে লেখা বাইশ রুপি। এগুলা চাইনিজরা কেমনে ইম্পোর্ট করে খোদা জানে। এশিয়ানদের জন্য বানানো এর স্বাদ, মশলা আলাদা। এক ডলার করে নিছিলো। ওটা খুলে চিবাতেই মনটা বাংলাদেশ চলে গেলো। এই চিপস আগে কত খেতাম। সমস্যা হলো লেইজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত চলতেই থাকে, এভাবেই বানানো। আমার দোষ নাই।
ঘুমাতে যাবার আগে গিন্নি বলল, ভাতে পানি ঢালছিলা?
এনার্জি পেয়ে আমার দুর্বলতা মনে হচ্ছে কিছুটা কমছে। এবার ফাইনালি বরাবরের মতো নাশপাতি কামড়াতে কামড়াতে বিছানায় চাদর মুড়ি দিয়ে শুতেই গিন্নি পাশ থেকে বলল, চান্দু চকলেট খাবা?
– কোই পাইছো!
– ভাবি দিছে। রাতে খাইছো?
– কখন..
– আমাকে দিলা না? খিদে লাগলো যে?
– এভোক্যাডো দিবো? এক কাপ দুধ?
– দাও।
আবার যাই রান্নাঘরে। দুইটা এভোক্যাডো আর দুই কাপ দুধ নিয়ে আসি। গিন্নি একা খেতে লজ্জা পাবে; ভদ্রতা বলে একটা বিষয় আছে। আমারই উচিত ছিল রাতে একসাথে খাওয়া। রাতে যত ভারী খাবেন, এর চাপে সকালে তত পেট ক্লিয়ার।
সেই ক্যাডবুরি এক্লেয়ার্স মিল্ক চকলেট! মনে হচ্ছে দেশ থেকে আনা।
গিন্নি বলে উঠলো, আরেকটা চমক আছে!
– কী?
– ঝাল চকলেট! দেশি!
আহা, সেই দেশি ঝাল লজেন্স! মরিচ আর বিটলবনে ভরা। একটা চুষে খেলে খিদে ধাঁই ধাঁই করে মাথায় চড়ে বসে!
আসলে এই দুনিয়ায় ফাইনাল বলে কিছু নাই।
যেটা এখন মনে হচ্ছে ফাইনাল, সেটাই একসময় হবে একটা পুরানা, অকেজো, ঘূণেধরা নাম্বার।
এই মরার ঝাল লজেন্স চুষে খাওয়াটাই কাল হলো।
আবার টেনশন!
অটোয়া, কানাডা