
বাংলাদেশ তো বটে, উপমহাদেশের প্রায় প্রত্যেকে পুরুষের কাছে প্রিয় পোশাকের তালিকায় আছে লুঙ্গি। দিনমজুর থেকে শুরু করে অফিসের বড় বাবুও যখন ঘরে ফেরেন, সবার আগে কাছে টেনে নেন লুঙ্গিকে।
ঘরে হোক বা বাইরে, আরামদায়ক বিধায় নিম্নাঙ্গের এই পোশাক যেন নিত্য সঙ্গী পুরুষদের। তবে পুরুষদের সেই প্রিয় পোশাককে নিয়ে এবার কটাক্ষ করলেন নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। লুঙ্গিকে ‘অশ্লীল পোশাক’ বলে মনে করেন তিনি।
শুক্রবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লুঙ্গি নিয়ে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন তসলিমা। লুঙ্গির নিচে পুরুষেরা আন্ডারওয়্যার পরে না জানিয়ে এই পোশাককে নিয়ে বিদ্রূপ করতে ছাড়েননি তিনি।
নিজের অফিশিয়াল ফেসবুক পোস্টে তসলিমা লেখেন, ‘পুরুষের লুঙ্গিটাকে আমার খুব অশ্লীল পোশাক বলে মনে হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে যে পুরুষেরা লুঙ্গি পরে, তাদের বেশির ভাগই কোনো আন্ডারওয়্যার পরে না, লুঙ্গিটাকে অহেতুক খোলে আবার গিঁট দিয়ে বাঁধে। কখনো আবার গিঁট ছুটে গিয়ে হাঁটুর কাছে বা গোড়ালির কাছে চলে যায় লুঙ্গি।’
তসলিমা নাসরিনের সেই লুঙ্গি বিতর্ক এখনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে চলছে। অনেকেই লুঙ্গি পরা ছবি শেয়ার করে লিখছেন, অনার উইথ তসলিমা’।
নাহিদ হাসান নামে একজন লিখেছেন, ‘আন্ডারওয়্যার পরে বিচে রৌদ্র উপভোগ করা, হাটে হাঁটাহাঁটি করা অশ্লীল কারও চোখে। অথচ নদীনালার দেশে কোট-প্যান্ট পরা যে অনুপযোগী ঘটনা, ঔপনিবেশিক জ্ঞানীদের এটা বোঝাতে পারব না। পোশাকেরও রাজনীতি আছে বাহে।‘
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আ-আল মামুন লিখেছেন, ‘লুঙ্গি আমি পরি না। আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না, তাই পরি না। তবে বস্ত্রটা খারাপ না। খৎনার পরে কিছুকাল পরেছিলাম। গায়ে ঠাণ্ডা লাগলে খুলে সারা গায়ে জড়িয়ে শুয়ে থাকতাম। খুব আরাম। পুকুরে গোসল করতে গেলে, ফুলিয়ে বেলুন বানিয়ে ভেসে থাকতাম। খুব আনন্দ। আর গরমের দিনে বেশ বাতাস লাগাইতাম, বিদ্যুৎহীন গাঁও গেরামে। আহা!
কিন্তু তারপরে সাবালগ হওয়ার পরে লজ্জা বৃদ্ধি পাইলো। প্রতিদিন সকালে কে আর বিছানার এপাশ ওপাশ থেকে লুঙ্গি সংগ্রহ করে পরতে ভালবাসে! আচমকা কেউ ঘরে ঢুকে দেখেও ফেলত! তাই প্রিয় লুঙ্গি ছাড়লাম! কিন্তু বস্ত্রটা আমার ভালোই লাগে।’
সত্যজিৎ রায় ফিল্ম ইনস্টিটিউটের স্কলার ইমামুল বাকের এ্যাপোলো তসলিমা নাসরিনের পোস্টের স্ক্রিনশট দিয়ে লিখেছেন, ‘লুঙ্গি পরার বিড়ম্বনা আছে। অনেক ঝামেলা হয়, ঠিক আছে আমিও এ জন্য ছেড়েছি। কিন্তু আরেকজনের লুঙ্গিপরা নিয়ে কটাক্ষ তো বর্ণবাদী আচরণ। তসলিমা `স্লিভলেস নারীবাদী’ থেকে কবে লুঙ্গিবাদী হলেন?’
সাদ রহমান নামে একজন লিখেছেন, ‘তসলিমা নাসরিনের লুঙ্গি অনলি কনসার্নড উইথ চাষাভুষার লুঙ্গি। বড়লোকের লুঙ্গিকে আপনি একদমই এই সব ‘অঙ্গভঙ্গি’ করতে দেখবেন না। তা বাংলাদেশ, তামিলনাড়ু, কেরালা, শ্রীলঙ্কা বা মিয়ানমার যেখানেই যান না ক্যানো। কিন্তু তাতে আসলে সমস্যা কি?
চাষাভুষার লুঙ্গি যদি একটা বিশেষ ‘অঙ্গভঙ্গি’ সত্যই প্রকাশ কইরা থাকে, সেই বিশেষ ‘অঙ্গভঙ্গি’র ব্যাপারে কথা বলা যাবে না ক্যানো? আমার তসলিমা নাসরিনের লুঙ্গি নিয়া স্ট্যাটাসটা ভালো লাগছে। তসলিমার অবজারভেশন এতোই এ্যাকুরেট ছিল যে—ভালো না লাইগা উপায়ও নাই। চাষাভুষার লুঙ্গির ব্যাপারে তসলিমার এই আলাপ তীক্ষ্ণ সমালোচনা বা উপহাস। এইটা বর্ণবাদ না।’