
বৈষম্যের সমাজে মানুষ হীনমন্যতা, ক্রোধ এবং দাসত্ববোধ মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠে। কৌতুহুল জাগে মনে ‘এ সমাজ ভাঙতে হবে, নুতন সমাজ গড়তে হবে’ বলে যারা আমাদের অল্প বয়সে মুখে শ্লোগান তুলে দিয়েছিলেন, তাদের সমাজ ভাঙার কাজ কি শেষ হয়েছে? ভাঙা শেষ হয়ে থাকলে গড়া কতটুকু এগুলো?
সেই সত্তর আশির দশকের চেয়ে এখন কি সমাজে বৈষম্য বেড়েছে নাকি কমেছে? দখলবাজী, দুর্নীতি?
ধরুন আপনি একটি সরকারী অফিসের বড় বাবুর সাথে দেখা করার জন্য অফিসের সামনে অপেক্ষায় আছেন অনেকক্ষণ যাবত। বড় সাহেবের পিএকে আপনি বার বার অনুরোধ করেছেন জরুরী প্রয়োজনে দেখা করা দরকার। আপনি যতই বলেন ততই আপনাকে জানানো হয় স্যার মিটিং এ আছেন। আপনি ঘন্টা খানেক অপেক্ষা করেও যখন স্যারের দেখা পাচ্ছেন না, তখন আপনারই চোখের সামনে দিয়ে পরে এসেও কেউ কেউ সরাসরি বড় সাহেবের রুমে ঢুকে যান।
তখন আপনার অনুভুতি কেমন হয়?
নদী পারের জন্য ফেরীঘাটের দীর্ঘ লাইনে অসুস্হ্য রুগী নিয়ে অপেক্ষা করছেন জরুরিভাবে ঢাকার হাসপাতালে নিতে হবে অথচ আপনার অনেক পরে এসেও চোখের সামনে দিয়ে সাঁ করে ভিআইপি বা কেউকেটা একজন ফেরীতে উঠে পার হয়ে চলে যায়!
আপনি দীর্ঘ যানজটে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে ঘামছেন, কেউ কেউ হুইসেল বাজিয়ে উল্টো রাস্তা ফাঁকা করে চলে যাবেন আপনার মত হাজার হাজার লোকের চোখের সামনে দিয়ে।
আপনি দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন, হীনমন্যতায় ভুগেন। একই দেশের নাগরিক হয়েও সংবিধান অনুযায়ী দেশের সকল নাগরিক সমান জেনেও আপনার নিজেকে তখন তেলেপোকার মত ক্ষুদ্র প্রাণী মনে হয়! এর নাম বৈষম্য। তিনি বড় আপনি ছোট! কেউ সাহেব কেউ চাকর! কেউ ভিআইপি কেউ আমজনতা।
আপনাকে বোঝানো হয় হাতের পাঁচ আঙুল সমান হয় না!
তরুণ বয়সে একদিন যারা আপনাকে দিয়ে শ্লোগান দিয়ে রাজপথে কাঁপিয়েছিল তিনিই এখন সেই বড় সাহেব। তার সাথে দেখা করতেই আপনি ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেন। কিংবা তিনিই এখন সেই ভিআইপি। আপনাকে লাইনে রেখে, যানজটে রেখে তিনি সাঁ করে পরে এসে আগে পার হয়ে চলে যান!
তিনিই আপনাকে দিয়ে শ্লোগান দিয়েছিলেন, সেদিন! মিছিলের পেছনে থেকে আপনার কাঁধ ঝাঁকুনি দিয়ে বলেছিলেন, শ্লোগান ধরো, করাতী লাল, “এ সমাজ পঁচা গলা, এ সমাজ ভাঙতে হবে”! আপনি করাতি লাল শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে চেঁচিয়ে উঠেছিলেন “লড়াই লড়াই লড়াই চাই লড়াই করে বাঁচতে চাই”!
আপনার লড়াই এখনো চলছে। তাদের লড়াই শেষ হয়েছে অনেক আগে। ক্লান্ত শ্রান্ত অবসন্ন দেহ নিয়ে ঘুমের মধ্যে আপনি চিৎকার করে উঠেন, “দুনিয়ার মজুদর, লড়াই করো, এক হও”! বউ পাশ থেকে কুনুই দিয়ে গুতো দেয়! আপনি অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখেন, তেল চিটচিটে বিছানায় আপনার শরীরের উপর দিয়ে একটা তেলাপোকা ভয়ডর বিহীন এগিয়ে চলেছে!