
পাকিস্তানের করাচির শহুরে বস্তি এলাকা থেকে উঠে আসা ইভা বি এখন বিশ্ব মাতাচ্ছেন। ইউটিউবে লক্ষাধিক ভিউ নিয়ে এ র্যাপার পাকিস্তানের নতুন সঙ্গীত সেনসেশন হয়ে উঠেছেন।
তিনি শুধু পাকিস্তানের প্রথম নারী র্যাপার নন, বালুচ সংখ্যালঘুদের থেকে প্রথম বোরখা পরিহিত নারী র্যাপার। তিনি জানান, তার ভাই তাকে বলেছিল, যদি সে র্যাপ করতে চায় তাহলে তাকে বোরখা পরতে হবে। এ পোশাক এখন একজন সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে তার পরিচয় এবং ব্যক্তিত্বের একটি অংশ।
ইভা দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, বোরখা না পরলে ভালো পারফর্ম করতে পারি না। ঘোমটা শুধু আমার মুখ ঢেকে রাখে; এটা আমার প্রতিভাকে ঢেকে দিতে বা কেড়ে নিতে পারে না।
তিনি জানান, ২২ বছর বয়সে একদিন মোবাইল নিয়ে খেলার সময় কোক স্টুডিওর জন্য সঙ্গীত প্রযোজকের কাছ থেকে একটি কল পান। তিনি বলেন, যেহেতু আমি এখন যতটা কল পাই, তখন তত পেতাম না, তাই আমি ফোন কলের উত্তর দিউ।
ইভা বলেন, তিনি (কোক স্টুডিও প্রযোজক) নিজের পরিচয় দিলেন এবং আমাকে জিজ্ঞাস করলেন, আমি কি ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য গান করতে চাই? আমি বলেছিলাম, কোক স্টুডিওতে কে কাজ করতে চায় না? শীঘ্রই ‘কানা ইয়ারি’ (চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি মুক্তি পায়) ট্র্যাকটি আসে, যা মুক্তির তৃতীয় দিনে ৩.২ মিলিয়ন ভিউসহ পাকিস্তানে শীর্ষ ট্রেন্ডিং ইউটিউব ভিডিও হয়ে ওঠে।
তিনি জানান, তার নাম ইভ থেকে এসেছে আর বি দিয়ে বেলুচ বুঝায়। উর্দু এবং বেলুচ ভাষায় গান লিখে থাকেন ও গান ৷ তার গানের মধ্যে রয়েছে কলম বোলেগা (দ্য পেন শ্যাল স্পিক) এবং তেরা জিসম মেরি মারজি (তোমার শরীর, আমার অধিকার)।
ইভা বি এর সংগীত যাত্রা শুরু হয়েছিল যখন তিনি এমিনেমের গানের ফোল্ডারসহ একটি কম্পিউটার পেয়েছিলেন। কৌতূহলী, তিনি লোকেদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন এই আশ্চর্যজনক সংগীত শৈলীকে কী বলা হয়। তখন বলা হয়, এটি র্যাপ। ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিখে শিখে ইভা বি ২০১৪ সালে র্যাপ করা শুরু করেন।
তিনি বলেন, র্যাপের মাধ্যমে আমি চেয়েছিলাম যে লোকেরা আমার গল্প এবং লিয়ারির নারীদের গল্প শুনুক। আমি এমন একটি জায়গা থেকে এসেছি, যেখানে মাত্র কয়েকটি মেয়ে কাজ করতে পেরেছিল এবং আমার সমাজ এমন একটি মেয়েকে সম্মানজনক বলে মনে করে না যে র্যাপ করে–আমি এটিকে চ্যালেঞ্জ করতে চেয়েছিলাম।
তিনি বলেন, তার মা সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু ভাই তাকে র্যাপ না করতে বলেছিলেন। ভাই বলেন যে, বন্ধুরা তাকে তার বোন একজন র্যাপার হওয়ার বিষয়ে উত্যক্ত করছে। যতবার ইউটিউব চ্যানেলে একটি র্যাপ গান আপলোড করতাম, তাদের বাড়িতে মারামারি শুরু হয়ে যেত। প্রতিবেশীরা এসে শুনত আমার ভাই আমাকে বকাঝকা করত এবং মারামারি করত।
ভাইয়ের অসম্মতির কারণে ইভা বি ২০১৫ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত র্যাপ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তবে তিনি নতুন গান লিখতে থাকেন।
তিনি বলেন, আমি ভেতরে জ্বলছিলাম এবং নারীদের ওপর সামাজিক বিধিনিষেধ নিয়ে লিখছিলাম।
২০১৯ সালে একটি গান লিখতে এবং পারফর্ম করার জন্য তাকে পাকিস্তানের বৃহত্তম মিউজিক স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ‘পাতারি’ থেকে যোগাযোগ করা হয়। তার কাছে বাদ্যযন্ত্র বা অডিও সরঞ্জাম ছিল না। তাই তিনি তার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে গানটি রেকর্ড করেন।
ওই গানের পর রাতারাতি, তিনি ‘গালি গার্ল’ নামে পরিচিতি পেতে শুরু করেন। এ ট্র্যাকের নামানুসারে ২০১৯ সালের বলিউড ফিল্ম ‘গালি বয়’ এর উত্থান।
ইভা বলেন, যদি আমাকে রেকর্ডিংয়ের জন্য যেতে হযতো তখন, তাহলে আমাকে আমার ভাইয়ের সঙ্গে মিথ্যা বলতে হতো। আমি বলি, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছি। এমনকি যখন আমাকে কোক স্টুডিওতে কানা ইয়ারির জন্য রিহার্সাল করতে হয়েছিল, তখন আমি বাসায় ফিরে মিথ্যে বলেছিলাম যে বন্ধুর বিয়েতে যোগ দিতে হবে। তবে সাম্প্রতিক সাফল্যের পরে, তবে, তার ভাই আর অস্বীকার করেন না।
২.২ মিলিয়ন তরুণ জনসংখ্যার লিয়ারি বাইরের বিশ্বের কাছে তার সহিংসতা, গ্যাংস্টার এবং মাদকের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত। এক দশকের ব্যবধানে সেখানে শত শত মানুষ নিহত হয়েছে। হাজার হাজার শহর ছেড়ে পালিয়েছে। পুলিশ অভিযানের পর ২০১৭ সালে সেখানে শান্তি ফিরে আসে।
ইভা বলেন, লিয়ারি তার ফুটবলার, শিল্পী এবং সঙ্গীতশিল্পীদের জন্যও বিখ্যাত কিন্তু দুঃখজনকভাবে সহিংসতা আমাদের পরিচয় হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, লিয়ারি বা সারা দেশের নারীরা প্রতিভাবান। কিন্তু অনেকে নিজেদেরকে নিকৃষ্ট মনে করেন এবং তাদের পুরুষ সহযোগীদের ওপর নির্ভরশীল, তাদের পরিচয় কারো মেয়ে, বোন বা স্ত্রী হওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।