
বসন্তের পড়ন্ত বিকেল। আকাশ থেকে ধীরগতিতে মাটিতে নেমে আসে একটি লাল রংয়ের প্রাইভেট হেলিকপ্টার। হেলিকপ্টারের শব্দ শুনে জড়ো হয় উৎসুক জনতা। এক সময় মাটি ছুয়ে থেমে যায় হেলিকপ্টারের পাখা।
তারপর দরজা খুলে নেমে আসেন বিয়ের সাজে সজ্জিত এক তরুণ বর। বিয়ে করে বউ নিয়ে যাওয়ার জন্য হেলিকপ্টারে উড়ে এসেছিলেন তিনি। কনের বাড়ির পাশে একটি বিদ্যালয়ের মাঠে নেমেছিল বরবাহী হেলিকপ্টার। কিন্তু বিধি বাম। বিয়ের ভাগ্য খোলেনি। বউ ছাড়াই ফিরে যেতে হলো বাড়িতে। শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার কান্দাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসী ও পূর্বধলা উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, হেলিকপ্টারে আসা ওই বরের নাম শাহজালাল মিয়া (৩০)। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বাঞ্ছারামপুর গ্রামের আলেক মিয়ার ছেলে তিনি। শাহজালাল মিয়ার সঙ্গে পূর্বধলার কান্দাপাড়া গ্রামের নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর পারিবারিকভাবেই বিয়ে ঠিক হয়। বরের বাবা আলেক মিয়া দুবাই প্রবাসী। ছেলের বিয়ে উপলক্ষে তিনি সম্প্রতি দেশে আসেন।
শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। এজন্য শাহজালাল স্বজনদের নিয়ে হেলিকপ্টারে গিয়েছিলেন কান্দাপাড়ার কনের বাড়িতে। বিয়ের আয়োজন চলাকালে একপর্যায়ে পূর্বধলা উপজেলা প্রশাসনের কাছে খবর আসে কান্দাপাড়ায় মহাধুমধামে বাল্যবিয়ের আয়োজন চলছে। ছুটে যায় উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। বিধি মোতাবেক কনের বিয়ের বয়স ১৮ বছর না হওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয় বিয়ে। পণ্ড হয়ে যায় মহাধুমধামে শুরু হওয়া বিয়ের সব আয়োজন। বিয়ে না করেই বউ ছাড়া চলে যেতে হয় বর সাজে সজ্জিত শাহজামাল মিয়াকে।
পূর্বধলা থানার ওসি মো. শিবিরুল ইসলাম বলেন, জন্ম সনদ অনুযায়ী কনের জন্ম ২০০৫ সালে। তার এখনো ১৮ বছর হয়নি। তাই বিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
পূর্বধলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স জানান, বাল্যবিয়ের খবর পেয়ে বিয়ে বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বিধি অনুযায়ী কনের বিয়ের বয়স হয়নি। পরে দুই পক্ষের মুচলেকা নিয়ে বিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়।