চলমান সংঘাতে ইউক্রেনে রাশিয়া ভ্যাকুয়াম বোমা বা থার্মোবারিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। প্রাণঘাতী এই বোমা একই আকারের বিস্ফোরক দিয়ে তৈরি অন্য সাধারণ বোমার চেয়ে অনেক বেশি বিধ্বংসী। এই বিস্ফোরণের এলাকায় যে কারো ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলে বলে বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।
সোমবার সুমি অঞ্চলে বিস্ফোরণে যে তেল পরিশোধনাগার বিধ্বস্ত হয়েছে সেখানে এই ভ্যাকুয়াম বোমা ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে মানবাধিকার সংগঠন এবং যুক্তরাষ্ট্রে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত। তবে নিরপেক্ষ কোনো সূত্র থেকে এই অভিযোগ যাচাই করতে পারেনি বলে বিবিসি জানিয়েছে।
কিভাবে কাজ করে বিধ্বংসী এই বোমা
ভ্যাকুয়াম বোমা বা থার্মোবারিক বোমা অ্যারোসল বোমা হিসেবেও পরিচিত। এই বোমায় থাকে একটি জ্বালানি তেলের কন্টেইনার এবং দুটি বিস্ফোরক চার্জার। এই বোমা দুই ধাপে কাজ করে। প্রথম ধাপের বিস্ফোরণে বাতাসে মেঘের মতো জ্বালানি তেল ছড়িয়ে পড়ে।
দ্বিতীয় ধাপে এই জ্বালানি তেলের মেঘ আবার বিস্ফোরিত হয়ে আগুনের গোলার মতো তৈরি হয়, যা বড় ধরনের শক ওয়েভ বা শব্দ তরঙ্গের ধাক্কা তৈরি করে এবং আশপাশের সব অক্সিজেন শুষে নেয়।

এ ব্যাপারে রয়াল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইন্সটিটিউটের গবেষক জাস্টিন ব্রঙ্ক বলেছেন, সাধারণ বিস্ফোরকে ৩০ শতাংশ জ্বালানি তেল থাকে আর ৭০ শতাংশ থাকে অক্সিডাইজার। কিন্তু থার্মোবারিক বোমায় শুধু জ্বালানি তেল থাকে যা বাতাস থেকে সব অক্সিজেন শুষে নেয়। কিছু ওয়ারহেডের চেয়েও এটি অনেক বেশি শক্তিশালী।
কিভাবে ব্যবহার করা হয় এই বোমা
এই বোমা রকেট আকারে নিক্ষেপ করা যায় অথবা বিমান থেকে ফেলা যায়। এই বোমা বিভিন্ন আকারের হতে পারে। যেমন হয়ত একজন সেনার অবস্থান লক্ষ করে ছোড়ার মতো হাতে বহনকারী, আবার রকেট লঞ্চার দিয়ে নিক্ষেপ করা যায় এমন বড়ই হতে পারে এই বোমা।
কেমন প্রভাব ফেলে এই বোমা?
ভ্যাকুয়াম বোমার ফলে ভয়াবহ তাপ ও চাপ সৃষ্টি হয়। এই বোমার একদম মাঝখানে যারা পড়বে তারা নিমিষেই বাষ্পের মতো উড়ে যাবে।
আর এর আশপাশে যারা থাকবে শব্দ তরঙ্গের ধাক্কায় তাদের শরীরের ভেতরের অঙ্গে বড় ধরনের আঘাত পাবে।
এ ব্যাপারে গবেষক জাস্টিন ব্রঙ্ক বলেন, এই বোমায় মৃত্যু হয় মূলত এর কারণে ফুসফুস বা এরকম অভ্যন্তরীণ অন্যান্য অঙ্গ শরীরের ভেতরেই ফেটে চুরমার হয়ে যায়। বদ্ধ যায়গায় শব্দ তরঙ্গ আরও বড় আকার ধারণ করে। তাই যারা বদ্ধ কোনো প্রকোষ্ঠে যারা লুকিয়ে আছেন তাদের জন্য এটি বিশেষভাবে বিধ্বংসী। এই বোমা কয়েক হাজার ডিগ্রির উচ্চ তাপ সৃষ্টি করে। যার ফলে শরীর ভয়াবহভাবে দগ্ধ হয়।
তবে কতটা ক্ষতি এই বোমা করবে তা তার আকারের উপরে নির্ভর করে।
কোথায় কোথায় এই বোমা ব্যবহার করা হয়েছে?
১৯৬০-এর দশক থেকে রাশিয়া ও পশ্চিমা বাহিনী ভ্যাকুয়াম বোমা ব্যবহার করেছে। আফগানিস্তানে গুহার মধ্যে অবস্থান নেওয়া আল-কায়েদা যোদ্ধাদের আক্রমণে মার্কিন বাহিনী এই বোমা ব্যাবহার করেছে।
২০০০ সালে রাশিয়া চেচনিয়াতে এই বোমা ব্যবহার করেছে বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলো দাবি করেছে।
সর্বশেষ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অভিযোগ করেছে, সিরিয়াতে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উপরে হামলায় রুশ এবং সরকারি বাহিনী এই বোমা ব্যবহার করেছে।
ইউক্রেনের শহরাঞ্চলে যদি ভ্যাকুয়াম বোমা ব্যাবহার করা হয় তাহলে সেখানে বেসামরিক নাগরিক হতাহতের সংখ্যা হবে মারাত্মক ভয়াবহ।