
সাস্কেচুয়ানের দুটি আবাসিক স্কুলে ৫৪টি কবরের সন্ধান পাওয়ার কথা জানিয়েছে পূর্ব সাস্কেচুয়ানের একটি ফার্স্ট নেশন। স্কুল দুটিতে ভর্তি হওয়া শিশুদের দেহাবশেষ কবরগুলোতে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভুগর্ভস্থ রাডারের অনুসন্ধানে একের পর এক ছবি সামনে আসার পর মঙ্গলবার কিসিকুস ফার্স্ট নেশনের সদস্যদের একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে দেখা যায়। কমিউনিটির জ্যেষ্ঠ নাগরিকরা যে গল্প প্রজন্মের পর প্রজন্ম বলে আসছেন ছবিগুলো যেনো সেই কথাই বলছে। এসব গল্প এখন আর অবিশ^াস করার সুযোগ বিশ^বাসীর কাছে নেই বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের নেতা টেড কুয়েজান্স। তিনি বলেন, এটা যে তারা শোনেননি এমন নয়। তারা আমাদের ভুক্তভোগীদের বিশ^াস করতে চান নি।
কবরগুলো পাওয়া গেছে রেগিনার ২৬৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে ম্যানিটোবা সীমান্তের কাছে কামসাকের নিকটবর্তী ফার্স্ট নেশনের জমির ওপর নির্মিত সেন্ট ফিলিপ’স ও ফোর্ট পেলি রেসিডেন্সিয়াল স্কুল প্রাঙ্গণে। ফোর্ট পেলিতে ৪২টি এবং সেন্ট ফিলিপি’স স্কুল প্রাঙ্গণে আরও ১২টি ভুগর্ভস্থ রাডার স্থাপন করা হয়। কুয়েজান্স বলেন, সেন্ট ফিলিপ’স পাহাড়ে কোনো কিছু পাওয়ার আশা আমাদের ছিল না। এটা আমাদের কমিউনিটিকে হতবাক করেছে। সেখানে একটি আবাসিক স্কুল মনুমেন্ট রয়েছে। আমরা সেখানে জড়ো হয়েছিলাম। আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য মোতাবেক কবরের ওপর পা রাখা খুবই কদর্য কাজ। কিন্তু আমাদের সকলেরই সম্ভবত মৃতদেহগুলো যেখানে ছিল সেখানে পা পড়েছিল।
তবে ফোর্ট পেলি নিয়ে অতোটা আশ্চর্যের কিছু ছিল না। কারণ, এলাকাটি ঘিরে বহু গল্প চালু আছে। কুয়েজান্স বলেন, আমার ধারণা মৃতদেহগুলো সেখানে কবর দেওয়া হয়েছিল। কারণ, সেখানে এক সময় হেডস্টোন ছিল এবং শিশুদের কারও নাম উল্লেখ নেই। হেডস্টোনগুলোর কি হয়েছে এবং কেনই বা সেগুলো সরিয়ে ফেলরা হয়েছে কমিউনিটি তা জানতে চেয়েছিল।
মাত্র দুই হেক্টর জমিতে জরিপ চালাতে গবেষকদের দুই মাস সময় লেগে যায়। এজন্য তারা জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের মৌখিক বিবৃতি শোনেন। কিন্তু তুষারের কারণে কাজ বন্ধ রাখতে হয়। আরও চার হেক্টরের জরিপ এখনও বাকি আছে। স্বাভাবিকভাবেই আরও কবরের সন্ধান পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান কুয়েজান্স।
ফার্স্ট নেশনটির প্রধান লি কিচেমোনিয়া বলেন, যে জায়গায় লোকজন প্রতিদিনই হেটে বেড়িয়েছেন সেখানে অচিহ্নিত কবর থাকার বিষয়টি মেনে নেওয়া বাসিন্দাদের জন্য খুবই শক্ত। এখানে সম্ভবত খুনের পর শিশুদের কবর দেওয়া হয়।
কারা আবাসিক স্কুলে গিয়েছিলেন সে সংক্রান্ত ঐতিহাসিক দলিল পেতে রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ (আরসিএমপি), ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন এবং রেগিনার রোমান ক্যাথলিক আর্কডিওসিসের সঙ্গে কাজ করছে কিসিকুস ফার্স্ট নেশন।
পোর্ট পেলি স্কুলটি ১৯০৫ থেকে ১৯১৩ সাল পর্যন্ত চালু ছিল। ১৯১১ সালে স্কুলের অধ্যক্ষেল মৃত্যু হয়। পরে জানা যায়, তিনি মদ্যপ ছিলেন এবং স্কুলের সবাইকে শাসাতেন।
সেন্ট ফিলিপ’স স্কুলটি চালু হয় ১৯২৭ সালে এবং ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত চালু ছিল স্কুলটি। স্কুলটিতে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের বিস্তর ঘটনা রয়েছে, যা স্কুলের শেষ দশকে এর সুপারভাইজর দায়িত্ব ছাড়তে বাধ্য হন।