
মুখে রা নেই, বিমর্ষ। বেদনা অনুধাবনশক্তি হারিয়েছেন কবেই। তারপরও দুই চোখ স্যাঁতসেঁতে। হাসপাতালের বারান্দার এককোণে একাকী বাস। কোথাও কেউ নেই। ২০ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী ওই নারীর গর্ভে অযাচিত তিনটি ভ্রুণ।
সোমবার রাতে দুনিয়াও দেখল ঠিকঠাক। তিনটিই ছেলে সন্তান। জন্মের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এক নবজাতক হাওয়া। চোখের সামনে নাড়িছেঁড়া ধন চুরি হয়ে যাচ্ছে দেখেও ওই নারী বরাবরের মতো নির্বাক। ওই মায়ের যে নেই প্রতিবাদ করার অনুভূতি। কারও অনুমতি ছাড়াই অন্য দুই নবজাতককে কোলে তুলে নিয়ে বাসার পথে হাঁটেন দুই নিঃসন্তান দম্পতি। মর্মস্পর্শী এ ঘটনা পাবনা জেনারেল হাসপাতালের গাইনি বিভাগের।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালের বারান্দায় এখন মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন পরিচয়হীন এই প্রসূতি। এক বছর হাসপাতালের যত্রতত্র ঘুরতে দেখা যায় এই নারীকে। সম্প্রতি জানা যায়, অভিভাবকহীন প্রতিবন্ধী সেই নারী অন্তঃসত্ত্বা। পরবর্তীকালে তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার রাতে তার কোলে আসে তিনটি ছেলে সন্তান। রাত না পেরোতেই এক ছেলে চুরি হয়ে যায়। অন্য দুই নবজাতককে দত্তক নিয়েছে বলে দাবি করেছেন দুই নিঃসন্তান দম্পতি। তবে তারা নিজেদের পরিচয় দিতে রাজি হননি।
পাবনা হাসপাতালের সিনিয়র নার্স আফরোজা পারভিন বলেন, হাসপাতালে অনেক দিন ধরে এই নারী ভর্তি আছেন, তার চিকিৎসা আমরা দিয়েছি।
পাবনা জেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কামরুন্নাহার জলি বলেন, ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা হওয়া প্রতিবন্ধী ওই নারীর পুনর্বাসনের দাবি জানাচ্ছি। তার সন্তানরা রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত ব্যক্তিদের কাছে দত্তক দেওয়ার দাবিও করেন তিনি।
পাবনা হাসপাতালের ডা. ওমর ফারুক মীর বলেন, হাসপাতালে লোকবল সংকট থাকায় কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাবনা সদর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জুয়েল বলেন, এ ঘটনায় এখনও থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ঘটনাটি জানার পর পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। তদন্তে চোর চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।