0 C
Toronto
সোমবার, মার্চ ১৭, ২০২৫

স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা

স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা
ফাইল ছবি

শুক্রবার রাত।

কাল ছুটি, অফুরন্ত সময়। রাত দুটার আগে ঘুমাতে যাবার প্রশ্নই আসে না। সকাল নয়টায় ঘুম থেকে উঠলেই হবে।
আজকে কেনজানি একটু আগেই; সাড়ে সাতটার দিকে ডিনার সেরে ফেলেছি। বেশি ঝামেলায় যাবো না। রান্নাঘরের কেবিনেট খুলে ছয়টা বাদামের কৌটা নামিয়ে কাউন্টারে রাখলাম। এগুলোর কথা মনেই থাকে না। একটায় চীনা বাদাম (ভাজা), একটায় ওয়ালনাট, একটাতে কাজু, একটাতে আলমন্ড, একটাতে কাঁচা পিস্ট্যাশিও আর আরেকটাতে পিস্ট্যাশিও খোসাশুদ্ধ লবন দিয়ে ভাজা। পিস্ট্যাশিও বাদাম দেখতে অনেকটা

- Advertisement -

ছোটোখাটো ঝিনুকের মতো; খোলস শক্ত হলেও নখ ঢুকিয়ে চাপ মারলে ঝিনুক খুলে ভেতর থেকে মজাদার শাঁস বেরিয়ে আসে।
বাদামগুলার বয়স হয়ে যাচ্ছে, অপচয় করা ঠিক হবে না। তাছাড়া গিন্নি কবে পায়েস, সুজি, হালুয়া, লাড্ডু বানাবে তারও ঠিক নাই। তাই একটা বাটিতে সব প্রকারের বাদাম আধা মুঠো করে নিয়ে পাঁচমিশালি বানিয়ে ফেললাম। ঝাল চানাচুর খুঁজে বের করে দুই মুঠো ছেড়ে দিলাম। চানাচুর যখন দিলামই, একটু কাঁচামরিচ আর পিঁয়াজ কী দোষ করলো? ফ্রিজ থেকে লাল পেঁয়াজ আর চারটা কাচাঁমরিচ কুচি করে বাটিতে ছেড়ে দিলাম। গত কয়েকমাস ভুল করে আমরা সর্ষে তেলের পরিবর্তে সিসামি (তিলের তেল) খেয়েছি। দুটা বোতল দেখতে এক, কোম্পানিও এক। খিচুড়ির ঝাল মাখানো, মুড়ি মাখানো তে দিয়ে দেখতাম কোনো ঝাঁঝ নাই। কত যে গালিগালাজ করছি। তারপর একদিন খেয়াল করে দেখি ওটা সিসামী। মানুয়ষ না জেনে কত ভুল ধারণা যে করে..

বাদাম মাখানো ঝিলিক দিতে থাকে। পাশেই ছিল পটেটো চিপস, সুরোজ কোম্পানির মোটা মোটা। বাংলাদেশে পথে ঘাটে পিওর আলুর চিপস এর মত। ওখান থেকে ক’টা তুলে নিলাম।

সোফায় বসে, টেবিলে পা তুলে ওগুলো মুখবিবরে চালান করতে থাকি। উদ্ভিজ্জ প্রোটিন ভালো জিনিস। সোয়া বারোটা বাজে। নিউজ দেখে ভালো লাগলো। পুতিন ব্যাটা সৈন্য নিয়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। প্রেস্টিজ বাঁচাতে বলছে তাদের মিলিটারি অপারেশন আপাতত শেষ। মাইরের উপর কিছু নাই। তবে পাগল খেপলে আরো বেশি সমস্যা। যদি এটম বোমার সুইচ টিপেই দেয়? আল্লাহ জানে কপালে কী আছে!
প্রচুর ঝাল। এখন আগুন গরম সুমিষ্ট চা পান না করলেই নয়। আমাদেরও স্বাধীনতা দিবস শুরু হয়ে গেছে! বাংলাদেশে এখন সকাল সোয়া দশটা।
মনটা আনন্দে ভরে উঠলো। আহ, স্বাধীনতা! বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ দিন।
প্রাণ ভরে শ্বাস নিয়ে চায়ের পানি চড়িয়ে দিলাম। যেহেতু বিশেষ দিন, তাই ছেলের জন্মদিনের কেকটা সদ্ব্যবহার করবো। ওখান থেকে বড় একটা সাইজ কেটে নিয়ে উদাস ভঙ্গিতে কামড় বসালাম। তার আগে উপর থেকে চেঁছে আইসিং সুগারের প্রলেপ ফেলে দিলাম, অত চিনি খাওয়া ভালো না। আচ্ছা, স্বাধীনতা দিবস জন্মদিন, না বিজয় দিবস জন্মদিন? মানুষের বাচ্চার জন্মদিন পালন করা হয় জন্ম হবার পর। মা প্রেগন্যান্ট হবার সময় কাউন্ট হয় না। তবে আমার মতে মানব ডিম্বানু-শুক্রাণু মিলনের সময়টাকেই মানুষের জন্মদিন ধরা উচিত। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কাল আর মানব শিশু মাতৃগর্ভে থাকাকালীন সময়টা প্রায় একই; নয় মাস। দারুন তো!

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেশি কিছু খেতে মন চাইছে। প্রাণের কাঁচা সমুচা, স্প্রিং রোল ছাড়ে পেয়ে বেশ কয়েক বক্স কিনে রেখেছি। তবে রাত-বিরাতে ভাজাভুজি না করাই ভালো, ফায়ার অ্যালার্ম বাজলে বিপদ। ফ্রিজ খুলে একদম তলার পেছনের সাইড থেকে একটা বক্স বের করে আনলাম। কালামারী (স্কুইড রিং) আর চিংড়ির ঝোল, প্রচুর হার্বস আর অলিভ অয়েলে চুবানো। জিনিসটা দারুন, কদিন আগে আমার খালাতো বোনজামাই অটোয়া এসে কিনে এনেছিল। বেঁচে যাওয়া কিছু পরে খাবো বলে লুকিয়ে রেখেছিলাম।

বক্সটা হাতে নিয়ে উপর-নিচ দুলিয়ে ওজন অনুভব করার চেষ্টা করি। একটু কম কমই মনে হলো। যাক গা, আন্দাজে কাউকে দোষ দেওয়া ঠিক না। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, অনুমান হলো সবচাইতে বড় মিথ্যা। আর মিথ্যা মানেই চরম গুনাহ।

সি ফুড দেখলে আমার মাথা ঠিক থাকে না। গরম না করেই একটা কালামারী মুখে পুরে চামুচে অলিভ অয়েলের ঝোল মুখে ঢেলে দিয়ে চিবাতে থাকি। অভূতপূর্ব স্বাদে চোখ বন্ধ হয়ে আসলো। একটা বড়োসড়ো চিংড়িও চিবাতে থাকে। থকথকে লিক কিংবা পিঁয়াজে ঠাসা লক্ষ-কোটি সবুজ জড়িকণার ঝোল। ঝোল সরিয়ে দেখি ভেতরে দুইটা চিংড়ি আর দুটা কালামারী এখনো রয়ে গেছে। ফাইনালি দুই চামচ ঝোল মুখে দিয়ে বাটিটা আবার একদম কর্নারে লুকিয়ে রাখলাম। ব্রকোলি আর লেটুসের ঝাঁক দিয়ে যতটা সম্ভব আড়াল করে রাখলাম।
আরেকদিন হবে।

রান্নাঘরের লাইট বন্ধ করার আগে সবকিছু এক নজর বুলাতেই চোখে পড়লো ঢাকনা দেওয়া রহস্যময়ী পিরিচ; তুলতেই দেখি এঁটো ডিম পোচের ধ্বংসাবশেষ। মেয়েটা কুসুম আর আশেপাশের সাদা খেয়ে পরিধির মচমচে ভাজা সাদা অংশের ফিতেটা রেখে দিয়েছে। ফিতেটা মুখে পুড়ে দিলাম। অসাধারণ! অল্প কিছু কুসুম আর লবনাক্ত সাদা অংশ মাধুর্য অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। ডিম পোচ পুরানা হলে কি স্বাদ আরো বাড়ে?
ঘুমানো দরকার।

আজ অল্পের উপর দিয়েই চালিয়ে দিলাম।
আসলে নিজের কী নাই, সেটা না দেখে যেমন নিজের কি আছে সেটার উপর নজর দেওয়া উচিত; তেমনি আমি কি খাইসি, সেটা না দেখে কী খাই নাই; সেটা দেখা উচিত। এই যেমন ফ্রিজে দই ছিল, চিকেন ফ্রাই ছিল, পিজা ছিল, গোলাপজামুন রসগোল্লা ছিল..
শুভ রাত্রি।
সবাইকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা I

(লাইট বন্ধ করে বেডরুমে যাবার আগে ডাইনিং টেবিল থেকে একটা চকলেট ডোনাট নিয়ে চিবাতে চিবাতে দোতালায় উঠতে থাকি। এগুলা একদিন পরেই লোহার মতো খটখটে শক্ত হয়ে যায়, আর খাওয়া যায় না। কাল অফিসের মিটিং এ বেঁচে গিয়েছিলাম, বাসায় না আনলে ক্লীনার ফেলে দিতো। সাথে কিছু ব্রাউনিও ছিল, নেই নাই। একটু সংযম আর কি..)

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles