
জাল নোট তৈরির কারিগর তাইজুল ইসলাম লিটন। মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) লালবাগের নবাবগঞ্জ বেড়িবাঁধ এলাকায় নির্মাণাধীন একটি ছয়তলা বিল্ডিংয়ের ফ্ল্যাট থেকে তাকে গ্রেফতার করে গুলশান গোয়েন্দা পুলিশ। জাল নোট তৈরির অভিযোগে এর আগেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছিল সে। সেই মামলায় তিন বছর জেলও খাটে লিটন। ১২ বছর ধরে জাল নোট তৈরি করছে সে। সম্প্রতি প্রতি মাসে কোটি টাকার জাল নোট তৈরি করেছে লিটন। জাল নোট তৈরিতে কাগজ, রঙ, জলছাপসহ যা যা প্রয়োজন, সবকিছুই ছিল তার নখদর্পণে। জাল ১০০০ টাকা, ৫০০ টাকা, ১০০ টাকা ছাড়াও রয়েছে ভারতীয় ৫০০ রুপির নোটও।
মঙ্গলবার লিটনসহ ৪ জনকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। গ্রেফতার অপর ৩ জন হলো—জাহাঙ্গীর আলম, আলী হায়দার ও মহসিন ইসলাম মিয়া। এদের মধ্যে জাল নোট তৈরিতে সহায়তা করতো আলী হায়দার। ডিলার হিসেবে বিভিন্ন স্থানে নোট ছড়িয়ে দিতো জাহাঙ্গীর ও মহসিন।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের জাল নোট। জাল রুপিও উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া জাল টাকা ও রুপি তৈরি করার জন্য ব্যবহৃত ল্যাপটপ, প্রিন্টার, বিভিন্ন কালারের কালি, স্ক্রিন ফ্রেইম, বিশেষ ধরনের কাগজ, কেমিক্যাল, স্ক্যানার মেশিন, কাটার, স্কেল ইত্যাদি জব্দ করা হয়েছে।
জাল নোট তৈরির কারিগর তাজুল ইসলাম লিটন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জানায়, জাল নোট তৈরিতে যা যা লাগে, যেমন- কাগজ, সুতা, রঙ, কেমিক্যাল, জাল ছাপের প্রিন্টার- সবই তার কাছে আছে। জাল ছাপ দিয়ে কীভাবে নোট তৈরি করতে হয় তা তার জানা। বিশেষ ধরনের কাগজ কিনে জোড়া লাগানো, একটি কাগজে বঙ্গবন্ধু বা মহাত্মা গান্ধির ছবি স্ক্রিন প্রিন্টিং বা জলছাপ দেওয়ায় বিশেষ পারদর্শী সে। জাল নোট তৈরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এর আগেও গ্রেফতার হয়েছিল লিটন। তিন বছর জেল খাটার পর আবারও জাল নোট তৈরিতে জড়িয়ে পড়েছে সে। বেশি লাভের আশায় সে এই কাজ করে আসছিল। ডিলারদের মাধ্যমে এই নোট বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিতো।
গোয়েন্দাদের লিটন জানায়, এই কাজের সঙ্গে সে ১২ বছর ধরে জড়িত। কামরুজ্জামান নামে এক ব্যক্তি নীলক্ষেতে গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ করার সময় পাসপোর্ট এডিটিংয়ের কাজ দিয়েছিল তাকে। সে কাজটি সঠিকভাবে করতে পারায় পরে ওই ব্যক্তি তাকে জাল নোট তৈরির কাজের অফার দেয়। সেই থেকে জাল নোট তৈরির সঙ্গে জড়িয়ে পড়া তার। এক লাখ টাকার জাল নোট তৈরি করতে খরচ হয় তিন হাজার টাকা। বিক্রি করা হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। বিভিন্ন হাত ঘুরে এসব জাল টাকা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। জাল নোট বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য রয়েছে অসংখ্য ডিলার।
জাল রুপি কীভাবে ভারতে যায় এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাতে না পারলেও লিটন কয়েকজনের বিষয়ে গোয়েন্দাদের তথ্য দিয়েছে। রাজশাহীর বশির খসরু, গোপালগঞ্জের জামিল, পঞ্চগড়ের মোস্তফা, মানিকগঞ্জের নাজমুলসহ রাজধানীর বেশ কয়েকজন ডিলার এই টাকা সরবরাহ করতো। তারাই জাল রুপি ভারতে নিয়ে যেত।
গুলশান গোয়েন্দা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, ‘ঈদকে সামনে রেখে এ ধরনের জাল নোট তৈরি চক্রের সদস্যদের তৎপরতা বেড়ে যায়। জামিনে বেরিয়ে আবার জাল নোট তৈরির সঙ্গে জড়িতরা আবারও একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। একটি রুমে বসে স্বল্প সময়ে বেশি উপার্জন করা যায় বলেই কারাভোগের পর আবারও জাল নোট তৈরি সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে তারা। এ ব্যাপারে আমাদের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন