
সফরে অর্থাৎ জার্নিতে দোয়া কবুল হয়। সফর করা একটা হাঙ্গামা, পেরেশানি, এক ধরনের ধকল; আর তাই হয়তো এই পেরেশানির মাঝেও সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করতে পারলে, তার অনুগ্রহের পরিমাণ বেড়ে যায়।
কিংবা সফর ভ্রমণে দুনিয়ার সৌন্দর্য্যে বিমোহিত হয়ে যখন ভাববে, এত্তো সুন্দর যদি দুনিয়া হয়, বেহেশত তো নিঃসন্দেহে এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার চেয়ে লক্ষ কোটি মিলিয়ন বিলিয়ন ট্রিলিয়ন গুণের চেয়েও সুন্দর! দুনিয়ার সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়েও যখন সৃষ্টিকর্তাকে না ভুলে সিজদা আর প্রার্থনায় নিমগ্ন হবে, নিঃসন্দেহে সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহের পরিমাণ বেড়ে যাবে ততোধিক বেশি!
নতুন নতুন জায়গায় গিয়ে নামাজ – সিজদা – প্রার্থনা, যেন মাটিকে সাক্ষী করে রাখা; আমি বলি জমি কিনে রাখা। জমিনের যেখানে যেখানে সিজদা হবে, হাশরের ময়দানে সেই জায়গাগুলো স্বাক্ষী প্রমাণ হিসাবে এগিয়ে আসবে – আখিরাতের সঞ্চয়! অথচ আমরা দুনিয়ার লাভকে সামনে রেখে জমি কিনি। আমার “অজুঘর” যেটা আখিরাতের সঞ্চয়, সেই লেখা যাদের মন ছুঁয়েছিল তাদের জন্য দোয়া।
মানুষ তার দুনিয়াবি প্রয়োজনে দেশ থেকে দেশান্তরে সফর করে; সফলতা আর কামিয়াবী খুঁজে পাওয়ার আশায়। কিন্তু দ্বীনের প্রয়োজনে আমরা ঘর থেকে তিন দিনের জন্য বের হতে পারি না;
অথচ আল্লাহর ওয়াদা “যে আমার দ্বীনের জন্য, দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ঘর থেকে বের হবে তাকে আমি হেদায়েত দিব”। আর আমরা ঘরে বসে বসেই হেদায়েতের জন্য দোয়া করি, দোয়া চাইতে থাকি জনে জনে।
অনেকেই বলে “দোয়া করবেন”; কেন দোয়া চাইলো অনেকেই হয়তো ভেবে দেখি না। আমি অনেক সময় জানতে চাই, কিসের জন্য দোয়া করবো, কি বিষয়? আমি ব্যাক্তিগতভাবে দুনিয়া আর আখিরাতের শান্তির জন্য দোয়া চাই।
বর্তমান সময়ে দ্বীনের জন্য ঘর থেকে বের হওয়া মনে শুধু মসজিদ যাওয়া আর হজ্ব পালনের জন্য ঘর থেকে বের হওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রেখেছি। অথচ নিজের ঘর থেকে শুরু করে ভাই বোন, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু মহল, প্রতিবেশী, শুভাকাঙ্ক্ষীসহ দেশ বিদেশের লক্ষ্য কোটি মানুষ দ্বীনের ব্যাপারে, ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের ব্যাপারে উদাসীন বেখবর সেদিক নিয়ে একটুও ব্যথিত নই!
আল্লাহ্ সুবহানাহু তাআলা শুধু আমাদের জাগতিক প্রয়োজনে নয়, তার দ্বীনকে প্রচারের জন্য ঘর থেকে প্রতি দিন, প্রতি মাসে, প্রতি বছর কিছু সময় ঘর থেকে বের হবার তৌফিক দান করুক।
সফরে ঘর থেকে বের হবার সময় দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে বের হবার অভ্যাস অনেক বছরের, একটা সুন্নতের উপর আমল করা উদ্দেশ্য।
যেখানে যাবো, তাদের জানিয়ে যাওয়ার শিক্ষা পেয়েছি আব্বুর কাছ থেকে। আব্বু বরাবরই বলতেন, কাউকে না জানিয়ে কারো বাসায় হঠাৎ হাজির হওয়া ইসলামিক আদবের খেলাপ। পরে জেনেছি, এটাও একটা সুন্নত; এমনকি নিজের বাড়ির কাছে এসে প্রথমে মসজিদে অবস্থান করে বাসায় খবর পৌঁছানো। আর এখনতো ফোন আছে। এই সুন্নত এর উপর চেষ্টা করি আমল করার। যদিও দ্বীনের উপর আমল যেন দিনদিন সেকেলে হয়ে যাচ্ছে – আমরা এর আধুনিক নাম দিয়েছি সারপ্রাইজ!
ব্রামটন, অন্টারিও, কানাডা