
মাত্র দুই বছর আগেও টরন্টোর অধিকাংশ নাগরিক তাদের বসন্ত কাটিয়েছিলেন ভ্যাকসিনের খোঁজে টুইটার ফিড ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ভ্রমণ করে। কিন্তু বৃহস্পতিবার স্থানীয় ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইনকে প্রশংসায় ভাসালেন টরন্টোর কর্মকর্তারা। কারণ, সিটি কর্তৃপক্ষ এদিন ৭০ লাখ তম ডোজ ভ্যাকসিন প্রদান করেন।
টরন্টোর জনস্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. এইলিন দ্য ভিলা মেয়র জন টরির উপস্থিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নগরীর ৩০ লাখ মানুষের মধ্যে ৭০ লাখ ডোজ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে। এটা খুব বেশি আমি বলবো না। আমরা এই মাইলস্টোন স্পর্শ করতে পারবো কিনা এক বছর আগে যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করতেন তাহলে আমরা তা করতে পারবো বলে আমার বিশ্বাস হতো না।
২০২১ সালের মে মাসে টরন্টোর অধিকাংশ মানুষ প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিনের জন্য পপ-আপ ক্লিনিক ও গণ ভ্যাকসিনেশন কেন্দ্রগুলোর পেছনে ছুটেছেন। এখন অধিকাংশ ফার্মেসি, সিটি নির্ধারিত ভ্যাকসিন সেন্টারেই ভ্যাকসিনের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। এরইমধ্যে সিটিতে প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন ৯১ শতাংশ মানুষ। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন টরন্টোর প্রায় ৮৮ শতাংশ মানুষ। তবে তৃতীয় ডোজ গ্রহণের ক্ষেত্রে টরন্টোবাসী এখনও পিছিয়ে আছেন। ৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে তৃতীয় ডোজ গ্রহণের হার এখনও ৫৩ দশমিক ৫ শতাংশের কাছাকাছি। তবে ১৮ ও তার বেশি বয়সীদের মধ্যে এ হার ৬৫ দশমিক ৭ শতাংশে পৌঁছেছে।
ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেলেও অনেকেই সব ডোজ নেওয়া হয়ে গেছে আত্মতৃপ্তিতে ভুগতে পারেন, যা নিয়ে উদ্বিগ্ন মেয়র জন টরি। তিনি বলেন, নগরী ও নগরবাসী যে নিজেদের মহামারির ভিন্ন পর্যায়ে দেখতে পাচ্ছেন তাতে আমি খুশি। কারণ, এই পর্যায়ে জীবন অনেকটাই স্বাভাবিকতার কাছাকাছি। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ ডোজ নিয়ে আমাদের এখনও করার অনেক বাকি এবং জনগণের এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো উচিত নয় যে, চেষ্টার সময় শেষ হয়ে গেছে এবং ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রয়োজনীয়তাও ফুরিয়ে গেছে।
অতি সংক্রামক ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের কারণে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অন্টারিওতে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ব্যাপকহারে বেড়েছে। বিজ্ঞানীদের হিসাব বলছে, অন্টারিওতে বর্তমানে প্রতিদিন ৮গ হাজার থেকে ৯০ হাজার মানুষ নতুন করে কোভিড-১৯ এ সংক্রমিত হচ্ছে। তবে ভ্যাকসিনেশন ও ওমিক্রন অতোটা গুরুতর না হওয়ায় এর প্রভাব সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। বিদ্যমান ভ্যাকসিন আগের ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে তুলনামূলক কম সুরক্ষা দিলেও গুরুতর অসুস্থ হওয়ার বিরুদ্ধে ভালোই কাজ করছে এসব ভ্যাকসিন।
কুইবেকের পাবলিক হেলথ ইনস্টিটিউট পরিচালিত সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, দুই ডোজ ভ্যাকসিন আক্রান্ত ব্যক্তিদের হাসপাতালে ভর্তি ঠেকাতে ৭৭ থেকে ৮৫ শতাংশ কার্যকর। তৃতীয় ডোজ নিয়ে এ কার্যকারিতা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৮ থেকে ১০০ শতাংশে।
৬৭ বছর বয়সী জন টরি বলেন, তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হলো ভ্যাকসিন না নিলে আমার অবস্থা হয়তো আরও মারাত্মক হতো। আমার বিশ^াস তিন ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়ার কারণে দেড় দিনেই উপসর্গ দূর হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে কোনো ধরনের প্রশ্নের অবকাশ আছে বলে আমি মনে করি না। সাতদিন হাসপাতালে থাকার চেয়ে সাতদিন বাড়িতে অনেক ভালো এবং এটাই সত্য।