
পৃথিবীর কোথাও হিন্দুদেরকে হত্যা করা হলে যাদের মন আনন্দিত হয়, সেই সব মানুষগুলির মধ্যে সমস্যা আছে। পৃথিবীর কোথাও মুসলমানদের হত্যা করা হলে যাদের মন আনন্দে উদ্বেলিত হয়, সেই সব মানুষগুলির মধ্যে সমস্যা আছে।
একইভাবে খ্রিস্টান, বৌদ্ধ কিংবা ইহুদিদেরকে হত্যা করা হলে যাদের মন আনন্দিত হয়, তাদের মধ্যে সমস্যা আছে।
যারা আনন্দিত হন তারা প্রকৃত অর্থে একজন মানুষকে মানুষ হিসাবে দেখেন না। তারা মানুষকে দেখেন হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান,বৌদ্ধ কিংবা ইহুদি হিসাবে। যখন একজন মানুষ অন্য একজন মানুষকে ধর্মিয় পরিচয়ে দেখেন বা বিচার করেন তখন তার মধ্যে মানবিক গুন গুলি লোপ পেয়ে তার মনের মধ্যে হিংসা,বিদ্বেষ প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠে।
মানুষকে ধর্মিয় পরিচয়ে না দেখে মানুষকে মানুষ হিসাবে দেখলে হিংসা, বিদ্বেষ মনের মধ্যে আসার কথা নয়।
এর কারন হচ্ছে, মানুষ হিসাবে পরিচয়টা আপনার, আমার মধ্যে সমতা বিধান করে। তখন আপনিও মানুষ, আমিও মানুষ। আপনার আর আমার মধ্যে পরিচয়ের ক্ষেত্রে কোন বিভাজন রেখা নেই।
যখনই আপনি ধর্মিয় পরিচয় আরোপ করবেন তখন আপনার কাছে কেউ হয়ে যাবে হিন্দু, কেউ বা মুসলমান, কেউ বা খ্রিস্টান, আবার কেউ বা বৌদ্ধ। তখন আপনার আর আমার মধ্যে বিভাজন তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। তখন আমার আর আপনার মধ্যে মানুষ পরিচয়টা লোপ পেয়ে ধর্মিয় পরিচয়টা বিভাজন রেখে টেনে দিবে।
যার মনের মধ্যে ধর্মিয় পরিচয়টা শেকড় গেড়ে বসে গেছে তিনি আর এর মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন না। তিনি যদি নিজের থেকে স্বেচ্ছায় পরিবর্তিত হতে চান সেটা অন্য বিষয়। তিনি ধার্মিক হওয়া স্বত্তেও যদি মানুষকে ধর্মিয় পরিচয় দিয়ে বিচার না করেন কিংবা ধর্মিয় পরিচয়ে না দেখেন তবে সেটিকে স্বাগত জানানো যায়। কিন্তু এমন মানুষের সংখ্যা পৃথিবীতে কত?
আপনার মানুষ হিসাবে পরিচয়টা কিভাবে সনাক্ত করবেন? কিভাবে বুঝবেন আপনি সবার আগে মানুষ?
এর উত্তর আপনি নিজেই খুজে পেতে পারেন।
হিন্দু হোক, মুসলমান হোক, খ্রিস্টান হোক কিংবা বৌদ্ধই হোক, যে কোন ধর্মের মানুষ হত্যায় আপনার মন যদি সমানভাবে কাদে, সমানভাবে ব্যথিত হয় তবেই আপনি মানুষ।
ধর্মিয় পরিচয়ের বাইরে আপনার অন্তকরনে মানবিক পরিচয়টা যখন বড় হয়ে উঠে তখন আপনি যে কোন মানব হত্যায় ব্যথিত হবেন। যে কোন মানুষের নিপিড়নে দুঃখ পাবেন,কষ্ট পাবেন।