রাজধানীর উত্তরায় গার্ডারচাপায় আহত নবদম্পতি হৃদয় ও রিয়ামনি উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। ছাড়া পাওয়ার পরই তারা বাবা-মাকে একনজর দেখতে ছুটে যান সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। সেখানে ‘লাশকাটা ঘরে শুয়ে’ আছেন বাবা-মা।
সোমবার উত্তরায় ক্রেন থেকে গার্ডার ছিঁড়ে পড়ে এই নবদম্পতির বাবা-মাসহ (হৃদয়ের বাবা ও রিয়ামনির মা) পাঁচজন ঘটনাস্থলে নিহত হন।
হৃদয় ও ও রিয়ার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে মঙ্গলবার রিয়ামনির মামা মো. আফরান মন্ডল বাবু জানান, হৃদয় ও রিয়া সকাল ১০টার দিকে ক্রিসেন্ট হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গেছেন মৃত বাবা-মাকে একনজর দেখার জন্য।
বাবা মাকে শেষ দেখা দেখতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন নবদম্পতি হৃদয় ও রিয়া মনি।
হৃদয় বলেন, সরকার কোথায় প্রশাসন কোথায়? এত ব্যস্ততম একটা রাস্তায় এভাবে তারা কাজ করছে কোন নিরাপত্তা নাই। আজকে আমার গাড়ির উপর পড়েছে, অন্যকারও গাড়ির উপরেও পড়তে পারতো, এই দায়ভার কে নিবে। সরকার ও প্রশাসনের কাছে আমার আকুল আবেদন, এর যেন সুষ্ঠু বিচার হয়, আমাদের মত এমন যেন আর কারো সাথে নয়া হয়।
তিনি বলেন, মামলার এখনো আমরা কিছু জানি না, আমি অসুস্থ, আমার স্ত্রীও অসুস্থ। আমরা হাসপাতালে ছিলাম, আমারা হাঁটাচলা করতে এখনো সমস্যা হচ্ছে। মামলা আমাদের আত্মীয়স্বজনরা দেখছেন।
তিনি আরও জানান, সোমবার দুর্ঘটনার পরেই আমাদের হসপিটালে ভর্তি করা হয়, আমি পায়ে এবং কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা পাই। আমার স্ত্রী আমার থেকে কম ব্যথা পেলেও মানসিকভাবে সে ভেঙে পড়েছে। দুর্ঘটনায় ওর মা মারা গেছে। আমরা এখনো অসুস্থ তবে আমার বাবা আর আমার স্ত্রীর মাকে মর্গ থেকে বের করা হবে সেজন্য এখানে এসেছি।
স্বজনদের দাফনের বিষয়ে হৃদয় বলেন, আমার বাবাকে আমাদের গ্রামের বাড়ি মেহেরপুরে দাফন করা হবে আর আমার শাশুড়িকে আমার মামা শশুররা নিয়ে যাবেন জামালপুর, সেখানে তাকে দাফন করা হবে।
সোমবার দুপুরে উত্তরার জসিমউদ্দিন সড়কের আড়ং মোড়ে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পে ক্রেন থেকে গার্ডার ছিটকে প্রাইভেটকারের ওপর পড়লে ঘটনাস্থলে পাঁচজন মারা যান। আহত অবস্থায় দুইজনকে উদ্ধার করেন স্থানীয়রা।
নিহতরা হলেন- নববধূ রিয়ামনির মা ফাহিমা বেগম, বর হৃদয়ের বাবা রুবেল হাসান, রিয়ার খালা ঝর্না এবং তার দুই সন্তান জান্নাতুল ও জাকারিয়া।
দুর্ঘটনাকবলিত গাড়িটি নরসিংদীতে বৌভাতের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে আশুলিয়া যাচ্ছিল।
এ ঘটনায় নববধূ রিয়ামনি ও তার স্বামী হৃদয় আহত হলে তাদেরকে উদ্ধার করে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘আহত নবদম্পতি উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাসার উদ্দেশ্যে গেছেন। গতকাল রাতেই মামলা হয়েছে। আসামি গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গাড়ির চালকের আসনে ছিলেন নববধূর বাবা মো. রুবেল। তার পাশে ছিলেন নববধূ। গাড়ির পেছনের সিটে ডান পাশে বসা ছিলেন নববধূর স্বামী হৃদয়ের বোন ঝর্না ও দুই শিশু জান্নাত ও জাকারিয়া। আরেক নারীর পরিচয় জানা যায়নি। ক্রেন থেকে গার্ডারটি ছিড়ে চালকের আসন বরাবর পড়ে। ফলে চালকের আসনে থাকা রুবেল ও তার পেছনের সিট বরাবর থাকা দুই শিশু ও দুই নারী নিহত হন।
বিআরটি প্রকল্পের সেই গার্ডার সরানো হচ্ছিল কোনো ধরনের সুরক্ষা-নিরাপত্তা ছাড়াই। ক্রেনটি কাৎ হয়ে পড়লে গার্ডারটি চাপা দেয় একটি প্রাইভেটকারকে।
এদিকে নিহতদের বাড়িতে আনন্দের পরিবর্তে শোকের মাতম তুলছে স্বজনরা। মঙ্গলবার সকাল থেকে আত্মীয়স্বজন আসতে শুরু করেছেন। স্বজনদের কান্নায় সেখানকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে।
নবদম্পতি বাবা-মাকে হারিয়েছেন: গার্ডার দুর্ঘটনায় নববধূ রিয়ামনি হারিয়েছেন তার মা ফাহিমা বেগমকে। আর বর হৃদয় হারিয়েছেন বাবা রুবেল হাসানকে। গত শনিবার রিয়ামনি ও হৃদয়ের বিয়ে হয়। সোমবার বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষে মেয়ের বাড়িতে ফেরার পথে উত্তরায় দুর্ঘটনার শিকার হয় পরিবারটি। এ সময় গাড়িতে থাকা নববধূ রিয়ার খালা ঝর্না ও তার দুই সন্তানও মারা যায়। পরিবারের সদস্যরা শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েন।
সূত্র : নতুন সময়