5.6 C
Toronto
শুক্রবার, মার্চ ১৪, ২০২৫

ম্যাজিস্ট্রেট সেজে গ্রিলমিস্ত্রির নারী ব্ল্যাকমেইলের ফাঁদ

ম্যাজিস্ট্রেট সেজে গ্রিলমিস্ত্রির নারী ব্ল্যাকমেইলের ফাঁদ

পেশায় গ্রিলমিস্ত্রি। অথচ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কখনো ম্যাজিস্ট্রেট, কখনো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহকারী উপসচিবসহ বিভিন্ন সরকারী কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে নারীদের সাথে সখ্য গড়ে তুলত সে। কাউকে আবার বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ঘনিষ্ঠ হতো। কাউকে কাউকে বিয়েও করে সে। এর পর আপত্তিকর ছবি ও ভিডিওর মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করত সে। এমনই এক প্রতারকচক্রের মূলহোতা ক্লাস সেভেন পড়ুয়া গ্রিলের দোকানের মিস্ত্রি মামুনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

- Advertisement -

সিআইডি জানায়, দীর্ঘ দিন ধরে নারীদের সাথে প্রতারণা করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়েছে মামুন। এ পর্যন্ত ৫০ জন তরুণীর সাথে প্রতারণা করেছে সে। এ ছাড়া ১২ জন তরুণীর অসংখ্য ন্যুড ভিডিও পাওয়া গেছে মামুনের কাছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির বিশেষ পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুল আলম বলেন, কলেজ পড়ুয়া এক ভুক্তভোগী তরুণী মামুনের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে। এরপর মামলাটির তদন্ত ভার পায় সিআইডি। পরবর্তী সময়ে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের সাইবার ইনভেস্টিগেশন ও অপারেশনস টিম বুধবার (৩১ আগস্ট) দিনাজপুরের খানসামার আমতলী বাজার থেকে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। তিনি বলেন, মামুনের কাছ থেকে পাঁচটি নকল নিকাহনামা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বদলির ভুয়া অফিস আদেশের কপি ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত দু’টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। মামুনের আসল নাম মমিনুল ইসলাম। সে নিজেকে বিসিএস (৩৬ ব্যাচ) ক্যাডার হিসেবে পরিচয় দিত। প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করে প্রায় ১০ জন মেয়েকে বিয়ে করে এবং তাদের কাছ থেকে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে।

সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, মামুনের টার্গেট বিভিন্ন বয়সী তরুণী। অল্প শিক্ষিত হয়েও সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় কথা বলে মানুষের মন জয় করে মামুন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে তার শরীরের অবয়বের সাথে মিলে যায় এমন শারীরিক গঠনের মুখে মাস্ক পরিহিত কিংবা মুখাবয়ব স্পষ্ট বোঝা যায় না এমন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের বিভিন্ন সময়ের ছবি নিজের ছবি হিসেবে ব্যবহার করে বিভিন্ন মেয়েদের সাথে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করত। সম্পর্কের এক পর্যায়ে সে ভুক্তভোগী মেয়েদেরকে বিয়ের প্রস্তাব দিত।

ভুক্তভোগী মেয়েদেরকে খুব দ্রুতই বিয়ে করতে চায়, যদি কোনো ভুক্তভোগী তার বিয়ের প্রস্তাবে সাড়া না দিত, তাহলে প্রতারক মামুন আত্মহত্যা করবে মর্মে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে মেয়েদেরকে বিয়েতে রাজি করাত। পরে বিয়ের ফাঁদে ফেলে ভুক্তভোগী মেয়েদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করত। তার কাছ থেকে ১২ জন মেয়ের অসংখ্য ন্যুড ভিডিও পাওয়া গেছে। এগুলো সে কোনো সাইটে আপ করেছে কি না তা তদন্ত করা হচ্ছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মামুনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তার সাথে আরো কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, এক ভিক্টিমের সাথে মামুনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সময় সে নিজেকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দেয়। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যকার সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর হয়। প্রতারক মামুন কখনো ভিক্টিমের সাথে সরাসরি দেখা করত না। বিভিন্ন সরকারি কাজে খুবই ব্যস্ত আছে অথবা তার ছুটি হচ্ছে না এ রকম বিভিন্ন অজুহাত তৈরি করে সরাসরি বিবাহ অনুষ্ঠানে আসতে পারছে না বলে জানিয়ে প্রতারক মামুন ভুক্তভোগী মেয়ের নামে কাজী অফিসের সিলমোহরযুক্ত ভুয়া নিকাহনামা প্রস্তুত করে ভুক্তভোগী মেয়ের ঠিকানায় কুরিয়ার করে পাঠিয়ে দেয় এবং মেয়েটিকে ওই কাবিননামায় স্বাক্ষর করে প্রতারক মামুন ইসলামের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিতে বলে। ভুক্তভোগী মেয়েটি সরল বিশ্বাসে মামুনের কথামতো কাজ করার কিছুদিন পর সে ওই মেয়ের বাসায় যায় এবং ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক বিয়ে করে কিছুদিন একসাথে বসবাস করে। ভুয়া বিবেয় সম্পন্ন হওয়ার পরে প্রতারক মামুন মেয়েটিকে আপত্তিকর ও অশালীন অবস্থায় ভিডিও কলে আসতে বলত।

আপত্তিকর অবস্থায় মেয়েটির সাথে ভিডিও কলে কথোপকথনের সময় ভিক্টিম মেয়েটির অগোচরে প্রতারক মামুন আপত্তিকর অবস্থার ভিডিও কলের স্ক্রিন রেকর্ড করে সেই ভিডিওগুলো নিজ মোবাইলে সংরক্ষণ করে রাখত। পরবর্তী সময়ে ওই ভিডিওগুলো অনলাইনে ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করে দেবে বলে হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করত।

সূত্র : নয়াদিগন্ত

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles