
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি দুই জঙ্গি আবু ছিদ্দিক সোহেল ও মঈনুল হাসান শামীমকে ছিনিয়ে নিয়েছে জঙ্গিরা। এ ঘটনার একটি সিসিটিভি ফুটেজ নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, আদালতের প্রধান ফটকের সামনে থেকে দুটি মোটরসাইকেলে করে আসা চার জঙ্গি তাদের ছিনিয়ে নেয়। সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে হাজির করে হাজত খানায় নেওয়ার সময় চার আসামির মধ্যে দুইজনকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ সময় তারা আদালত প্রাঙ্গণে একটি মোটরসাইকেল ফেলে যান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চার আসামি কোর্টে হাজিরা দিয়ে যাচ্ছিল। তাদের নিয়ে যাচ্ছিলেন একজন পুলিশ এবং একজন আনসার সদস্য। গেটের সামনে আসার পরপরই ওই ৪ আসামি পুলিশ ও আনসার সদস্যকে কিল-ঘুষি মারতে শুরু করে। বাইরে আরও চারজন লোক ছিল বাইক নিয়ে। ঘুষি দেওয়ায় পুলিশ সদস্য আহত হন এবং তার শরীর থেকে রক্ত বের হয়। যার ফলে তার হাতে থাকা দুই আসামি ছেড়ে দেন তিনি। আনসার সদস্য তার হাতে থাকা দুই আসামিকে ছাড়েননি। তাকে অনেক মারধর করা হয়েছে। তাকেও ঘুষি দেওয়া হয়েছে, স্প্রে মারা হয়েছে। কিন্তু তিনি আসামি ছাড়েননি। পুলিশ সদস্য যে দুই আসামিকে ছেড়ে দিয়েছেন তারা বাইরে রাখা মোটরসাইকেলে উঠে চলে যায়।
রাস্তার বিপরীত পাশ থেকে মোটরসাইকেলে থাকা লোকেরা সিগন্যাল দেওয়ার পরই গেটের কাছে এসে আসামিরা পুলিশকে কিলঘুষি দেওয়া শুরু করে। এর মধ্যে গেটের দারোয়ান ধরতে এলে তাকেও স্প্রে মারা হয়, তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পার্কিংয়ে আরও ৩ জন ড্রাইভার ছিলেন, তাদেরও স্প্রে মেরে অজ্ঞান করা হয়। পথচারী ছিলেন অনেক, তাদের মধ্যে প্রথম কয়েকজনকে স্প্রে মারার পর বাকি পথচারীরা সরে যান। কেউ কাছে গেলেই তাদের জঙ্গিরা স্প্রে মারে। এটা দেখে আর কেউ ভয়ে আগায়নি। বাইরে ওনাদের যে লোকজন ছিল তারাও হয়তো চাকু-ছুরি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।
আসামিদের মধ্যে মইনুলের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার মাধবপুর গ্রামে। আর আবু ছিদ্দিকের বাড়ি লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভেটেশ্বর গ্রামের বাসিন্দা। তারা দুজনই জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সাল আরেফিন দীপন ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।
জানা গেছে, আজ দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটের দিকে ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রধান ফটকের সামনে থেকে মোটরসাইকেলে করে এসে দুই আসামিকে ছিনিয়ে নেয় জঙ্গিরা। সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে হাজির করে হাজতখানায় নেওয়ার সময় চার আসামির মধ্যে দুইজনকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় রাজধানীতে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এ জন্য প্রতিটি থানা ও অন্যান্য ইউনিটে চেকপোস্ট বসানো হয়। বিভিন্ন চেকপোস্টে সন্দেহভাজনদের যানবাহন থামিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পলাতক দুই জঙ্গির ছবি বিভিন্ন থানায় পাঠানো হয়েছে।
এ দিকে পুলিশের জনসংযোগ শাখা থেকে জানানো হয়েছে, দুই জঙ্গি সদস্যকে ধরিয়ে দিলে প্রত্যেকের জন্য ১০ লাখ টাকা করে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।
গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় ৮ আসামির মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান এ আদেশ দেন। ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর রাজধানীর শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটের নিজ অফিসে জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সল আরেফিন দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সেদিন বিকেলে তার স্ত্রী শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি দক্ষিণের সহকারী পুলিশ কমিশনার ফজলুর রহমান। চার্জশিটে ৮ জনকে অভিযুক্ত এবং ১১ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়। ২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুজিবুর রহমান নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সদস্য চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
সূত্র : আমাদের সময়