
গত শীতে অটোয়াতে ঘটে যাওয়া গাড়িবহর নিয়ে বিশাল বিক্ষোভ কানাডার রাজনীতিতে নতুন যুগের সুচনা করে। প্রাদেশিক আইনসভা ও আন্তর্জাতিক সীমান্তে ‘ফ্রিডম কনভয়’ নামে সপ্তাহব্যাপী ওই বিক্ষোভের উদ্দেশ্য ছিল কোভিড-১৯ সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি ও বাধ্যতামূলক ভ্যাকসিনেশন নীতির অবসান ঘটানো।
দ্য কানাডিয়ান প্রেসের সংবাদ প্রতিবেদন হিসেবে সবচেয় পছন্দের বিষয় ছিল এই বিক্ষোভ। কানাডাজুড়ে নিউজরুমের সম্পাদকের ভোটাভুটিতে এমনটাই উঠে এসেছে।
দুইজন ট্রাকচালকের হাত ধরে বিক্ষোভের সূচনা হয়। সীমান্ত পাড়ি দেওয়া ট্রাকচালকদের ভ্যাকসিন গ্রহণ বাধ্যতামূলক করায় ক্ষোভ ও ভীতি থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। তারা টিকটকের মাধ্যমে যোগাযোগ শুরু করেন এবং সারাদেশ থেকে সমর্থন পেতে থাকেন। দ্রুত তা সামগ্রিক ভ্যাকসিন ম্যান্ডেট, অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি এবং প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও তার লিবারেল সরকারের বিরুদ্ধে শত্রুতায় রূপ নেয়।
টরন্টোর গ্লোব অ্যান্ড মেইলের সম্পাদক এস.আর. স্লোবোদিয়ান জরিপ মন্তব্যে লেখেন, এটা ছিল খুবই মেরুকৃত। এই বিক্ষোভকে তিনি সব দুশ্চিন্তা ও হতাশার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে উল্লেখ করেন।
সিটিভি ক্যালগেরির ব্যবস্থাপনা সংবাদক ডন ওয়াল্টন লিখেছেন, দুই বছর ধরে মহামারি ও এ সংক্রান্ত বিধিনিষেধের আওতায় থেকে কানাডিয়ানরা হাপিয়ে উঠেছিলেন। সেটাই কাজে লাগিয়েছে ফ্রিডম কনভয় আন্দোলন এবং বিপুল সমর্থন আদায় করে নিতে সক্ষম হয়েছে।
ন্যাশনাল পোস্টের মন্তব্য সম্পাদক কারসন জেরেমা লিখেছেন, এর ফলে কানাডার পুলিশ সার্ভিসেসের সমস্যা এবং কীভাবে বিভিন্ন স্তরের সরকারগুলো একত্রে কাজ করে সে বিষয়টিও বেরিয়ে এসেছে।
সিটিভির ডিজিটাল ও ডব্লিউফাইভের মহাব্যবস্থাপক ডেভিড হিউজ এই বিক্ষোভকে বর্ণনা করেছেন কানাডায় রাজনৈতিক বিক্ষোভের মৌলিক পরিবর্তন হিসেবে। সহনাগরিকদের অর্থনৈতিক দুর্ভোগ যে কিছু কানাডিয়ান ভাগ করে নিতে প্রস্তুত সেই বার্তার পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য সম্ভাব্য সহিংসতার হুমকিরও বার্তা এই বিক্ষোভ।
এই বিক্ষোভের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব এতোটাই প্রবল ছিল যে, প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ১৪ ফেব্রুয়ারি জরুরি আইন ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হন। ১৯৮৮ সালে ওয়ার মেজারস অ্যাক্ট দিয়ে আইনটি প্রতিস্থাপত হওয়ার পর জরুরি আইন ফেরানোর এটাই প্রথম ঘটনা।
যে ১০৪ জনের ওপর সমীক্ষা পরিচালনা করা হয় তাদের ৪১ শতাংশ ফ্রিডম কনভয়কে এ বছরের সবচেয়ে বড় খবর হিসেবে উল্লেখ করেছেন। জনস্বাস্থ্যসেবা ওপর চাপকে দ্বিতীয় বড় খবর হিসেবে উঠে এসেছে। এর পক্ষে ভোট দিয়েছেন ২০ শতাংশ সম্পাদক।