
কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার বাঙ্গুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সেলিম সরকারকে এক নারীর সঙ্গে ‘আপত্তিকর’ অবস্থায় আটক করে গণপিটুনি দিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। গত রোববার রাতে সাড়ে ৮টার দিকে দেবিদ্বার পৌর এলাকার ছোট আলমপুরে এ ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে রাত ২টার দিকে স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. জহিরুল ইসলাম ও স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির কয়েকজন সদস্য সেলিমকে মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে যান।
সেলিম সরকার উপজেলার কাশারীখোলার বাসিন্দা। প্রধান শিক্ষক ছাড়াও তিনি উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে এ ঘটনা বাঙ্গুরী গ্রামে জানাজানি হলে বিদ্যালয়ের অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে ঘুনাইঘর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মোকবল হোসেন মুকুল ও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মুমিনুল হক কামরুল অভিযুক্ত সেলিম সরকারকে আপাতত বিদ্যালয়ে আসতে নিষেধ করেন।
নিষেধ না মেনে আজ বুধবার সেলিম সরকার বিদ্যালয়ে আসায় ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা তাকে স্কুলের একটি কক্ষে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে খবর পেয়ে থানা-পুলিশের একটি দল তাকে উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে বাঙ্গুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘গত রোববার রাতে প্রধান শিক্ষক সেলিম সরকার মোবাইল ফোনে আমাকে বলেন, ছোট আলমপুর এলাকায় তার এক খালাত বোনের সঙ্গে দেখে কয়েকজন লোক তাকে আটক করেছে। কিছু টাকা নিয়ে এসে যেন তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাই।’ জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘পরে আমি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মো. কবির হোসেনকে বিষয়টি জানালে তিনি আমাকে ঘটনাস্থলে যেতে বলেন। আমিসহ আরও কয়েকজন তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনি।’
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য কাজী আল আমিন বলেন, ‘নারীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়ার বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে আজ সকালে অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীরা তাকে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করার চেষ্টা করে। আমি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করি।’
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. মুমিনুল হক কামরুল বলেন, ‘আমি ঢাকায় আছি। এলাকার লোকজনের মুখে শুনেছি। স্থানীয় চেয়ারম্যান ও আমি মিটিং ডেকেছি। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্ত না নেওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে স্কুলে যেতে নিষেধ করেছি। কিন্তু তিনি নিষেধ অমান্য করে বুধবার সকালে বিদ্যালয়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীরা তাকে অবরুদ্ধ করার কথা শুনেছি।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মো. সেলিম সরকার বলেন, ‘এটি একটি চক্রান্ত। ম্যানেজিং কমিটির সবাই আমাকে স্কুল থেকে সরানোর অপচেষ্টা করছে।’
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মোকবল হোসেন মুকুল বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক সেলিম সরকারকে নারীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় ধরার ঘটনাটি সত্য। তাকে আমি ব্যক্তিগত জিজ্ঞাসা করায়ও তিনিও বিষয়টি ভুল হয়েছে স্বীকার করেছেন। পরে স্কুলের সভাপতি ও আমি তাকে আপাতত স্কুলে যেতে নিষেধ করেছি। এরপরও তিনি নিষেধ অমান্য করে স্কুলে যাওয়ায় এলাকার লোকজন ও ছাত্রছাত্রীরা ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।’
চেয়ারম্যান বলেন, ‘তিনি ওই স্কুলের আরও অনেক অনৈতিক কাজে জড়িত বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে স্কুলের সভাপতির সঙ্গে কথা হয়েছে, তিনি গ্রামের লোকজনদের নিয়ে একটি সভার আহ্বান করা করেছেন। ওই সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ’
দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কমল কৃষ্ণ ধর বলেন, অভিযুক্ত ওই শিক্ষক অবরুদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। তবে এ ঘটনায় কোনো পক্ষই থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি।