7.3 C
Toronto
শনিবার, মার্চ ১৫, ২০২৫

অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসক জানালেন বাচ্চা নেই, ভৌতিক গর্ভপাত!

অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসক জানালেন বাচ্চা নেই, ভৌতিক গর্ভপাত!

পাবনায় বেসরকারি মডেল হাসপাতাল নামে একটি ক্লিনিক থেকে অস্ত্রোপচারের পরে অপারেশন থিয়েটার (ওটি) থেকে নবজাতক উধাও হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

- Advertisement -

ঘটনার একদিন পর ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে পারলে বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

গণমাধ্যমকর্মীরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে গেলে সটকে পড়েন প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষ ও দায়িত্বরত ম্যানেজার।

ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের দেয়া তথ্য মতে, গত শুক্রবার (১০ ফ্রেব্রুয়ারি) দুপুরে চিকিৎসকের পরামর্শে স্থানীয় বেসরকারি মডেল হাসপাতালে আঁখি খাতুন (২৮) নামে এক সন্তানসম্ভবা অস্ত্রোপচারের জন্য ভর্তি হন। রাতে (১০ ফ্রেব্রুয়ারি) পাবনা মেডেকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনী ও প্রসূতি বিভাগের সহযোগী আধ্যাপক ডা. শাহিন ফেরদৌস শানু ওই নারীর অস্ত্রোপচার করেন।

কিন্তু অস্ত্রোপচারের পরে ওই নারীর পেটে কোনো বাচ্চা ছিলো না বলে পরিবারের সদস্যদের জানান ওই চিকিৎসক। এই কথা শোনার পর পরিবারের সদস্যরা হতভম্ব হয়ে পড়েন। এমনটা কীভাবে সম্ভব হতে পারে!

পরিবারের সদস্যরা জানান, প্রসব বেদনা ওঠার পরেই চিকিৎসক তাকে সিজারিয়ান করেছেন। তবে কী করে এটা সম্ভব যে, তার পেটে বাচ্চা নেই? দীর্ঘ নয় মাস ধরে মা পেটে বাচ্চা ধারন করেছেন। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শে চলেছেন। সিজার হওয়ার আগে সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাগজপত্র ক্লিনিকে জমা দেওয়া হয়েছে। আর এখন বলছে কিনা, মায়ের পেটে বাচ্চা নেই!

তবে, কোন কাগজপত্র দেখে আঁখি খাতুনের অস্ত্রোপচার হয়েছে, সেই তথ্য বা কাগজপত্র তারা দেখাতে পারেননি।

ভুক্তভোগীর স্বামী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, আমার প্রথম কন্যা সন্তানের জন্য এই চিকিৎসকের হাতেই হয়েছে। তাই তাকে দিয়েই আমার স্ত্রীকে নিয়মিত দেখিয়েছি। তিনি নিজে বলেছেন, এত বড় আকার হয়েছে পেটের, জমজ সন্তান হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, এবার মডেল হাসপাতালে ভর্তির পরে সিজার করার সময় চিকিৎসকসহ হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের গতিবিধি অমার ভালো লাগছিল না। চিকিৎসক আমাকে বলেছেন, রোগীর অবস্থা ভালো না। আমি তাকে বলেছি, তাহলে ওটি কার্যক্রম বন্ধ করুন। কিন্তু তারা সেটা করেননি।

নজরুল ইসলাম বলেন, ওটির পরে ডাক্তার আমাকে বলছেন, আপনার স্ত্রীর পেটে বাচ্চা নেই। নাড়ি জট পাকিয়ে ছিল। ‘হাওয়া খেয়ে’ নাকি আমার স্ত্রীর গর্ভপাত হয়েছে!

তিনি অভিযোগ তুলে বলেন, আসলে ওটি কক্ষ থেকে আমাদের বাচ্চা কৌশলে চুরি করা হয়েছে। গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত রহস্য জানতে চাই। আমার বাচ্চা গেল কোথায়?

এদিকে ছেলে সন্তান হয়েছে দাবি করে ভুক্তভোগী আঁখি খাতুন বলেন, আমার ছেলে সন্তান হয়েছে। আমি কান্নার আওয়াজ শুনেছি। আমি মা, নয় মাস পেটে ধারন করেছি। আর সিজারের পরে বাচ্চা হাওয়া হয়ে গেল? আমার পেটে নাকি বাচ্চাই ছিল না! ওরা আমার বাচ্চাকে চুরি করেছে, আমি আমার বাচ্চা চাই।

ঘটনার বিষয়ে মডেল ক্লিনিকের পরিচালক মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, সিজারিয়ান হওয়ার জন্য তারা (রোগী) আমাদের এখানে ভর্তি হয়েছিলেন। চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করেই তারা এখানে এসেছেন। আমরা শুধু ওটি করিয়েছি এখানে। কী কারণে ওটি করা হচ্ছে, সেটা চিকিৎসক বলতে পারবেন। তবে ওটির পরে জানতে পারি, ওই নারীর পেটে কোনো বাচ্চা ছিল না।

এ বিষয়ে পাবনা মেডেকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনী ও প্রসূতি বিভাগের সহযোগী আধ্যাপক ডা. শাহিন ফেরদৌস শানু বলেন, ওই নারী আমার কাছে এবারে কোনো সময় আসেননি। তিনি প্রথম সন্তান হওয়ার সময় আমার কাছে চিকিৎসা নিয়েছেন। আমি ওটি করার সময় তার বর্তমান কাগজপত্র চেয়েছি, তিনি দিতে পারেননি। তবে তার পেইন ওঠার কারণে পেটের আকার দেখে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তাকে সিজারিয়ান করা হয়েছে। অস্ত্রোপচারের পরে দেখা গেল, তার পেটে কোনো বাচ্চা নেই।

বিষয়টি অলৌকিক দাবি করে এই চিকিৎসক আরও বলেন, এটি একটি অলৌকিক ব্যাপার। এই ধরনের গর্ভপাতকে আমরা ভৌতিক গর্ভপাত বলে থাকি। ‘হাওয়া’ খেয়ে মনের ভাবনা থেকে অনেক সময় মায়েরা নিজেদের গর্ভবতী মনে করেন।

এদিকে, এ ঘটনায় স্থানীয় থানা পুলিশকে মৌখিকভাবে জানানো হলেও লিখিত অভিযোগ করেননি ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরা। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা কৃষ্ণ বালা।

সূত্র : বাংলানিউজ

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles