
যদি নৌকা চালানোর অভিজ্ঞতা না থাকে, তবে ফিজিক্স এ পিএইচডি ডিগ্রি থাকলেও আপনি বৈঠা বাইতে পারবেন না। একজন মাঝি নিউটনের সূত্র না জেনেও ঠিকই সুত্র প্রয়োগ করে নৌকা চালায়। সে জানে, বৈঠা না তুলেও কোন পর্যায়ে মৃদু ডানে/বামে ধাক্কা দিলে নৌকার পজিশন ঠিক থাকবে। আপনি একজন তুখোড় কৃষি বিজ্ঞানী হয়েও একজন মূর্খ কৃষকের মতো ফসল উৎপাদন করতে পারবেন না। বিশ্বের এক নাম্বার শেফ হয়েও গ্রামের অক্ষর জ্ঞান বর্জিত ভাবির কাছে রান্নার কম্পিটিশনে হেরে যেতে পারেন।
সর্বোচ্চ শিক্ষার ডিগ্রি নিয়ে, রাজনৈতিক নেতা হয়ে, সুশীল চাঁদর গায়ে দিয়ে, হাজারটা সমাবেশে মুখে ফেনা তুলে বক্তৃতা দেবার অভিজ্ঞতা থাকলেও বেশিরভাগ মানুষ জনগণের সামনে মার্জিত ভাষায় কথা বলা শিখে উঠতে পারে না। হিরো আলম পারে। মার্জিত, বিনয়ী ভাষায় কথা বলতে ডিগ্রির প্রয়োজন নেই। হতে হয় স্বশিক্ষিত।
হিরো আলম গান পারে না, অভিনয় পারে না; কোনো সন্দেহই নেই। তবে যে জিনিসটা সে পারে, সেটা হলো অদম্য তার সৎ সাহস আর মার্জিত ভাষায় কথা বলতে। যে বলে তার চেহারা ভাল না, তাকে বলবো আপনি দয়া করে নিজের চেহারাটা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখেন। সেখানে যে কপালের ভাঁজে দুর্নীতির রেখা, ঊরুতে মানুষ খুনের ট্যাটু, মুখের ভেতর হারাম খাবার লিকলিকে সাপের জিব্বা আছে; সেগুলো চোখে পড়ে না? সমস্যা হলো যারা তাকে নিয়ে ট্রল করেন, তারা কখনো আয়নার সামনে দাঁড়ানোর সাহসটা পর্যন্ত পান না। হিরো আলম জানে তার চেহারা কেমন, সে তার নিজের সঠিক চেহারা দেখতে শিখেছে। কিন্তু তাকে ট্রল করা মানুষগুলো জানার চেষ্টা করে না নিজেদের চেহারা কেমন। জানার চেষ্টা করলেই যে ধরা?
এখানেই মানুষে মানুষে পার্থক্য।
বেশিরভাগ মানুষের সততার একটা লিমিট থাকে। হোক সে শিল্পী, লেখক-লেখিকা, অভিনেতা-অভিনেত্রী, গায়ক-গায়িকা, শিক্ষক কিংবা সমাজসেবী। এক পর্যায়ে গিয়ে আর সৎ থাকতে পারে না। আদর্শের জলাঞ্জলি দিয়ে, কারচুপি করে হলেও তাকে নির্বাচনে জিততেই হবে?
যারা ভাবছেন আমি হিরো আলমের প্রশংসা করতে মাঠে নেমেছি, তার ভুল করছেন। আলম সাহেবের জয়গান করতে আসিনি। সবার কাছ থেকেই শেখার চেষ্টা করি। আলম সাহেব আমার আদর্শ না। আদর্শবান মানুষের অভাব থাকলেও একটু কষ্ট করলে খুঁজে নেয়া যায়।
মানুষটা এমপি হবার যোগ্য বৈকি! সাধারণ মানুষই সেটা ভোটের মাধ্যমে দেখিয়ে দিলো, আমার নিজের কথা না। সরকারি বাঘা বাঘা সচিব, পুলিশের বিরাট কর্মকর্তারা কানের গোড়া দিয়ে বেঁচে গেছেন যে হিরো আলমকে স্যার স্যার ডাকতে হচ্ছে না। বিনা অপরাধে পুলিশের কাছে চড়-থাপ্পড় খাওয়া মানুষটাকে যে এমপি ইলেকশনে জিততে দেয়া হবে না, এতে অবাক হবার কিছু নেই। মানুষের হিংসা সহজে যায় না; মৃত্যু অবধি এর স্থায়িত্ব। শিক্ষার হাজার ডিগ্রি নিয়ে সুশীল চাদর গায়ে দিলেও হিংসা বা পরশ্রীকাতরতা ঠিকই মনের মধ্যে ধিকি ধিকি জ্বলতে থাকে! প্রকাশ হওয়া শুধু সময়ের ব্যাপার। সুযোগ পেলেই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে।
প্রশ্ন হলো, আর কতকাল নিজেদের অক্ষমতা ঢেকে হিরো আলমের মত মানুষদের স্যার স্যার করে বলা থেকে বিরত থাকতে পারবে? আর কতদিন কানের গোড়া দিয়ে বেঁচে যেতে পারবে?
অটোয়া, কানাডা