
অমর একুশে ফেব্রুয়ারী চিরদিন অমর হয়ে রইবে সারা পৃথিবীর বাংলাভাষীর অন্তরে। ফিবছরেরর শুরুতে তোড়জোড় চলে বই মেলায় ধূলা উড়ে মিলন মেলায়, উছ্বসিত আমরা। এটুকুই । বাংলা নিয়ে আমরা নাড়াচাড়া করছি ঠিকই কিন্তু বাংলা ভাষা অলক্ষ্যে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের মাঝ থেকে।
(১) ২০০৬/০৭ সালের কোন এক সকালে টরন্টোর ড্যানফোর্থে এক গ্রোসারী দোকানে দুটি ছোট বাচ্চাকে এটা ওটা নিয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে দেখলাম। আমি বোঝার চেষ্টা করছি
একই বয়সের দুই বালক কোন ভাষায় কথা বলছে। অদূরে তাদের বাবা দাঁড়িয়ে তিনি বাঙ্গালী-ওরা কোন ভাষায় কথা বলছে? জানতে চাইলাম ওদের বাবার কাছে।-রাশান ভাষায় কথা বলছে। ওদের মা রাশান । বুঝলাম রাশান মা ছাড় দেন নি। তার মুখের ভাষা বাঙ্গালী বাবার দুটি সন্তানদের মা এর ভাষা করেছেন।
(২) আমার এক বন্ধু আমেরিকা এসেছে আজ ২৪ বছর। একটি সন্তান জন্মেছে আমেরিকাতে। একদিন বন্ধু পত্নী বললেন-আমরা দুজন যখন কথা বলি মেয়ে তখন ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে অর্থাৎ সে বাংলা বুঝে না বলতে পারেও না। এটা কি খুশী হওয়ার কথা? কোন ভুমিকা না রেখে বললাম-সহজ কাজটিকে আপনারা কঠিন কাজ করে ফেলেছেন অর্থাৎ বাসার মধ্যে যদি নিজেরা বাংলায় কথা বলতেন সন্তানের সামনে তাহলে সে ঠিকই কিছু কিছু কথা বুঝতো বা বলতো। কথাটি তার মনে ধরেছে। বন্ধু পত্নী দু:খ প্র্রকাশ করলো।
(৩) ড্যানফোর্থে একটি ফটো কপির দোকানে কিছু কপি করার জন্য ঢুকে দেখি ছোট্ট একটি মেয়ে একটি চেয়ারে তার মায়ের সামনে বসে আছে। এ দোকানটি মা-বাবা দুজনাই চালায়, আমি তাদের চিনি। মেয়েটি আমার সাথে বাংলায় কথা বলা শুরু করেছে। আমি জানি তার জন্ম এই টরন্টো শহরে। চমৎকার বাংলায় সে আমার সাথে কথা বলছে, আমার কৌতুহল বেড়েই চলেছে। বাচ্চার মা বলে উঠলো-এই তুই ওনাকে চিনিস?-চিনিনা?। আমাদের বাসায় এসেছিলো। সে আমাকে কখনো দেখিনি অতি আপন কারো সাথে গুলিয়ে ফেলার কারনে তার এই কথোপকথন। জানতে চাইলাম-ভাবী ও এত সুন্দর বাংলায় কথা বলে কি ভাবে?-আমরাই শিখিয়েছি। ভাবী বললেন।
(৪) আমার ৩টি ভাগিনী আছে ওরা যখন ছোট ছিলো বাংলা কথা বুঝতো, কিছু কিছু বলতো আমিও ওদের সাথে বলতাম। এখন ওরা আমাকে দেখলে পালায় কারণ আমি বাংলায় কথা বলি ওদের সাথে। বাংলা বুঝে কিন্তু ধীরে ধীরে ভুলে যাচ্ছে বলতে।
রাশান মা একাই তার দুসন্তান কে রাশান ভাষা শিখিয়েছেন আর আমরা ঘরের মধ্যে বাবা-মা দুজনাই বাংলাভাষী আমাদের সন্তানরা ইংরাজীতে কথা বললে মনে মনে খুশী হই। মায়ের ভাষা শেখা কি খুব কঠিন? ইংরাজীর এ দেশে ইংরাজী শেখানো কঠিন নয় কারন সন্তানরা বাইরে, স্কুলে প্রতিনিয়ত দৈনন্দিন জীবনে ইংরাজীর দেখা পাবে শুধু পাবেনা বাংলার দেখা।
চাইনিজ কমুনিটিতে দেখা যায় সপ্তাহে একদিন তারা বাচ্চাদেরকে চাইনিজ ভাষায় কথা শেখানোর জন্য একজন টিচারের কাছে পাঠায় যাকে কম্যুনিটি থেকেই নিয়োগ করা হয়েছে। আমরা কি করছি? টরন্টোর বুকে বা এই বিদেশের বুকে গল্প কবিতা আর গানের আসরে সব শেষ করছি। বিষয়টি ভাবার। আসুন একটু ভাবি।
ইনুভিক, কানাডা