
বড় কন্যাকে সকাল সাতটা দশে ব্রাম্পটন রেল ষ্টেশনে নামিয়ে দিয়ে গাড়িতে বসে আছি। আর পাচ মিনিট পরে ট্রেন আসবে। মেয়েটা ট্রেনে উঠলেই আমি আমার অফিসের দিকে রওনা দিবো।
মেয়ে হেটে প্লাট ফরমের দিকে রওনা হল।
গাড়ির ড্রাইভার সিটে বসে আমি তার চলে যাওয়া দেখছিলাম।
হঠাৎ দেয়ালের আড়াল থেকে কাধে ব্যাগ ঝোলানো মধ্য বয়সী একটা লোক তার সামনে এসে দাড়াল।
মেয়ে থামল।
আমি হচকিয়ে উঠলাম। দেখলাম পার্কিংএ আমার গাড়ির পাশেই ষ্টেশনের স্পেশাল কনস্টেবলের গাড়ি পার্ক করা। গাড়ির ভিতর পুলিশ আছে কীনা অবশ্য তা দেখা যাচ্ছেনা।
আজকে আবার মেয়ের মিডটার্ম ফাইনাল। ক্যালকুলাস পরীক্ষা। এমনিতেই সে ক্যালকুলাস বিষয় ভয় পায়।
কয়েক মাস আগে টরন্টোর এক সাবওয়ে ষ্টেশনে একটা ইয়ং মেয়েকে এক দুর্বৃত্ত ধাক্কা দিয়ে ট্রাকের ওপরে ফেলে দিয়েছিল। তারও কয়েকদিন আগে আরেক সাবওয়ে ষ্টেশনে এক নারীকে আরেক দুর্বৃত্ত ছুরি মেরেছিল।
এ খবর সারা কানাডায় এখন সবার মুখে মুখে।
এ ধরনের ঘটনা ঘটনা ঘটানো হয় পবিলিক ট্রমা সৃষ্টি করার জন্য। যদিও সরকার এটাকে আক্রমনকারীর মানসিক ভারসাম্যহীনতাকে দায়ী করে চালিয়ে দেয়।
সবাই এখন আতংকিত। আমিও। দু সেকেন্ডের মধ্যে এত কিছু মাথায় খেলে গেল।
কী করবো বুঝতে পারার আগেই লক্ষ্য করলাম, মেয়েটা লোকটার সাথে কথা বলা শুরু করেছে। কী বলছে বোঝা যাচ্ছে না।
তারপর সে লোকটাকে ডেকে ষ্টেশনের দিকে নিয়ে গেল যেখানে ডিজিটাল টিকেট কাউন্টার।
গাড়ির ভিতর থেকে আমি লক্ষ্য করছি।
তারপর দেখলাম, কন্যা আমার লোকটিকে ট্রেনের টিকিট কাটতে সাহায্য করল। টিকিট কাটা হয়ে গেলে দুজন প্লাট ফরমের দিকে এগিয়ে গেল। মেয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলে আমি নিশ্চিত হওয়ার জন্য ফোন করলাম।
-লোকটি তোমাকে কী বলে?
-ওহ উনি কানাডায় নতুন এসেছে। কীভাবে ট্রেনের টিকিট কাটতে হয় বুঝতে পারছিল না। হেল্প চাচ্ছিল। ওনাকে টিকেট কাটতে হেল্প করলাম। উনি টরন্টো যাবে।
-আচ্ছা।
ওহ! বাবা বাচা গেল।
গাড়ি টার্ন করিয়ে অফিসের দিকে রওনা হলাম। অজানা ভয় ইতোমধ্যে চলে গেছে। বরং মেয়ে আমার মানুষকে হেল্প করতে শিখেছে –এটা দেখে একটা ভালো লাগা মনের মধ্যে খেলে গেল।
নতুন প্রজন্মের মধ্যেও বদান্যতা রয়েছে। তাদের নিয়ে আশাবাদী হতেই পারি।
টরন্টো, কানাডা