12.9 C
Toronto
মঙ্গলবার, মার্চ ১৮, ২০২৫

জব রেফারেন্স

জব রেফারেন্স - the Bengali Times
ছবিজেসন গোডম্যান

জাভেদ, শান তোমাকে খুঁজছিল।

আমি সকালে অফিসে এসে টেবিলে বসতেই আমার কলিগ স্যাম সামনের ডেস্ক থেকে বলল।

- Advertisement -

আমি হাই তুলে, রয়ে-সয়ে, মিনিট দশেক পর সুপারভাইজারের চেম্বারের সামনে এসে বললাম, মর্নিং শান!
– আরে জাভেদ, এসো..
– তোমার চেম্বারে ঢোকা সেইফ হবে তো? [আমি রসিকতা করি]
– হা হা, নির্ভয়ে আসো!
আমি ভেতরে ঢুকতেই বললেন, দরজাটা একটু আসিয়ে দাও। জাভেদ, তোমাকে কেন খুঁজছি বুঝতে পারছো?
– হ্যা
– তোমার জব রেফারেন্স চেক চলছে। ইমেইল পেয়েছি
– হুমম..

– আজকে ওদের রিপ্লাই দিতে পারতাম, ভাবলাম আরেকটা দিন সময় নি। ডেফিনিটলি আমি তোমার সম্পর্কে ভালো কথাই লিখবো। তুমি আমাদের একজন দক্ষ, ভালো কর্মী
– মাই প্লেজার

– তুমি কিন্তু এজন্য নিজেকে অপরাধী মনে করবা না, তোমার সম্পুর্ণ রাইট আছে আরেক জায়গায় এপ্লাই করার। এখন বলো, তুমি কেন চলে যাওয়ার চিন্তা করছো?
– ইনফ্লেশন
– ঠিক আছে, যদি তাই হয়, আমরা তোমার স্যালারি ইনক্রিজ করা যায় কিনা সে চেষ্টা করবো। অফিস ম্যানেজারের সাথে আলাপ করবো। আমরা তোমাকে নিয়ে বসবো
– কিন্তু শান, এভাবে আমি স্যালারি বাড়াতে চাই না। প্রতিটা প্রতিষ্ঠানের নিয়ম-নীতি থাকে। সেটা ভাঙ্গা ঊচিত নয়, আমার ভালো লাগবে না। নিজেকে তখন সুবিধাবাদী মনে হবে
– ওসব ব্যাপার না জাভেদ।

পরদিন সকালে অফিসে ঢুকতেই এবার অফিস ম্যানেজার নোর্ম আমাকে চেম্বারে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে বলল, আমাদের ভাল্লাগে না?
– এ কম্পানিকে আমি সত্যিকারভাবে ভালোবাসি [হেসে ফেলে বললাম]
– তাহলে চলে যেতে চাচ্ছ যে?
– ইনফ্লেশনের কারণে। খরচ এফোর্ড করতে হিমশিম খাচ্ছি
– আর কোন কারন?
– না
– জাভেদ, সারা কানাডাতেই এই অবস্থা। সারা বিশ্বেই। তোমাকে ওরা কত অফার করছে সেটা যদি বলতে.. একটা ধারণা দেওয়া যাবে?

আমি একটা ধারণা দিতেই উনি ক্যালকুলেটর বের করে হিসাব-নিকাশ কষে বললেন, তাহলে দেখি আমরা তোমার জন্য কতটুক করতে পারি। আমরা আসলেই তোমাকে হারাতে চাই না; কাউকেই হারাতে চাই না।

আসলে আমিও এ অফিস ছাড়তে চাইনি। জীবনের অনেক কিছুর লাগাম নিজের হাতে থাকে না। আমার জীবনে এক বিরল অভিজ্ঞতাএ অফিস। এরকম টেনশন ফ্রী, আরামের জায়গা আর জুটবে কিনা জানি না।

আমার এখানে কোনো দাবিদাওয়া নেই।
আমি চুপ করে থাকি; কারন এভাবে বার্গেইনিং করে বেতন বাড়িয়ে চলতে আমার প্রেস্টিজে লাগবে। এমন না যে আমি নতুন জবে ঢুকে আরো অনেক অনেক টাকা স্যালারি পাবো। একদমই না। তবুও নিজের সামান্য যতটুকু উন্নতি করা যায় আর কি; জীবন যুদ্ধে টিকে থাকার একটা লড়াই। অর্থ ছাড়াও কিছু ব্যাপার থাকে। নতুন, বড় জায়গা মানেই নতুন মানুষ, নতুন ঘটনা, নতুন গল্প, নতুন অভিজ্ঞতা। যেগুলোর জন্য আমি হা হয়ে থাকি! নতুন ঘটনা আমার কাছে নেশার মতো।

রিজাইন লেটার দেবার পর আমার কলিগকে বললাম- স্যাম, আমি চলে যাচ্ছি।
সে কিছুক্ষন বিস্ময়ে আমার দিকে চেয়ে থেকে বলল, আমিও
– মানে?
– হ্যা? আমিও চলে যাচ্ছি!
– তুমি জোক করতেছো
– না। আমার সন্দেহ হচ্ছে তুমি জোক করতেছো।

স্যাম; আসল নাম সামির। সে জর্দান থেকে এসেছে। তার জীবনটা বেশ বৈচিত্রপূর্ণ। ফ্লাইট এটেন্ডেন্ট হিসাবে বহু বছর প্লেনে করে সারা বিশ্ব ঘুরে বেড়িয়েছে। এমিরেটস এ ছিল। পঞ্চাশের ওপর বয়স। কানাডাতে সেটেল্ড হবার পর তার গিন্নির ওপর রাগ করে রাস্তায় রাস্তায় কাটিয়েও ছিল কিছুদিন। ঠান্ডার কারণে বেশিদিন বাইরে টিকতে পারেনি। বিস্ময়ে শুনেছিলাম তার জীবনের কিছু বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা।
.
সে আমার কাছে এসে হেসে ফেলে বলল, আসলে তুমি যখনই বললে চলে যাবে, তখন আমার পকেটে রিজাইন লেটারের ড্রাফট। তাই ভাবলাম তুমি কি কোনোভাবে আন্দাজ করেছিলে যে আমি চলে যাচ্ছি? একটা কোইন্সিডেন্স, কাকতালীয় ব্যাপার ঘটে গেছে। আমাদের এ অফিসে শেষ দিনও একই!
.
.
আমার অনাগ্রহ আর তাদের ডাকের সাড়া না পেয়ে শান আমার প্রস্থানের খবর ইমেইল করে সব স্টাফদের জানিয়ে দিলো। এখন কারো সাথে দেখা হলেই অভিনন্দন জানায়, কেউ কারণ জিজ্ঞেস করে কোথায় যাচ্ছি। সবার অভিব্যক্তিতে সন্দেহের আভাস- তোমরা একসাথে চলে যাচ্ছ!
– আসলে এটা একদম কোইন্সিডেন্টলী ঘটেছে
– তোমরা কি একই কোম্পানিতে জয়েন করছো?
– না।

স্যামের সাথে অফিসের বাইরে দেখা হতেই সে দুঃখ করে বলতে থাকে- জাভেদ, কেউ বিশ্বাস করছে না, কেউ না.. সবাই ভাবছে আমরা চুক্তি করে একসাথে প্ল্যান মাফিক ভাগছি। তাতে অবশ্য কিছুই যায়-আসে না..
ওদিকে সাথে সাথেই নতুন সার্কুলার; দুজন নতুন কর্মী নিয়োগের। কোনকিছুই কারোর জন্য থেমে থাকে না।

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles