৯ মাসের মাথায় ভেঙে গেল সাত দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ। ড. রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুরের গণঅধিকার পরিষদ এ জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আজ শনিবার সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর আমাদের সময়কে বলেন, ‘গণঅধিকার পরিষদ শুধুমাত্র গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে কর্মসূচি করবে না। এখন থেকে দলীয় কর্মসূচি ছাড়াও আন্দোলনরত অন্যান্য দল বা জোটের সঙ্গেও কর্মসূচি করবে। বলতে পারেন গণঅধিকার পরিষদ এখন আর গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে নেই।’
গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু হানিফ বলেন, ‘সরকারবিরোধী আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে শুধু গণতন্ত্র মঞ্চের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে যুগপৎ আন্দোলন আরও বেগবান করতে গণঅধিকার পরিষদ কাজ করবে। তাছাড়া গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের বিরূপ আচরণে নেতাকর্মীরা অনেকটা হতাশ ছিল।’
আজ শনিবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘সভায় ভোটারবিহীন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের নামে রাষ্ট্রের অর্থ খরচ করে জনগণের সঙ্গে প্রহসনের নির্বাচন জনগণকে বর্জনের আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বেগবান করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, সে লক্ষ্যে শুধু গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে জোটবদ্ধ কর্মসূচিতে সীমাবদ্ধ না থেকে গণঅধিকার পরিষদের নিজস্ব উদ্যোগে চলমান যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সব দলের সঙ্গে রাজপথে সমন্বিত কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।’
সভায়, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব পাস করা হয়। জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কর্মময় জীবন তরুণ প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে আগামী ১৫ মে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কর্মময় জীবনের ওপর আলোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় সয়াবিন তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে সরকারের গণবিরোধী সিদ্ধান্তের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে আগামী ১২ মে সাড়ে ৩টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
গত বছরের ৮ আগস্ট ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সাত দলীয় জোটের গণতন্ত্র মঞ্চের আত্মপ্রকাশ হয়। জোটভুক্ত দলগুলো হলো- জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল ( জেএসডি), নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, ভাষানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।
গণঅধিকার পরিষদ বেরিয়ে যাওয়ায় এখন গণতন্ত্র মঞ্চে ছয়টি দল থাকল। এখন থেকে গণঅধিকার পরিষদ এককভাবে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করবে, সেই সঙ্গে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে এককভাবে অংশগ্রহণ করবে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘গণঅধিকার পরিষদের এমন সিদ্ধান্তের কথা আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো পাইনি। তবে গণঅধিকার পরিষদ নেতাদের বেশ কিছু অরাজনৈতিক বক্তব্য, রাজনৈতিক তৎপরতা এবং মঞ্চের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজের ব্যাপারে শরিক দলগুলোর মধ্যে অস্বস্তি ছিল, আপত্তি আছে। এ নিয়ে বেশ কিছু সমালোচনা আছে। এসব আমাদের মধ্যে বিবব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। আগামীকাল রোববার গণতন্ত্র মঞ্চের বৈঠক রয়েছে। ওই বৈঠকে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের অসাংগঠনিক আচরণসহ আরও বিষয় মিলে আলোচনা হওয়ার কথা।