13.7 C
Toronto
শনিবার, মার্চ ১৫, ২০২৫

দিনমজুর থেকে যেভাবে খামার মালিক হলেন গাইবান্ধার রুহুল

দিনমজুর থেকে যেভাবে খামার মালিক হলেন গাইবান্ধার রুহুল

নিভৃত পল্লীর বাসিন্দা রুহুল আমিন। বয়স ৬০ বছর। এক সময় দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন ভেড়ার খামারে। এরপর বন্ধ হয় খামারটি। কর্মহীন হয়ে সংসারে শুরু হয় টানাপড়েন। এ থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্নে নিজেই শুরু করেন ভেড়া পালন। গড়ে তুলেছেন মিনি খামার।

- Advertisement -

এখন এই খামার থেকেই ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। তার বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হাতিয়া গ্রামে। স্থানীয়রা জানায়, রুহুল আমিন একজন দরিদ্র দিনমজুর হিসেবে পরিচিত। জীবিকার তাগিদে রংপুরে পাড়ি জমায়।

সেখানে মালিকানাধীন একটি ভেড়ার খামারে কর্মচারী হিসেবে কাজ বেছে নেয়। ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি সেখানেই কাজ করেন। কর্মকালীন সময়ে পশুপালনের বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে একজন দক্ষ পশুপালনকারী খামারি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। রুহুল আমিনের কাজকর্মে একনিষ্ঠতা ও দক্ষতার প্রতি মুগ্ধ হয় বিডিআর ক্যাম্পের কর্নেল তানভির রহমান।

তিনি রুহুল আমিনকে তার পশুপালন খামারে তত্তাবধায়ক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে পঞ্চগড়ে পাঠান। পঞ্চগড়ের ভজনপুর চৌরাস্তায় গাড়ল (উন্নত জাতের ভেরা) পালনের খামারে রুহুল আমিনের জীবন শুরু হয় একজন দক্ষ গাড়ল পালনকারী হিসেবে। এরই মধ্যে কর্নেল তানভির রহমান ২০১৭ সালে আমেরিকায় পাড়ি জমান। ফলে সেই খামারটি বন্ধ হয়ে রুহুল আমিনের ভাগ্য বিপর্যয় শুরু হয়। এ বিষয়ে রুহুল আমিন আমাদের বলেন, এরপর বাড়ি ফিরে গাড়ল (ভেরা) পালনের খামার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন তিনি। এই স্বপ্ন বাস্তব রূপ দিতে সামান্য পুঁজি সংগ্রহ করে মেহেরপুরের মুজিবনগর থেকে প্রথমে ৫টি গাড়ল ৩০ হাজার টাকায় কিনে এনে পালন করতে থাকেন।

৫টি গাড়ল ৬৫ হাজার টাকায় বিক্রি করার পর এই টাকা দিয়ে খামারে ৪০টি গাড়ল উৎপন্ন হয়। এ থেকে তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। দৃঢ় মনোবল নিয়ে অব্যাহত রেখেছেন এ ব্যবসা। দারিদ্র্যতাকে বিদায় জানিয়ে হয়েছেন লাখোপতি। বর্তমানে প্রতিটি গাড়ল ৩৫-৩৮ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন। গাড়লের খামার তার ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই ব্যবসার মুনাফা দিয়ে ৩ বিঘা আবাদি জমি বন্ধক নিয়ে আবাদ করছেন। সেখান থেকেও প্রতি মৌসুমে আয় করছেন। মাত্র ৩০ হাজার টাকায় ব্যবসা শুরু করে এখন আমি লাখোপতি।

বর্তমানে আমার খামারে প্রায় ৫ লাখ টাকার গাড়ল রয়েছে। স্থানীয় ব্যক্তি মিজানুর রহমান বলেন, এক সময় রুহুল আমিনের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরাতো। এখন ভেড়া পালন করে লাখ লাখ টাকার মালিক হয়েছে। তার এমন ব্যবসায় সাধুবাদ জানাই। উদ্যোক্তা রুহুল আমিন জানান, সরকারি-বেসরকারি সহায়তা পেলে একটি বড় পরিসরে খামার প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন।

যেখানে গাড়ল প্রতিপালন, পরিচর্যা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের নতুন পথ উন্মুক্ত করবেন। বেকার যুবকরা এই ব্যবসায় নিয়োজিত থেকে বেকারত্বের অবসান ঘটাতে পারবে বলে তার বিশ্বাস। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ফজলুল করিম জানান, কেউ পরিকল্পিভাবে গাড়ল পালন করলে অনায়াসে লাভবান হবেন। রুহুল আমিনের খামারের খোঁজ নিয়ে তাকে সহযোগিতা করা হবে।

সূত্র : মানবজমিন

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles