
( এক)
আব্দুর রশিদের একটা ভাঙ্গা সুটকেস ছিল। সেই সুটকেস শিকল দিয়ে বেঁধে রাখত সে।
চারিদিকে গুজব ছড়িয়ে পড়ল সুটকেসের ভেতর অমূল্য সম্পদ আছে।
একদিন গুজবে কান দেয় ডাকাত সর্দার। সে জানত না যে আব্দুর রশিদ পায়ের সাথে শিকল বেঁধে ঘুমায়। কী আর করা, পা কেটে সুটকেস নিয়ে পালায় ডাকাত দল।
কিছুক্ষণ পর ডাকাত সর্দার ফিরে এসে আব্দুর রশিদের গলা কেটে ফেলে।
হতাশ হবারই কথা, আব্দুর রশিদের সুটকেসে ছিল একটা ভাঙ্গা আয়না, কয়েকটা আলতার শিশি। চুল জড়ানো চিরুনি।
(দুই)
শাহজাহান নামে এক জমিদারের অনেকগুলো স্ত্রী ছিল। তাদেরই একজনের নাম আরজু বানু। প্রতি জ্যোৎস্না রাতে জমিদার তার প্রিয় স্ত্রী আরজু বানুকে নিয়ে নৌকা ভ্রমণে যেত।
অনেক চেষ্টা করা হয়েছিল যেন আরজু বানু কোন সন্তান ধারণ না করে। আকাশে জ্যোৎস্না থাকবে আর আরজু বানুর সাথে নৌভ্রমণ হবে না তা কি হয়?
এদিকে মা হওয়া আরজু বানুর কপালে ছিল। প্রথম সন্তান জন্ম দিতে গিয়েই রক্তক্ষরণে সে মারা গেল।
আরজু বানুর কবরের উপর এখনো অসংখ্য পাথর। লোকজন আজও দেখতে যায় তার পাথর খোদাই কবর। জমিদারের অন্য স্ত্রীদের কবর কোথায় কেউ তার খোঁজ রাখে না। এমনকি তার নিজের কবরটাও না।
মানুষ কী কবর খোঁজে নাকি প্রেম।
(তিন)
রাজনৈতিক দর্শনে আমরা ছিলাম পূর্ব-পশ্চিম। আমি মার্কিন পন্থী তুমি সোভিয়েত। যদিও ভেতর ভেতর আমরা দুজনই ছিলাম বড্ড সুশীল। তবুও অমিল ছিল খাবার তালিকায় এবং ঘুম ভঙ্গিতে। আমি হাসতাম ভাদ্র মাসে, বছর ঘুরে একবার। তুমি ডালে ডালে।
আহা সে কী হাসি!
হাসলে তুমি আকাশ হও
কাঁদলে মেঘ।
ফুল নদী এবং নীল রং তুমি ভালবাসতে।
আমাকেও।
নীল রঙের ফুল এনে দিতে আমাকে। নদীর মতো সাঁতার কাটতে আমার বুকে।
একদিন মেঘ গড়িয়ে হারিয়ে গেলে। আমরা অনেক সুশীল ছিলাম। তুমি একটু অধিক। বাবা মায়ের অবাধ্য হতে পারলে না তাই। যে মার্কিন দেশের বিরোধিতা করতে আজীবন, চলে গেলে সেই দেশে। আমি পড়ে রইলাম চাটগাঁও, বেসরকারি কলেজের একজন শিক্ষক হয়ে।
টীকা:
(১) আব্দুর রশিদ পায়ে শিকল বেঁধে ঘুমাত। তার পায়ে বাঁধা থাকতো অমূল্য সম্পদ। ডাকাত দল সেসবের মূল্য বুঝবে না কোনদিন।
(২) জ্যোৎস্না রাতে নৌভ্রমণে গিয়ে যত নুড়ি কুঁড়িয়ে এনেছিল আরজু বানু সেগুলো এখন তার বুক চেপে রেখেছে।
(৩) আমি হাসতাম ভাদ্র মাসে। আমার ভাদ্র মাসে চর জেগেছে। এখন বছর হয় এগারো মাসে।